কাঁধ ঝাঁকাল গ্রে। নাৎসিদের প্রজনন প্রোগ্রামের সাথে ব্যালড্রিক জড়িত ছিল। প্রজনন প্রজেক্টের পাশাপাশি ডিম ও বীর্য সংরক্ষণ করত তারা। যুদ্ধ শেষে দেখা গেল জেরাম-৫২৫-ই ব্যালড্রিকের একমাত্র গোপন প্রজেক্ট নয়। সংরক্ষিত বীর্যগুলো কাঁচের স্ট্রয়ের ভেতরে হিমায়িত করত সে। তারপর সেটা যখন গলত তখন সেটাকে নিষিক্ত করার জন্য নিজের যুবতী স্ত্রীর ভেতরে সেই বীর্য ঢোকাত।
তুমি নিশ্চিত?
মাথা নেড়ে গ্রে সায় দিলো। ভূগর্ভস্থ ল্যাবে ড. মারশিয়া ওয়ালেনবার্গদের নতুন ও উন্নত বংশতালিকা দেখেছিলেন। সেখানে ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গের স্ত্রীর নামের পাশে হেনরিক হিমল্যারের নাম ছিল। ব্ল্যাক অর্ডার-এর প্রধান ছিলেন হিমল্যার। যুদ্ধের পর হেনরিক আত্মহত্যা করলেও আর্য সুপারম্যান তৈরির পরিকল্পনা করে রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর নিজের জঘন্য ঔরস থেকে জন্ম নেবে… নতুন প্রজননুর জার্মানরা।
ওয়ালেনবার্গদেরকে সমূলে উৎপাটন করা হয়েছে, বলল গ্রে। ওদের বংশ নির্বংশ হয়েছে।
আমরা তো সেরকমটাই আশা করছি।
মাথা নাড়ল গ্রে। আমি খামিশির সাথে যোগাযোগ রাখছি। সে জানিয়েছে এস্টেটের চিড়িয়াখানা থেকে হয়তো কয়েকটা জানোয়ার জঙ্গলের গভীরে ঢুকে গেছে। তবে বিস্ফোরণের ফলে তাদের অধিকাংশই মারা পড়েছে হয়তো। তবে অনুসন্ধান চলছে।
খামিশি এখন হুলুহুলুই-আমলোজি প্রিজার্ভ-এর প্রধান ওয়ার্ডেন।
ড. মারশিয়া আর ড, পলা কেইন দুজন তাদের বাসায় ফিরে গেছেন। তবে তাদের সাথে একজন সঙ্গী জুটেছে, ফিওনা। দুই নারী স্পাই ফিওনাকে অক্সফোর্ডে ভর্তি হওয়ার জন্য সাহায্য করছেন।
গ্রে ভাবল অক্সফোর্ডে ফিওনা নিরাপদে থাকবে। ইউনিভার্সিটির আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভাল।
ফিওনার কথা ভাবতে গিয়ে রায়ানের কথাও ওর মনে পড়ল। বাবার মৃত্যুর পর রায়ানা ওদের পুরো এস্টেটকে নিলামে তুলে দিয়েছে। সে চায় না উইউইলসবার্গ-এর কোনো ছায়া ওর সাথে থাকুক।
সঠিক সিদ্ধান্ত।
মনক আর ক্যাটের কী খবর? জানতে চাইল ক্রো। শুনলাম গতকাল নাকি ওদের এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে?
আজ সারাদিনে এই প্রথমবারের মতো গ্রের মুখে হাসি ফুটল। হ্যাঁ হয়েছে তো।
ভালই। ওরা সুখী হোক।
কথা বলতে বলতে ওরা গন্তব্যে চলে এসেছে।
গাড়ি থেকে নামল পেইন্টার।
লিসা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে।
আমাদের কাজ শেষ? পেইন্টার গ্রেকে প্রশ্ন করল। গাড়ি থেকে বেরোল গ্রে। মনকও ওর পাশে যোগ দিল।
জি, স্যার।
ইউরোপ থেকে কী জানতে পারলে সেটা আমাকে জানাবে। আর অতিরিক্ত দিনগুলো নিয়ো, সমস্যা নেই।
লিসার হাত ধরে ক্রো লোগ্যানের বাড়িতে ঢুকল।
মনক ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, দই জমে ক্ষীর। কোনো সন্দেহ আছে?
গ্রে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়ালেনবার্গ এস্টেট থেকে এপর্যন্ত তাদের দুজনকে আলাদা করা যাচ্ছে না। অ্যানা ও গানথার যেহেতু নেই তাই একমাত্র লিসা-ই বেল সম্পর্কে তথ্য জানাতে সক্ষম। তাই ওকে নিয়ে সিগমায় ঘণ্টার পর ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেই উসিলায় ক্রো আর লিসা দুজন দুজনের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
দেখে মনে হচ্ছে, বেল শুধু ক্রোর শারীরিক ক্ষতিপূরণ করেনি মনে প্রেমের ফুলও ফুটিয়েছে।
মনকের প্রশ্নটা এতক্ষণে ওর মাথায় ঢুকল। এই মুহূর্তে কোনোকিছু বলা কঠিন। জীবন আর চেতনা যদি বিষয় হয় তাহলেও ভালবাসাও কোয়ান্টাম বিষয়।
তার মানে… ভালবাসা কিংবা ভালবাসা নয়।
কণা ও তরঙ্গ দুটোই।
পেইন্টার আর লিসার ক্ষেত্রে বিষয়টা এখনও দুটো অপশনেই যেতে পারে। সময়ই বলে দেবে শেষমেশ ওরা কোনটা হবে। ভালবাসা… নাকি ভালবাসা নয়।
জানি না, বিড়বিড় করে গ্রে জবাব দিলো। গ্রে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবছে।
ওর কপালে কী আছে, কে জানে।
.
পরিসমাপ্তি
সন্ধ্যা ৬ টা ৪৫ মিনিট।
রোক্ল, পোল্যান্ড।
ওর দেরি হয়ে গেছে।
ঘড়ি দেখল গ্রে। কিছুক্ষণের মধ্যে র্যাচেলের ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। একটা কফিহাউজে দেখা করবে ওরা। সবকিছু ঠিকঠাক করা হয়েছে। তবে তার আগে একটু কাজ আছে গ্রের। একটা সাক্ষাৎকার নিতে হবে।
রোক্ল একসময় ব্রিসলাউ নামে পরিচিত ছিল। ২য় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মান আর রাশিয়ানরা লড়েছিল এখানে।
এগোচ্ছে গ্রে। সামনে ক্যাথেড্রাল আইল্যান্ড দেখা গেল। ওটার লোহার গেট পেরিয়ে পাথুরে রাস্তায় পা রাখল ও।
দ্য চার্চ অফ সেইন্ট পিটার অ্যান্ড পল। এখানেই কী সেই বাচ্চাটি হেসে খেলে বড় হয়েছে।
সেই নিখুঁত বাচ্চাটি?
সিলমুক্ত থাকা রাশিয়ান রেকর্ড থেকে গ্রে জানতে পেরেছে চার্চের অধীনে থাকা একটা এতিমখানায় মা হারা এক বাচ্চা ছিল। অবশ্য যুদ্ধের পর অনেক বাচ্চাই ছিল যারা তাদের বাবা-মা হারিয়েছে। কিন্তু গ্রে বয়স, লিঙ্গ আর চুলের রং বিবেচনা করে পর্যবেক্ষণ করেছে। বিশেষ করে সাদা চুলের ছেলে বাচ্চাদের রেকর্ড ঘেটেছে ও।
এছাড়াও গ্রে আরও জানতে পেরেছে, সেসময় ওয়েনসেলস্ মাইনে রাশিয়ান রেড আর্মি নাৎসিদের ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার ও ল্যাবগুলোতে হামলা চালায়। তখন SS-Obergruppenfihrer জ্যাকব স্পোরেনবার্গ; তিনি হলেন অ্যানা ও গানরের দাদু রাশিয়ানদের হাত থেকে বেলকে রক্ষা করে সাথে নিয়ে পালাচ্ছিলেন। লিসা অ্যানার কাছ থেকে শুনেছে, এটাই সেই শহর। এখানকার নদীতে হিউগো সাহেবের মেয়ে টোলা সেই বাচ্চাটিকে নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল।