.
বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিট।
ওয়াশিংটন, ডি.সি।
তিন দিন কেটে গেছে। দীর্ঘ তিনটি দিন কেটে গেছে সাউথ আফ্রিকার বিষয়গুলোকে শেষ করতে।
জোহান্সবার্গ এয়ারপোর্ট থেকে ডিরেক্ট ফ্লাইটে চড়ে অবশেষে ডালেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছেছে ওরা। মনক টার্মিনালেই বাকিদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। একটা ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে ছুটেছে ও। পার্কে কাছে গিয়ে জ্যামে পড়তেই মনকের ইচ্ছে হলো দরজা খুলে পায়ে হেঁটেই রওনা দেয়। কিন্তু নিজেকে সামাল দিলো ও। একটু পরে জ্যাম ঘোটার পর ট্যাক্সি আবার চলতে শুরু করল।
সামনে ঝুঁকল মনক। যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারো তাহলে ৫০ বাকস্ পাবে।
দুই মিনিটের মধ্যে মনক তার গন্তব্যে পৌঁছে গেল। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি হসপিটাল।
ড্রাইভারের দিকে এক মুঠো বিল ছুঁড়ে দিয়েই বেরিয়ে গেল মনক। অটোমেটিক দরজার সামনে গিয়ে ছটফট করছে… অটোমেটিক দরজাগুলো এত আস্তে আস্তে খোলে কেন! রোগী আর স্টাফদের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে হল দিয়ে ছুটল ও। আইসিইউ-এর কোন রুমে যেতে হবে ওর জানা আছে।
নার্সিং স্টেশনের পাশ দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটল ও, কয়েকজন চিৎকার করে থামতে বললেও ও সেগুলো কানে তুলল না।
আজকে আর কিছু শুনছি না…
কোণায় পৌঁছে মনক বেডটা দেখতে পেল। দৌড়ে গেল ও। শেষ মুহূর্তে হাটু গেড়ে বসল… ওর সোয়েটপ্যান্টের কারণে পিছলে একদম বিছানার পাশে পৌঁছে গেল। বেডের পাশে গিয়ে ধাক্কা খেল বেশ জোরেশোরে। এক চামচ সবুজ জেলি মুখে পুড়তে গিয়েও থমকে তাকাল ক্যাট। মনক…?
আমার পক্ষে যত আসা সম্ভব আমি চেষ্টা করেছি, মনক হাঁপাচ্ছে।
কিন্তু ৯০ মিনিট আগেও তো আমি তোমার সাথে স্যাটেলাইট ফোনে কথা বলেছি।
ওটা শুধু কথা বলা ছিল।
উঠল মনক, বিছানার ওপর ঝুঁকে ক্যাটের ঠোঁটে গভীরভাবে চুমো খেলো। বেচারির বা কাঁধ আর শরীরের উপরের অংশে ব্যান্ডেজে জড়ানো। হাসাপাতালের নীল গাউনের ফলে অর্ধেক ব্যান্ডেজ ঢাকা পড়ে গেছে। তিনটা বুলেট এসে ঢুকেছিল ওর শরীরে। ২ ইউনিট রক্তক্ষরণ, ক্ষত্রিস্ত ফুসফুস, ভেঙে যাওয়া কাঁধের হাড় আর কিছু ক্ষত নিয়ে ক্যাট এখনও বেঁচে আছে।
ক্যাট সত্যিই খুব ভাগ্যবতী।
লোগ্যান গ্রেগরির শবসৎকার অনুষ্ঠিত হবে আজ থেকে ৩ দিন পর।
তারপরও ক্যাট ও লোগ্যান ওয়াশিংটনকে সন্ত্রাসী আক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছেড়েছে। ওয়ালেনবার্গের সেই আততায়ীকে খতম করে দিয়েছিল ওরা। নইলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। সেই সোনার বেলটা এখন সিগমার রিসার্চ ল্যাবে শোভা পাচ্ছে। আর বেল-এর জন্য আসা জেরাম-৫২৫-এর জাহাজটাকে নিউ জার্সির শিপিং ইয়ার্ডে পাওয়া গিয়েছিল।
এই ফাঁকে আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিরা শিপমেন্টের সূত্র ধরে জানতে পেরেছে জেরামটা ওয়ালেনবার্গদেরই একটা কর্পোরেশন পাঠাচ্ছিল। তবে দীর্ঘক্ষণ রোদের আলোতে থাকার ফলে জেরাম-৫২৫ তার কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। জ্বালানি ছাড়া বেল চালানো অসম্ভব। তাই অন্যান্য দূতাবাস থেকে উদ্ধার করা বেলগুলো আর কখনই বাজবে না।
ভাল খবর।
পুরোনো আমলের বিবর্তনই মনকের পছন্দ।
ক্যাটের পেটের ওপর হাত বুলাল ও। প্রশ্নটা করতে ভয় পাচ্ছে।
তবে প্রশ্নটা ওকে করতে হলেও না। ক্যাট ওর হাতের ওপর হাত রাখল। আমাদের বাবু ভাল আছে। ডাক্তার বলেছেন, কোনো সমস্যা হবে না।
ক্যাটের পেটের ওপর মনক মাথা রাখল। চোখ বন্ধ করল ও। এক হাত দিয়ে ক্যাটের কোমরে হাত বুলাল, তবে আঘাতের কথা ভেবে সাবধানতা অবলম্বন করতে ভুলল না।
ঈশ্বরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ক্যাট ওর গাল ছুঁয়ে দিলো।
পকেট হাতড়ে মনক একটা কালো বক্স বের করল। আংটির বক্স। বেচারা এখনও চোখ খোলেনি।
আমাকে বিয়ে করো। বলল ও।
ওকে।
ঝট করে চোখ খুলল মনক। যে নারীকে সে ভালবাসে তার দিকে তাকাল। কী?
বললাম তো ওকে।
তুমি শিওর?
তুমি কী চাও আমি মত বদলে ফেলি?
না, তোমাকে তো ওষুধ দিয়ে রেখেছে। থাক সুস্থ হও পরে জিজ্ঞেস করব…
আংটিটা দাও তো।বলতে বলতে মনকের হাত থেকে বক্সটা নিয়ে নিলো ক্যাট। খুলল। নিস্পলক তাকিয়ে থাকল খোলা বক্সের দিকে। এটা তো খালি!
মনক বক্সটা হাতে নিয়ে দেখল, কথা সত্য। ভেতরে কোনো রিং নেই!
মাথা নাড়ল বেচারা।
কী হয়েছে? ক্যাট জানতে চাইল।
মনক দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ফিওনা।
.
সকাল ১০ টা ৩২
পরদিন সকালে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি হসপিটালের আরেকটি অংশে শুয়ে আছে পেইন্টার। একঘণ্টা ধরে সিটি স্ক্যান করা হয়েছে ওর। ও প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল, বিগত কয়েক দিনে খুব একটা বিশ্রাম করতে পারেনি। উদ্বেগে কাটিয়েছে রাতগুলো।
দরজা খুলে একজন নার্স ভেতরে প্রবেশ করল।
ওর পিছু পিছু ঢুকল লিসা।
পেইন্টার উঠে বসল। রুমটা বেশ ঠাণ্ডা। অথচ ওর পরনে একটা পাতলা হসপিটাল গাউন ছাড়া কিছুই নেই। ভদ্রতা ও সৌজন্যবশত নিজের গাউনটাকে একটু টানা-হেঁচড়া করল ক্রো… কিন্তু খুব একটা সুবিধে করতে না পেরে হাল ছেড়ে দিলো।
ওর পাশে এসে বসল লিসা। মনিটরিং রুমের দিকে মাথা নাড়ল ও। ওখানে একঝাক গবেষক রয়েছেন। জন হপকিন্স ও সিগমা থেকে এসেছেন তাঁরা। তাঁদের সবার নজর পেইন্টারের স্বাস্থ্যের ওপর।
অবস্থা ভাল।, বলল লিসা। সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তোমার হৃদপিত্রে ভালবে ছোটখাটো কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে… তবে সেটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেরে ওঠার হার খুবই ভাল… অলৌকিক ব্যাপার।