ক্যানারিস বললেন, ঠিক আছে, হান্স। রিটার কামরার বাইরে চলে গেল। ক্যানারিস একটা সিগারেট ধরালেন, বেশ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, কি বলেন, প্রফেসর। আমাকে এ সম্পর্কে সব কিছু বলুন।
মুলার একজন স্কুলছাত্রের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। আমার সৌভাগ্য হের এডমিরাল। আমি বেশ কিছুকাল যাবত শাবওয়া এলাকায় কাজ করছিলাম। এক রাতে এক বুড়ো বেদুঈন পিপাসায় আর জ্বরে মৃতপ্রায় হয়ে আমার ক্যাম্পে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আমি তার সেবা শুশ্রূষা করে জীবন বাঁচালাম।
“আচ্ছা!
‘এরা অদ্ভুত মানুষ। কোনভাবেই ঋণগ্রস্ত থাকতে রাজি নয়, কাজেই সে আমাকে শেবার মন্দিরের হদিশ বাতলে দিয়ে তার ঋণ শোধ করল।
‘ভাল প্রতিদান বটে। তারপর বলুন এর সম্পর্কে।
‘আমি প্রথমে এটাকে সেই বিশাল বিরান ভূমির মাঝে মাটির উপরে বেরিয়ে আসা লালচে পাথরের একটা শিলাস্তরের অংশ হিসেবে দেখলাম। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন হের এডমিরাল! সেখানে অনেক বালিয়াড়ি আছে যেগুলোর উচ্চতা অনেক সময় কয়েক শো ফুট হয়ে থাকে।
‘আশ্চর্য!
‘আরো সামনে এগিয়ে আমরা একটা গিরিখাতের মধ্যে প্রবেশ করলাম। সাথে বেদুঈন প্রহরী ছিল। আমরা উটে চড়ে সেখানে গিয়েছিলাম। প্রথমে দেখলাম শক্ত মাটির একটা সমতল ভূমি, তারপর একটা গিরিখাত, দুপাশে পিলারসহ একটা চওড়া রাস্তা।
‘আর মন্দির! সে সম্পর্কে বলুন।
মুলার প্রায় আধ-ঘণ্টা ধরে বর্ণনা দিল আর ক্যানারিস মনোযোগ সহকারে সব শুনলেন। শেষে এডমিরাল মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ক্যাপ্টেন রিটার আমাকে বলেছে আপনি আমাদের এবহোয়েরকে একটা চমৎকার রিপোর্ট দিয়েছেন।’
‘আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন, হের এডমিরাল। আমি পার্টির একজন সদস্য।
‘অবশ্যই, ক্যানারিস শুষ্ক মন্তব্য করলেন।
‘তাহলে আপনি নিশ্চয়ই আপনার প্রয়োজন মাফিক তহবিল সংগ্রহ করে সে জায়গায় ফিরে গিয়ে আপনাকে যা করতে বলা হবে তা করবেন। এটি এমন একটি প্রজেক্ট যাতে ফুয়েরার নিজে বিশেষভাবে জড়িত আছেন।’
মুলার উঠে দাঁড়াল, ‘আমি আপনার আদেশের অপেক্ষায় আছি, হের এডমিরাল।
‘ঠিক আছে, ক্যানারিস তার ডেস্কে একটা বোম টিপলেন। আমরা আপনাকে যথাসময়ে সব জানাবো।
রিটার প্রবেশ করল–’হের এডমিরাল।
‘আপনি বাইরে অপেক্ষা করুন প্রফেসার। মুলার বাইরে যাওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলেন, তারপর বললেন, “তাকে মোটামুটি নিরীহ মনে হচ্ছে, তারপরও আমার সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে, হান্স। তুমি যদি এই জায়গাকে, তোমার বেস হিসেবে ব্যবহার করো, সেক্ষেত্রে তোমাকে সুয়েজ খাল পৌঁছতে বারোশো মাইল উড়ে যেতে হবে। আর একটা মাত্র বোমারু বিমান দিয়ে কতটুকু ক্ষতি করতে পারবে? এছাড়া এতদুর উড়ে যাওয়ার মতো কোন উড়োজাহাজ কি আমাদের আছে?
‘সে ব্যাপারে আমি ইতোমধ্যে ভেবে রেখেছি, রিটার বলল। তবে আপনাকে জানাবার আগে আমি আরেকবার পরীক্ষা করে দেখবো।
কানারিস একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন, এটা কি খুব সিরিয়াস কোন ব্যাপার, হান্স?
‘আমি তাই বিশ্বাস করি, হের এডমিরাল।
‘তা হলেই ভাল, ক্যানারিস মাথা নেড়ে সায় দিলেন। আমার নিশ্চয়ই তোমাকে বলার দরকার নেই, মুলারকে চেপে ধরে এই দাহরান জায়গাটি সম্পর্কে সব কিছু জেনে নেবে–কীভাবে স্পেনিশরা এটা পরিচালনা করছে ইত্যাদি। অবশ্য ওরা আমাদের পক্ষেই আছে। এই বিষয়টি কাজে আসতে পারে।’
‘আমি এটা দেখবো, স্যার।’
যত শীঘ্র পারো, হান্স। একটা প্রকল্প নাও। তিন দিন সময় দিলাম।
রিটার ঘুরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে গেল আর ক্যানারিস তার কাগজপত্র নিয়ে পড়লেন।
.
০২.
আবার অফিসে তার ছোট্ট সামরিক বেডে ঘুমিয়ে রাত কাটাবার পর বুধবার সকালে যখন ক্যানারিস বাথরুমে দাড়ি কামাচ্ছিলেন, তখন ঠক ঠক শব্দ হল।
‘ভেতরে আসুন, তিনি ডেকে বললেন।
‘আমি, হের এডমিরাল, রিটার উত্তর দিল। আর আপনার প্রাতরাশ।’
ক্যানারিস মুখ মুছে কফির সুঘ্রাণেভরা টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলেন একজন আর্দালি তার ডেস্কে একটা ট্রেতে প্রাতরাশ সাজিয়ে রাখছে আর রিটার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
আর্দালিকে ‘ডিসমিস’ বলে বিদায় করে ক্যানারিস কফির কাপ তুলে নিয়ে রিটারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বললেন, আমার সাথে যোগ দাও, হান্স।
‘আমি ব্রেকফাস্ট সেরে এসেছি, হের এডমিরাল।
তার মানে তুমি অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। বেশ দায়িত্ব সচেতন বটে।
‘ঠিক তা নয়, হের এডমিরাল। আসলে আমার ঘুমাতে কষ্ট হয়।’
ক্যানারিস সাথে সাথে সমবেদনা জানিয়ে বললেন, ‘মাই ডিয়ার হান্স। আমি সত্যিই নির্বোধ। আসলে অনেক সময় আমি ভুলে যাই তুমি কত কষ্ট করে জীবন কাটাও
‘যুদ্ধের অভিশাপ, হের এডমিরাল। সে টেবিলে একটা ফাইল রাখল।
এডমিরাল টোস্টে মাখন লাগাতে লাগাতে মুখ তুলে বললেন, কী এটা?”
‘অপারেশন শেবা, হের এডমিরাল।
‘তার মানে তুমি একটা সমাধান খুঁজে বের করেছো?
‘আমার তাই বিশ্বাস।’
‘তোমার কি মনে হয় এটা বাস্তবায়ন করা যাবে?’
‘শুধু করা নয় হের এডমিরাল। আমি মনে করি এটা অবশ্যই করা উচিত।’
‘সত্যি। ক্যানারিস অন্য কাপটাতে কফি ঢাললেন। তাহলে আমি বলবো। তুমি বরং একটা সিগারেট ধরাও আর এই কাপটা শেষ করো। ততক্ষণে আমি দেখি তুমি কি এনেছে।
রিটার তার কথা মতো আদেশ পালন করে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াল। তিন এপ্রিল। আর কিছুদিন পর ঈস্টার অথচ নভেম্বরের একটি খারাপ দিনের মতো বৃষ্টি হচ্ছে। তার পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছিল, প্রয়োজন হলে যদি তাকে মরফিন পিল খেতে হয় তাহলে মুশকিল হবে। সে কফিটা শেষ করে সিগারেট ধরাল। পেছনে শুনতে পেল ক্যানারিস টেলিফোন তুলে কথা বলছেন।