সে মাথা নাড়ল। আমি তোমার কথা শুনেছি। তোমার মা রশিদ গোত্রের ছিল না?’ তারপর মাহমুদ এক পাশে একটু সরে দাঁড়াল, যাতে সবার মুখ পরিষ্কার দেখতে পারে। কেইন বলছে তুমি তার মেয়েমানুষ। স্কিরোজ তোমাকে তার কাছ থেকে অপহরণ করেছে, এটা সত্যি?
মেরি মাথা কাত করে সায় দিল। বর্ষীয়ান শেখ বলে চলল-তোমরা কি খ্রিষ্টানমতে বিবাহিত?
‘না, আমরা বিবাহিত নই,’ সে বলল।
‘তুমি কি তার সাথে মিশেছো?’ মাহমুদ দ্রভাবে বলল।
এক মুহূর্ত নিরবতা নেমে এল আর কেইন দম আটকে প্রার্থনা করতে লাগল, সে যেন সঠিক উত্তর দেয়। মেরি ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, আমি এই লোকের সাথে মিশেছি।’
স্কিরোজ রাগে ফেটে পড়ল। এটা মিথ্যা। এটা কেইনের সাজানো গল্প। আমি তোমাকে বলেছি সে আমার শত্রু।
মাহমুদ এক হাতু উঁচু করে তাকে থামাল। বিনা কারণে কোন্ মেয়ে নিজেকে লজ্জায় ফেলবে? যদি সে তার সাথে মেলা মেশা করে থাকে তাহলে সে তার। সে আর কারও হতে পারে না। তার শরীরে আমাদের গোত্রের মানুষের রক্ত বইছে আর এটাই আমাদের আইন।
প্রচণ্ড রাগে স্কিারোজের চেহারা উত্তেজনায় ফেটে পড়ল। সে অতিকষ্টে নিজেকে সামলে নিল। শক্ত হয়ে একবার মাথা ঝুঁকালো তারপর এক ঝটকায় তাবুর পর্দা সরিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল। মুলার তাকে অনুসরণ করল।
জর্ডন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কেইন মাহমুদের দিকে ফিরে বলল, এবার কি হবে?
বুড়ো শেখ মৃদু হাসল। আমার মনে হয় এটাই ভাল হবে, মেয়েটি এখন তাঁবুতে ফিরে যাক। আমার বন্ধুরা চলে যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই পাহারায় থাকুক।’
‘আমি ওর সাথে একটু কথা বলতে পারি?’ কেইন বলল।
মাহমুদ মাথা নাড়ল। বেশিক্ষণ নয় কিন্তু।
সে জর্ডনের কাধ স্পর্শ করল, তারপর দুজনে বাইরে গেল।
মেরি আবার কেইনের বাহুবন্ধনে আসতেই সে তাকে কিছুক্ষণ চেপে ধরে থাকল। তারপর ওরা বসল। কেইন হঠাৎ খুব ক্লান্তিবোধ করল। তোমার কাছে সিগারেট আছে?’ সে বলল।
মেরি তার শার্টের পকেট থেকে একটা দোমড়ানো প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট কেইনকে দিল। সে একটা তৃপ্তির টান দিয়ে বলল, “আহ! বেশ ভাল লাগছে।’
মেরি এগিয়ে হাত দিয়ে তার চুল সমান করল। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব খারাপ সময় কাটিয়েছ।
‘এক রকম তাই বলতে পার।’
‘খুলে বল।
সে তাকে সংক্ষেপে ঘটনার একটা বিবরণ দিল। তার বলা শেষ হলে মেরি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কানিংহামরা ঠিক আছে জেনে ভাল লাগছে। এখন তুমি স্কিরোজ আর মুলারের বিষয়ে কি করবে?
‘আমি কী করব বল? আমার ধারণা যদি ঠিক হয় তবে ওরা চলে যাবার পর মাহমুদ আমাদের এখানে আটকে রাখবে। ওরা যেহেতু এদেরকে বন্দুক সাপ্লাই করে এসেছে সেক্ষেত্রে এটুকু অন্তত মাহমুদ করবে। কিন্তু একটা ব্যাপার আমি বুঝে উঠতে পারছি না স্কিরোজ এত তাড়াহুড়া করে কেন উপত্যকা ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে। কী হয়েছে তার?
‘আমিও ঠিক জানিনা, সে বলল। সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পর সে অনেকক্ষণ রেডিওতে কথা বলছিল। খুব রেগে ছিল তখন। সেলিমের সাথে অনেকক্ষণ তর্ক করল। তারপর সে জানাল আমরা ভোরেই রওয়ানা হবো।
‘সে সম্ভবত বার্লিনে তার উপরওয়ালাকে প্লেনটা ধ্বংস হওয়ার খবর জানাচ্ছিল, কেইন বলল। ওরা মনে হয় ভীত হয়ে পড়েছিল। কারণ যদি সে ধরা পড়ে আর তার প্রকৃত জাতীয়তা জানাজানি হয়ে যায় তবে মারাত্মক বিপদ হতে পারতো। হয়তো সেজন্যই ওরা তাকে বলেছে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বের হয়ে যেতে।’
‘ওর সাথে আর দেখা না হলেই ভাল, মেরি বলল।
কেইন ওর দুহাত বাড়াতেই মেরি তার দুহাতের মাঝে কেইনের হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
‘এসব কিছু থেকে একটা ভাল জিনিস প্রকাশ পেয়েছে, আমি জানতে পারলাম কখন আমি জয়ী হয়েছি।’
সে আবার তার দুবাহুর মাঝে আসতেই ওরা দ্রুত একবার চুম্বন করল। এরপরপরই তাবুর পর্দা সরিয়ে মাহমুদ ঢুকল। সে একপাশে সরে দাঁড়াতেই মেরি তাকে পাশ কাটিয়ে বাইরে চলে গেল।
বৃদ্ধ বেদুঈন মৃদু হাসল। তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। এখন বরং একটা লম্বা ঘুম দাও। আমার লোক তোমাকে তোমার লোকজনের কাছে নিয়ে যাবে। পরে আবার কথা হবে।’
কেইন কড়া রোদে বের হতেই একজন লোক তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। সবার চোখ তার দিকে ফিরছে আর বাচ্চারা তার সাথে সাথে দৌড়ে তার তাঁবু পর্যন্ত গেল। ভেতরে ঢুকে সে দেখল জর্ডন তাঁবুর মাঝখানে গালিচার উপর আসন পেতে বসে একটা ক্যান থেকে খাবার খাচ্ছে।
‘তোমার চেহারা জঘন্য দেখাচ্ছে, ভূবিজ্ঞানী উৎফুল্ল স্বরে বলল।
কেইন কোন রকমে হাসার চেষ্টা করল, তারপর তাবুর এক কোণে শোয়ার জন্য রাখা একটা খড়ের গাদির উপর শুয়ে পড়ল।
জর্ডন কথা বলেই চলল, কিন্তু তার কোন কথার অর্থ সে বুঝতে পারছিল না। একটু পড়েই সে ঘুমিয়ে পড়ল।
.
ধীরে ধীরে ঘুম থেকে জেগে উঠে সে অন্ধকারে চেয়ে রইল। রাত হয়েছে, তার মাথার উপরে একটা খুঁটির উপর একটা তেলের বাতি ঝুলছে। এর আলোয় তাবুর মাঝখান থেকে ছায়াগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
জর্ডন কাছেই বসে তার রিভলবার পরিষ্কার করছে। কেইনকে নড়াচড়া করতে দেখে তার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। এখন কেমন লাগছে?
‘মনে হচ্ছে যেন এই পৃথিবীর বাইরে কোথাও রয়েছি,’ কোন রকমে বসে কেইন বলল।
জর্ডন ওর হাতে একটা বোল দিল। নাও, এটা খেয়ে নাও।