‘রাইখ চ্যান্সেলারি, ফুয়েরার সোয়ীট, এডমিলার বললেন। এক মুহূর্ত পর বললেন, ‘সুপ্রভাত, ক্যানারিস বলছি। আমাকে অবশ্যই ফুয়েরারের সাথে দেখা করতে হবে। হ্যাঁ, অত্যন্ত জরুরি। আরো কিছুক্ষণ ধরে রাখার পর তিনি বললেন, ‘চমৎকার। এগারোটা।
রিটার ফিরে বলল, ‘হের এডমিরাল?
‘তোমার এই প্ল্যানটা চমৎকার, হান্স। তুমি নিজে বরং আমার সাথে চল এবং আসল মানুষকে বিষয়টা বল।
.
রিটার কখনও প্রধান অভ্যর্থনা কেন্দ্রের ওপাশে পা রাখেনি, কাজেই ভেতরে গিয়ে যা দেখল তাতে বিস্ময়বিমুঢ় হয়ে গেল। কেবল বিশাল দরজা আর ব্রোঞ্জের ঈগলগুলোই নয়, সেই সাথে চারশো আশি ফুট লম্বা মার্বেল গ্যালারি। এটা ফুয়েরারের গর্বের একটা বস্তু কেননা এটা ভার্সেইলেসের হল মিররের দ্বিগুণ।
ওদেরকে যখন হিটলারের বিশাল স্টাডিতে উপস্থিত করা হল, তখন তারা দেখল হিটলার তার ডেস্কে বসে রয়েছেন। তিনি মুখ তুলে বললেন, “আশা করি জরুরি কোন বিষয়।
‘আমার তাই মনে হয়, সম্মানীয় ফুয়েরার, ক্যানারিস বলল। “ইনি আমার সহকারী, ক্যাপ্টেন রিটার।
হিটলার তার পুড়ে যাওয়া মুখ, হাতের লাঠি, বুকের মেডেল দেখে উঠে দাঁড়িয়ে রিটারের হাত ধরলেন। একজন সৈনিক হিসেবে আমি তোমাকে স্যালুট করছি।’
তিনি ফিরে গিয়ে তার চেয়ারে বসতেই রিটার অভিভূত হয়ে বলল, “আমি আর কি বলবো, মহামান্য ফুয়েরার।
ক্যানারিস মাঝখান থেকে বললেন, ‘সুয়েজ খালের বিষয়টা। ক্যাপ্টেন রিটার একটা অসামান্য পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনাটা অসাধারণ।’ তিনি হিটলারের ডেস্কের উপর ফাইলটা রাখলেন। অপারেশন শেবা।’
হিটলার হেলান দিয়ে বসে দুহাত বুকে ভাঁজ করে বললেন, এটা আমি পরে পড়বো। তুমি বিষয়টি খুলে বলো, ক্যাপ্টেন রিটার।
রিটার শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “মহামান্য ফুয়েরার। এই বিষয়টি শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের একজন অধ্যাপক মুলারের থেকে, যিনি দক্ষিণ আরবে এক অভূতপূর্ব মন্দির আবিষ্কার করেন, সেখান থেকে।
.
‘চমৎকার, হিটলার বললেন। তার চোখ উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করছিল, কেননা প্রত্নতত্ত্বের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। যে কোন মূল্যে আমি ওই মন্দিরটি দেখতে রাজি। তিনি সোজা হয়ে বসলেন। তাহলে তুমি কাজ শুরু করে দাও ক্যাপ্টেন। ঐ জায়গায় ঘাঁটি করে ফেলো। কিন্তু কীভাবে তুমি কাজটা করবে?
‘এই পরিকল্পনার মূল বিষয়টি হচ্ছে এর সহজ প্রক্রিয়াটি। একটি মাত্র বোমারু বিমান দিয়ে সুয়েজ খাল আক্রমণের চেষ্টা করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কোনভাবেই কেউ সঠিক লক্ষ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবে না।
হিটলার বললেন, তাহলে?
‘ক্যাটালিনা নামে দুই ইঞ্জিনের একটি উভচর আমেরিকান উড়োজাহাজ আছে। এটি চাকা ফেলে মাটিতে যেমন ল্যান্ড করতে পারে, তেমনি পানিতেও পারে। এর ক্রইজিং সীমা অসাধারণ। দেড় হাজার পাউন্ড ওজনের বোমা নিয়ে এটি ১৬০০ মাইলের বেশি একনাগাড়ে অতিক্রম করতে পারে।
হিটলার বললেন, ‘চমৎকার, এই উড়োজাহাজটি কীভাবে কাজে লাগাবে?’
‘আমি যেরকমটি বলেছি, ব্যাপারটি অত্যন্ত সহজ, মহামান্য ফুয়েরার। এই উড়োজাহাজটি মরুভূমিতে আমাদের ঘাঁটিতে ল্যান্ড করে বোমা না নিয়ে মাইন নেবে। তারপর উড়ে যাবে মিশরে আর ল্যান্ড করবে সুয়েজ খালে। সেখানে উড়োজাহাজের ক্রুরা মাইনগুলো অফলোড করবে। সেগুলো সহজেই স্রোতে ভাসতে থাকবে। আমার প্রস্তাব, কান্ট্রার কাছেই একটা ভাল স্পট হবে। ক্রুরা অবশ্যই ক্যাটালিনাটি ডুবিয়ে দেবে। আর উড়োজাহাজের ভেতরটা আমাদের অত্যাধুনিক বিস্ফোরক-হেলিকন দিয়ে ভর্তি করবে। এটাও খালের প্রচুর ক্ষতিসাধন করতে পারবে। এরপর নিশ্চয়ই বিশদ ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই, লেক টিমসাহ্ থেকে উত্তরমুখী চলাচলকারী
জাহাজগুলোর খালের পানির নিচে ভেসে থাকা মাইনগুলোর সাথে সংঘর্ষ হবে। আমরা ধরে নিতে পারি কয়েকটা জাহাজ ডুবে গিয়ে পুরো খালের গতিপথ বন্ধ হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ সবাই নির্বাক বসে রইল আর হিটলার উপরের দিকে চেয়ে ভাবতে লাগলেন। এরপর তিনি এক হাতের তালুতে জোরে একটা ঘুষি মেরে বললেন। চমৎকার! তুমি যেমন বলেছো, খুবই সরল পরিকল্পনা। তারপর একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন, কিন্তু এই ক্যাটালিনা প্লেন। এটা কি যোগাড় করতে পারবে?
‘মহামান্য, ফুয়েরার। লিসবনে এই এরোপ্লেন একটা বিক্রি হবে। আমি মনে করি এটি আমরা কিনে নিয়ে দাহরানে আমাদের নিজস্ব একটা এয়ারলাইন শুরু করতে পারি। অবশ্য কোম্পানিটা স্বভাবতই স্পেনিশ মালিকানাধীন। আমি নিশ্চিত উপকুলে আমরা ভাল ব্যবসা পাবো।’
হিটলার উঠে দাঁড়িয়ে ডেস্ক ঘুরে এসে তার কাঁধে চাপড় দিয়ে বললেন। “ঠিক বলেছো। আমি এই ছেলেকে পছন্দ করি, হের এডমিরাল। অবিলম্বে এর পরিকল্পনা কাজে লাগান। আপনাকে আমি পুর্ণ ক্ষমতা দিলাম।
‘মহামান্য ফুয়েরার। ক্যানারিস দরজার দিকে এগোলেন, তারপর পেছন ফিরে একটা নাৎসী স্যালুট দিতে চেষ্টা করলেন। চল যাই. ফিসফিস করে রিটারকে বললেন, তারপর দরজা খুলে ফিরে চললেন।
মার্বেল গ্যালারি দিয়ে যেতে যেতে ক্যানারিস বললেন, তুমি সহজভাবে নিজের কথা বলেছো। ক্যাটালিনা কেনার জন্য আমি অবশ্যই প্রয়োজনীয় অর্থের অনুমোদন দিচ্ছি, কিন্তু উপযুক্ত ক্রু পেতে সমস্যা হতে পারে। অবশ্য একটা স্পেনিশ এয়ারলাইনের এরোপ্লেন চালাতে কোন জার্মানের আপত্তি থাকার কথা নয়।’