‘হের এডমিরাল! ফুয়েরার দুবার আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছেন।’
প্রিয় হফার, আধঘণ্টাও হয়নি, আমি তার সাথে দেখা করার আদেশ পেয়েছি। ইনি আমার সহকারি, ক্যাপ্টেন রিটার। দয়া করে আমার হয়ে এর দেখাশোনা করো।
‘অবশ্যই, হের এডমিরাল। তারপর হফার পাশে দাঁড়ানো একজন আর্দালিকে ইশারা করে বলল, ‘হের এডমিরালকে ফুয়েরারের রিসেপশন সোয়টে নিয়ে যাও।
আর্দালি দ্রুত পদক্ষেপে রওয়ানা দিল, ক্যানারিস তার পিছু পিছু চললেন। হফার ডেস্ক ঘুরে এসে রিটারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, স্পেন, তাই না?’
‘হ্যাঁ, রিটার নকল পায়ের উপর হাতের লাঠি দিয়ে মৃদু আঘাত করে বলল, “আমি এখনও উড়তে পারি, কিন্তু ওরা আমাকে অনুমতি দেবে না।
‘কি দুঃখজনক,’ হফার তাকে বসার আসনগুলোর দিকে এগিয়ে নিয়ে চলল। আপনি বিশাল আয়োজনটা মিস করবেন।’
রিটার সোফায় আরাম করে বসে সিগারেট কেসটা বের করতে করতে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি মনে করেন, এটা আসলেই হবে?
‘কেন, আপনার মনে হয় না? আচ্ছা আরেকটা কথা, এখানে ধুমপান সম্পূর্ণ নিষেধ, ফুয়েরারের সুস্পষ্ট নির্দেশ।’
‘ধুত্তুরি, রিটার বলে উঠল। অনবরত পায়ে ব্যাথার কারণে সিগারেট খেলে সে কিছুটা আরাম পায়।
হফার সহানুভূতি দেখিয়ে বলল, “দুঃখিত। তবে আমাদের এখানে সবচেয়ে ভাল কফি আছে।
তারপর সে ঘুরে ডেস্কের কাছে গিয়ে টেলিফোন তুলল।
.
গার্ড হিটলারের স্টাডিরুমের বিশাল দরজা খুলে ধরতেই ক্যানারিস ভেতরে এত মানুষ দেখে অবাক হলেন। সেখানে উপস্থিত তিন বাহিনী প্রধান–লুফটওয়াফের গোয়েরিং, সেনাবাহিনীর খিষ্ট এবং ক্রেগম্যারিনের রায়েডার। আরো রয়েছে হিমলার, ভন রিবেট্রপ, জেনারেল জড, কেইটেল আর হালডার। পুরো কামরায় নিরবতা। ক্যানারিস ঢুকতেই সবাই মাথা ঘুরিয়ে দেখল।
‘এই যে এডমিরাল অনুগ্রহ করে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন, তাহলে আমরা এবার শুরু করতে পারি, হিটলার বললেন। আমি খুব সংক্ষেপে বলবো। আপনারা নিশ্চয়ই জেনেছেন ব্রিটিশরা আজ ঘোষণা করেছে, যুদ্ধ বাধলে তারা পোলিশদের নিঃশর্তভাবে সমর্থন করবে।
গোয়েরিং বললেন, কিন্তু ফুয়েরার, ফরাসিরাও কি তাই করবে?
হিটলার তাকে বললেন, “নিঃসন্দেহে করবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার। সময় তারা কিছুই করবে না।
এবার ও কে ডব্লিউর চিফ অফ স্টাফ হালডার জিজ্ঞেস করলেন, তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন পোলান্ডে অভিযান চালানো হবে। আর রাশিয়ানরা কী করবে?
‘তারা এখানে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। ধরে নিন তাদের সাথে একধরনের বুঝাঁপড়া চলছে আর এই বিষয়টি এ পর্যন্তই থাক। অতএব ভদ্রমহোদয়গণ, এ বিষয়ে আমার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত এটিই। আপনারা কেইস হোয়াইটের প্রস্তুতি নিন–পয়লা সেপ্টেম্বর পোলান্ডে অভিযান চালানো হবে। ‘যেন প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেয়ে সবার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হলো। কর্ণেল জেনারেল ব্ৰখিস্ট প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, কিন্তু ফুয়েরার, আমাদের হাতে তো মাত্র ছয়মাস সময় আছে।’
হিটলার বললেন, যথেষ্ট সময়। যদি কারো এ বিষয়ে দ্বিমত থাকে তাহলে এখনই বলুন। চারপাশে পিন পতন নিরবতা নেমে এল।
‘ঠিক আছে, তাহলে কাজে লেগে পড়া যাক, ভদ্রমহোদয়গণ। আপনারা সবাই এবার যেতে পারেন, কেবল হের এডমিরাল আপনি যাবেন না।
সবাই সারিবদ্ধ হয়ে চলে গেল। ক্যানারিস সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন আর হিটলার জানালা দিয়ে বাইরে বৃষ্টি পড়া দেখতে লাগলেন। তারপর তিনি ঘুরে তাকালেন। ব্রিটিশ আর ফরাসিরা যুদ্ধ ঘোষণা করবে ঠিকই কিন্তু কিছুই করবে না। আপনার কি মনে হয়?
‘একদম সঠিক, ক্যানারিস বললেন।
‘আমরা পোলান্ড আক্রমণ করে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি দখলে নিয়ে নেব। একবার এটা করা হলে ব্রিটিশ আর ফরাসিদের আর এগোবার কোন অর্থ আছে? এরপর তারা শান্তির জন্য আবেদন করবে।’
“আর যদি তা না করে?
হিটলার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন। তাহলে আমি কেইস ইয়েলো কাজে লাগাবো। আমরা বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ফ্রান্সে অভিযান চালিয়ে ব্রিটিশদেরকে সাগর পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যাবো। তখন তাদের বোধোদয় হবে। তবে তারা আমাদের স্বাভাবিক শত্রু নয়।’
‘আমি একমত, ক্যানারিস বললেন।
‘এ কথাটা বলার পর আমার মনে হলো, যত শীঘ্র সম্ভব আমার ইংরেজ বন্ধুদের দেখিয়ে দেওয়া দরকার যে, আমি যা বলি তা করি।
ক্যানারিস একটা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বললেন, আপনার মনে ঠিক কি চিন্তা আছে, ফুয়েরার?
দূরের দেয়ালে টাঙানো বিশাল বিশ্ব মানচিত্রের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বললেন, “এদিকে আসুন হের এডমিরাল! আমি আপনাকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি।’
.
এক ঘণ্টা পর ক্যানারিস চ্যান্সেলারির রিসেপশন হলে ফিরে দেখলেন হকার তার ডেস্কে বসে রয়েছে, পেছনে দুজন আর্দালিসহ। রিটারের কোন দেখা নেই। এস এস ক্যাপ্টেন তাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন করে বলল,
‘হের এডমিরাল!
‘আমার সহকারি?’ ক্যানারিস জিজ্ঞেস করলেন।
‘হপটম্যান রিটারের প্রচণ্ড ধুমপানের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি আপনার গাড়িতে ফিরে গেছেন।
‘ধন্যবাদ, ক্যানারিস বললেন। আমি নিজেই যেতে পারব।’
তিনি বিশাল দরজার বাইরে গিয়ে সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে গ্রেটকোটের বোতাম লাগাতে লাগলেন। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ড্রাইভার আসার আগেই লিমোজিনের পেছনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে রিটারের পাশে বসলেন।