তা তো বলতেই পারো। বলল ক্রো। কিন্তু এগুলো কী?
কানের ওখানে থাকা কয়েকটা পাকা চুলে হাত বুলাল ও।
লিসাও হাত বাড়িয়ে ওর চুলগুলোতে আঙুল চালিয়ে দিলো। পাকা চুল আমার ভাল লাগে। তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবে।
ওর কথা বিশ্বাস করল ক্রো। প্রথমবারের মতো, একদম মনের গভীর থেকে ও বিশ্বাস করল… হ্যাঁ, ও ঠিক হয়ে যাবে। স্বস্তির শ্বাস ফেলল ও। বাঁচবে। ওর সামনে এখনও একটা জীবন আছে।
লিসার হাত ধরল ক্রো, হাতের তালু চুমো খেয়ে নামিয়ে রাখল। লজ্জায় লিসার চেহারা উদ্ভাসিত হলো, মনিটরিং জানালার দিকে তাকাল ও। তবে নার্সের সাথে বিভিন্ন কারিগরি বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেও ক্রোর কাছ থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো না।
পেইন্টার ওকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল। নিজে একটা কেস তদন্ত করতে নেপালে গিয়েছিল পেইন্টার। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে হতে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ঘুরে আসতে হয়েছে ওকে।
নিজের আঙুলগুলো দিয়ে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরল ক্রো।
লিসাকে পেয়েছে ও। বিগত কয়েকদিন ওরা অনেক কাছাকাছি ছিল। কিন্তু তারপরও একে অপরকে খুব একটা চেনে না। কে লিসা? ওর পছন্দের খাবার কী? কী শুনলে ও হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে? ওর সাথে নাচতে কেমন লাগবে? কিংবা রাতে গুড নাইট ও কীভাবে বলে? ফিসফিস করে? সেটা শুনতে কেমন লাগবে?
পেইন্টার ওর পাশে গাউন পরে বসে রইলেও আসলে নগ্ন হয়ে রয়েছে। কারণ হৃদয়-মন থেকে শুরু করে ডিএনএ পর্যন্ত খুলে রেখেছে ও।
লিসার সবকিছু ও জানতে চায়।
.
২টা ২২ মিনিট।
দুই দিন পর। জাতীয় কবরস্থান।
রাইফেল থেকে শেষ গুলি ছোঁড়া হলো আকাশের দিকে। লোগ্যান গ্রেগরির শবসৎকার অনুষ্ঠান আজ।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর একপাশে সরে দাঁড়াল গ্রে। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে এই কবরস্থানে ঠাই হয়েছে অনেকের। অথচ কেউ তাদের নামটাও জানতে পারে না।
লোগ্যান গ্রেগরি এখন তাদের একজন। একজন অপরিচিত ব্যক্তি। খুব কম লোকই তার বীরত্বপূর্ণ মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পারবে। সবাইকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়ার বীরত্বগাঁথা লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে যাবে আজীবন।
গ্রে দেখল ভাইস প্রেসিডেন্ট লোগ্যানের মায়ের হাতে একটা ভাজ করা পতাকা তুলে দিচ্ছেন। লোগ্যানের বাবাও আছেন সাথে। লোগ্যান গ্রেগরির কোনো স্ত্রী, সন্তান ছিল না। সিগমা-ই ছিল তার জীবন… আর মরণ।
সান্ত্বনার বাণী দেয়া শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে কবরস্থান ফাঁকা হয়ে গেল।
পেইন্টারের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল গ্রে। ক্রো একটা লাঠিতে ভর করে এগিয়ে আসছে। যত দিন যাচ্ছে সুস্থ ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে সে। ড, লিসা আছে তাঁর পাশে। ক্রোর একটা কনুই ধরে এগোচ্ছে। না, পেইন্টারকে এখন আর ধরে রাখতে হয় না, লিসা স্রেফ ওর সংস্পর্শে আছে।
মনককে সাথে নিয়ে ওরা সবাই অপেক্ষমাণ গাড়িগুলোর দিকে এগোল।
ক্যাট এখনও হাসপাতালে। শবসকার অনুষ্ঠানে আসার মতো অবস্থা নেই ওর।
পার্কিং করা গাড়িগুলোর কাছে গিয়ে পেইন্টারের দিকে এগোল গ্রে। কয়েক বিষয় নিয়ে ওদের আলোচনা করতে হবে।
ডিরেক্টরের গালে চুমো দিলো লিসা। তোমরা কথা বলো। ওখানে গিয়ে দেখা হবে। মনকের সাথে রয়ে গেল সে। ওরা দুজন অন্য একটা গাড়িতে চড়ে গ্রেগরির বাসায় যাবে। কয়েকজন লোক আসছেন সেখানে।
গ্রে যখন জানতে পারল লোগ্যানের বাবা-মা ওর বাবা-মায়ের বাসার মাত্র কয়েক ব্লক পাশেই বাস করছেন তখন অবাক না হয়ে পারেনি। বুঝতে পারল, একসাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলেও লোগ্যান সম্পর্কে জানাশোনা কত কম ছিল।
গাড়ির দরজা খুলে পেছনের সিটে বসল পেইন্টার।
গ্রে, তোমার রিপোর্ট পড়েছি, ইন্টারেস্টিং। রিপোর্টটাকে ফলো-আপ করো। তবে সেটার জন্য ইউরোপে আরেকবার ঢু মারতে হবে।
ব্যক্তিগত কাজেও আমাকে ওখানে যেতেই হতো। সেজন্যই আমি আলোচনা করতে এসেছি। অতিরিক্ত কয়েকটা দিন হাতে পেলে ভাল হয়।
এক ভ্রু উঁচু করল পেইন্টার। আবার আরেকটা ছুটি হয়তো দেয়া সম্ভব হবে না।
গ্রেও বিষয়টা বুঝতে পারল।
একটু নড়ল পেইন্টার… এখনও হালকা অসুস্থ আছে। ড. মারশিয়া ফেয়ারফিল্ডের কাছ থেকে রিপোর্ট পেয়েছ? সেটার কী খবর? তুমি কী ওয়ালেনবার্গদের বংশতালিকায় বিশ্বাস করো…? মাথা নাড়ল ক্রো।
গ্রে নিজেও সেই রিপোর্ট পড়ে দেখেছে। ভূগর্ভস্থ ভ্ৰণ-ল্যাবে ঢোকার আগে মারশিয়া বলেছিলেন যে গুপ্তধন যত মূল্যবান সেটা তত গভীরে লুকোনো থাকে। একই কথা গোপন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও খাটে। আর সেই গোপনীয়তাটা যদি ওয়ালেনবার্গরা করে তাহলে তো কথাই নেই। যেমন : তারা ব্রেনের ভেতরে মানুষ আর জানোয়ারের কোষ মিশিয়েছিল।
তবে কাহিনি ওখানেই শেষ নয়।
আমরা ১৯৫০ সালের শুরুর দিককার কর্পোরেট মেডিক্যাল রেকর্ডগুলো চেক করে দেখেছি, বলল গ্রে। সেখান থেকে নিশ্চিত হয়েছি, ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গের সন্তান জন্ম দেয়ার কোনো ক্ষমতা ছিল। তিনি অক্ষম ছিলেন।
পেইন্টার মাথা নাড়ল। জেনেটিক্স আর প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়ে বুড়ো ভামটার রীতিমতো নেশা ছিল। প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাচ্ছিল সে। ওয়ালেনবার্গ পরিবারের শেষ পুরুষ ছিল ব্যালড্রিক। কিন্তু তার নতুন সন্তান… সেটাকে সে এক্সপেরিমেন্টের কাজে ব্যবহার করেছিল? বিষয়টা সত্য?