আসলেই কী তাই?
বিষয়টা সম্পর্কে জানার জন্য সিগমার রিসার্চ এক্সপার্টদের শরণাপন্ন হয়েছিল গ্রে। তারপর এক যাজকের ডায়েরি থেকে জানা গেছে… তিনি তখন এখানে এতিমখানা চালাচ্ছিলেন। তার ডায়েরিতে একটা ছেলে শিশুর কথা লেখা আছে। মৃত মায়ের সাথে নদী থেকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। পাশের কবরস্থানে সেই নারীকে সমাধিত করা হলেও এখনও পর্যন্ত তার নাম জানা যায়নি।
তবে বাচ্চাটি সেই যাজকের অধীনে সুন্দরভাবে বড় হয়ে উঠেছিল। সেই বাচ্চাটি এখন নিজেও একজন যাজক। নাম : ফাদার পাইটোর। তার বয়স এখন ৬২ বছর। ফাদার পাইটোরের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্যই গ্রে এখানে হাজির হয়েছে।
চার্চে ঢোকার মুখে একজন এসে গ্রেকে স্বাগত জানাল। ভাজবিহীন চেহারা আর সাদা চুল দেখেই গ্রে চিনতে পারল ইনি কে। ফাদার পাইটোরের পরনে জিন্স, কালো শার্ট, পেশার চিহ্ন হিসেবে রোমান কলার আর বোমঅলা হালকা সোয়েটার রয়েছে।
পোলিশ ভাষার টান আছে তার ইংরেজি উচ্চারণে। আপনি নিশ্চয়ই নাথান সয়্যার?
না, গ্রে তো নাথান নয় তারপরও মাথা নাড়ল। হ্যাঁ। এভাবে একজন ফাদারের সাথে মিথ্যা কথা বলতে গ্রের অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে মিথ্যা বলতেই হবে।
গলা পরিষ্কার করল গ্রে। সাক্ষাৎকার নেয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অবশ্যই। প্লিজ, ভেতরে আসুন।
ভেতরে গেল ওরা দুজন। ফাদারের টেবিলে বাইবেলসহ বেশ কিছু জীর্ণ রহস্যপন্যাস দেখা গেল।
আপনি ফাদার ভেরিক সম্পর্কে জানতে এসেছেন, মন থেকে অমায়িক হাসি হেসে জানতে চাইলেন পাইটোর। উনি একজন মহান ব্যক্তি।
মাথা নাড়ল গ্রে। আপনার এতিমখানার জীবন সম্পর্কেও জানতে চাই।
যদিও গ্রে ইতোমধ্যে সবই জেনে ফেলেছে। র্যাচেলের চাচা ভিগোর, তিনি ভ্যাটিক্যান ইন্টেলিজেন্স-এর প্রধান, সিগমাকে যাবতীয় তথ্য দিয়েছেন।
সাথে মেডিক্যাল রেকর্ড দিতেও ভোলেননি।
অমায়িকভাবে জীবন কাটিয়ে আসছেন ফাদার ভেরিক। জীবনে কখনও ডাক্তার দেখাতে হয়নি তাকে। তবে কৈশোরে একবার টিলা থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল। চিকিৎসা নিয়েছিলেন তখন। এছাড়া আর কোনো অসুখে পড়েননি। শারীরিকভাবে একদম সুস্থ তিনি। ওয়ালেনবার্গদের জানোয়ারগুলোর মতো পাগলা, বিরাটাকার কিংবা গানথারের মতো বিশালদেহিও নন। স্রেফ স্বাস্থ্যবান।
সাক্ষাৎকার থেকে নতুন তেমন কিছু জানা গেল না।
গ্রে ঠিক করল, র্যাচেলের চাচার সাহায্য নিয়ে পাইটোর রক্ত ও ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে রাখবে। অবশ্য সেখান থেকেও নতুন কিছু জানা যাবে কিনা সন্দেহ আছে।
রুমের এক কোণে একটা টেবিলের ওপর অমীমাংসিত জিগস পাজল পড়ে থাকতে দেখল গ্রে। ওদিকে মাথা নেড়ে বলল, আপনি পাজল পছন্দ করেন?
ফাদার পাইটোর যেন একটু লজ্জা পেলেন। অপরাধীর মতো মুখ করে বললেন, এমনি শখ আরকি।
মাথা নেড়ে ফাদারের কাছ থেকে বিদেয় নিলো গ্রে। হিউগো হিরজফিল্ডের শখটা বেল-এর মাধ্যমে বাচ্চাটির ভেতরে প্রবেশ করেছে তাহলে? বিষয়টা কী শুধু জেনেটিক্স? নাকি তারচেয়েও বেশি কিছু? কোয়ান্টাম লেভেলের কিছু?
বাবা-ছেলের কথা ভাবতে গিয়ে নিজের বাবার কথা মনে পড়ে গেল গ্রের। ওর সাথে ওর বাবার সম্পর্ক কখনই ভাল ছিল না। তবে বর্তমানে একটু উন্নতির পথে। আচ্ছা, ও নিজে কেমন বাবা হবে? ও কি ওর বাবার মতোই হবে?
মনক বাবা হবে শুনে ওর নিজেরই আতঙ্কবোধ হয়েছিল।
ও কী মনকের চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে?
স্ত্রী, বন্ধন, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে সংসার করতে পারবে ও?
সাহস হবে?
এসব ভাবতে ভাবতে কফিহাউজের কাছে চলে এসেছে গ্রে। ভেতরে ঢুকে দেখল র্যাচেল ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। গ্রে ওকে দেখতে পেলেও র্যাচেল ওকে এখনও দেখতে পায়নি। একটু আগেই এসে পৌঁছেছে হয়তো। থেমে দাঁড়িয়ে গ্রে র্যাচেলকে দেখতে শুরু করল। কী সুন্দরী! যতবার দেখে প্রথম দেখার মতো অনুভূতি হয়। লম্বা একহারা দেহ, আকর্ষণীয় ঢেউ, কোমর, গলা, বুক… সবই সুন্দর। র্যাচেল ঘাড় ঘুরিয়ে এবার গ্রেকে দেখতে পেয়েছে। হাসি ফুটল ওর ঠোঁটে। ওর চোখ ছুঁয়ে গেল হাসিটা। লজ্জায় আলগোছে নিজের চুলে হাত বুলাল র্যাচেল।
কে এই নারীর সাথে জীবন কাটাতে চাইবে না? সবাই চাইবে।
ওর দিকে গ্রে এগিয়ে গেল। হাত ধরল দুজন।
গ্ৰে মনকের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। সংসার করবে ও। আর ভয় পাওয়া নয়।
ভালবাসা কিংবা ভালবাসা নয়….
কণা কিংবা তরঙ্গ… কিংবা কণা তরঙ্গ দুটোই…।
কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওসব থিওরি কাজ করবে না। হয় হ্যা নয় তো না। একসাথে হ্যাঁ ও না হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
র্যাচেলকে নিয়ে একটা টেবিলে গিয়ে বসল ও। র্যাচেলের চোখে চোখ রেখে ভয়ে ভয়ে বলল, আমাদের কথা বলা দরকার।
ওর চোখের দিকে তাকাল গ্রে। দুজনের দুটো ভিন্ন পেশা, ভিন্ন দেশ, ভিন্ন, দুজন ভিন্ন পথের যাত্রী।
গ্রের হাতের আঙুলে চাপ দিলো র্যাচেল। আমি জানি।
***
ফাদার পাইটোর পায়ের কাছে ভোরা-কাটা বিড়াল এসে মিউ মিউ করছে। এই জাতের বিড়াল ফাদার ভেরিক পুষতেন এখনও তিনি পোষেন।
হঠাৎ নদীর পাশে নজর পড়ল তার। একটা বাদামি চড়ুই পাখি ঘাড় ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে।
মাথা নেড়ে পাখিটাকে দুহাতে তুলে নিলেন ফাদার। মুখের কাছে নিয়ে ওটার পালকে ফুঁ দিলেন। ডানাগুলো মেলে ধরলেন তিনি। তার হাতের তালু থেকে চড়ইটি বাতাসে ডানা মেলল। উড়ে গেল আকাশ পানে।