‘সোজা আমার অফিস, ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়ে মাঝখানের কাঁচের পার্টিশনটা বন্ধ করে দিলেন।
গাড়ি চলতে শুরু করতেই রিটার হাতের সিগারেট নিভিয়ে দিতে উদ্যত হল। কোন দরকার নেই। আমাকেও একটা দাও।
রিটার সিগারেট কেস খুলে একটা সিগারেট দিল এবং লাইটার জ্বেলে ধরিয়ে দিল। সব কিছু ঠিক আছে তো হের এডমিরাল? আমি দেখলাম ওরা সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে, আমার চিন্তা হচ্ছিল।
‘হান্স, ফুয়েরার ব্যক্তিগতভাবে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন পয়লা সেপ্টেম্বর পোলান্ডে অভিযান চালাবার।
‘হায় ঈশ্বর!’ রিটার বলল। কেইস হোয়াইট।’
‘ঠিক তাই, তিনি রাশিয়ানদের সাথে এক ধরনের বোঝাঁপড়া করে যাচ্ছেন। তারা একটা চুক্তিতে আসবে। তারা আমাদেরকে এ কাজ করতে দেবে পূর্ব পোলান্ডের একটা অংশের বিনিময়ে।
আর ব্রিটিশরা?
‘হু, ব্রিটিশরা যুদ্ধ ঘোষণা করবে আর আমি নিশ্চিত সেই সাথে ফরাসিরাও তাই করবে। তবে ফুয়েরার কোন এক কারণে বিশ্বাস করেন তারা পশ্চিম রণাঙ্গনে কোন কিছু করবে না এবং এ ব্যাপারে আমিও একমত। আমরা যখন পোলান্ড পুরোপুরি দখলে নেব ওরা চুপ করে বসে থাকবে। তার ধারণা একবার কাজটা শেষ হয়ে যাবার পর, আমরা সবাই আলোচনার টেবিলে বসবো এবং একটা স্থিতাবস্থায় চলে আসবো। তিনি আমাদের জানিয়েছেন ব্রিটেন আমাদের স্বভাবজাত শত্রু নয়।
‘আপনি এ বিষয়ে একমত, হের এডমিরাল?’
‘এ বিষয়ে তিনি অনেকটা সঠিক হান্স, তবে ব্রিটিশরা বড় একরোখা জাতি আর চ্যামবারলেন খুব একটা জনপ্রিয় নন। মিউনিখের ঘটনার পর থেকে তার নিজের দেশের লোকেরাই তাকে পছন্দ করে না।
তিনি সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে নিভিয়ে দিলেন। যদি উপরের দিকে কোন পরিবর্তন হয়, ধরো চার্চিল…’ তিনি কাঁধ ঝাঁকালেন। কে জানে কি হয়?
‘আর আমরা কি করব?
‘আমরা কেইস ইয়েলো কার্যকর করবো। ভাটির দেশগুলো আর ফ্রান্সে অভিযান চালিয়ে, ব্রিটিশরা যেসব সেনাদল চ্যানেল পার করে এনেছিল তাদেরকে সাগরের দিকে ঠেলে দেব।’
একটুখানি থেমে রিটার বলল, এটা কি করা সম্ভব হবে?’
‘আমার মনে হয় এটা সম্ভব হান্স, যতক্ষণ না আমেরিকানরা এদিকে হস্তক্ষেপ করে। ফুয়েরারের প্রেরণাদায়ক নেতৃত্বে আমরা রাইনল্যান্ড পুনর্দখল করতে পেরেছি, অস্ট্রিয়া আর চেকোস্লোভাকিয়া আয়ত্ব করেছি, এছাড়া টুকটাক আরো কিছু পেয়েছি। আমার কোন সন্দেহ নেই পোন্ড আমরা জয় করব।’
“কিন্তু তারপর কি হবে, হের এডমিরাল? ফরাসি আর ব্রিটিশরা?
‘হ্যাঁ, এবার মূল বিষয়ে আসা যাক, কেন সবাই চলে যাবার পর ফুয়েরার আমাকে আটকে রেখেছিলেন।
‘কোন বিশেষ প্রজেক্ট, হের এডমিরাল?
‘সেরকমই কিছু একটা, তুমি বলতে পারো। তিনি চাচ্ছেন পয়লা সেপ্টেম্বর আমরা সুয়েজ খাল উড়িয়ে দেই, ঠিক যেদিন পোলান্ড আক্রমণ করা হবে।’
রিটার সিগারেট কেসটা খুলতে খুলতে বলে উঠল, ‘হায় ঈশ্বর!
ক্যানারিস তার হাত থেকে কেসটা নিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন।
‘তিনি কর্ণেল রোমেলের কাছ থেকে এই আইডিয়াটা পেয়েছেন। সুদেনল্যান্ড দখল করাকালীন রোমেল আমাদের ফুয়েরারের এসকর্ট ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ছিলেন। উপযুক্ত কারণেই তিনি রোমেল সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। আর বলা যায় এই আইডিয়াতে এক ধরনের পাগলামো যুক্তি আছে। তার মানে আমি বলতে চাচ্ছি সুয়েজ খাল হচ্ছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে সরাসরি যোগাযোগের পথ। এই সংযোগ পথটি কেটে দিলেই ভারতবর্ষ, দূর প্রাচ্য এবং অস্ট্রেলিয়াগামি সব জাহাজকে আফ্রিকা এবং উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ঘুরে যেতে হবে। এর ফলে সামরিক প্রতিক্রিয়া কী হবে বুঝতেই পারছো।
কিন্তু হের এডমিরাল, কি উপায়ে আমরা সেই এলাকায় লোকজন আর যন্ত্রপাতি নিয়ে যাবো?
ক্যানারিস মাথা নেড়ে বললেন, না, হান্স, তুমি ব্যাপারটা বুঝতে ভুল করেছে। আমরা সেখানে সরাসরি সামরিক অভিযানের কথা বলছি না, আমরা বলছি স্যাবোটাজের কথা। ফুয়েরার চাচ্ছেন পোলান্ডে অভিযানের দিনে আমরা সুয়েজ খালটা উড়িয়ে দেই, পুরো পথটা অকার্যকর করে ফেলি। এমনভাবে পুরোপুরি বন্ধ করে দেই যেন আবার এটা চালু করতে এক বছরের বেশি সময় লাগে।
‘বাপরে! কি বিশাল আঘাত, পুরো পৃথিবী চমকে যাবে। রিটার বলল।
‘সঠিক করে বলতে গেলে ব্রিটিশদের অন্তরাত্মা কেঁপে যাবে আর তখন ওরা বুঝতে পারবে আমরা কি করতে পারি। অর্থাৎ এভাবেই আমাদের ফুয়েরার বিষয়টি বিশ্বাস করেন। ক্যানারিস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
‘অবশ্য, কীভাবে কাজটা আমরা করবো সেটা আরেক ব্যাপার। তবে আমাদেরকে কিছু একটা প্ল্যান দেখাতে হবে, অন্তত কাগজে কলমে। আর সেখানেই তোমার ভুমিকা, হান্স।
‘আচ্ছা, এবার বুঝতে পেরেছি হের এডমিরাল।
৭৪/৬ তিরপিজ উফারে এবহোয়ের অফিসের সামনে এসে লিমোজিনটা থামল। পেটি অফিসারটি দ্রুত ঘুরে এসে গাড়ির দরজা খুলে ধরতেই ক্যানারিস আর রিটার গাড়ি থেকে নামলেন। যুবক রিটার প্রু কুঁচকে কিছু ভাবছে মনে হলো।
ক্যানারিস বললেন, তুমি ঠিক আছে তো?”
‘আমি ঠিক আছি হের এডমিরাল। আমার মনের মধ্যে কিছু একটা ঘুরপাক খাচ্ছে, যা আমাদের উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হতে পারে।
‘সত্যি?’ ক্যনারিস একটু মৃদু হেসে সামনের সিঁড়ি বেয়ে উঠে দরজার কাছে একটু থামলেন–এটা একটা সুখবর বটে, তবে শুভস্য শীঘ্রম, মনে রেখো হান্স। তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন।