ব্যালড্রিকের কব্জি মোচড় দিলো লিসা, যাতে গ্রেও ঘড়িতে ওঠা নাম্বারগুলো দেখতে পায়।
০২:০১ সেকেন্ড।
গ্রে আরও এক সেকেন্ড কমে গেল। পরিচিত তীক্ষ্ণ আওয়াজটাও শোনা গেল আবার।
০২:০০ মিনিট।
আমাদের হাতে দুই মিনিটের মতো সময় আছে। তার মধ্যে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। বলল লিসা।
সবাই বেরিয়ে পড়ুন! মনক, রেডিওতে খামিশিকে ডাকো! তাকে বলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে যেন তার লোকজন নিয়ে ভবনের কাছ থেকে দূরে যায়। গ্রে নির্দেশ দিলো।
কথামতো কাজ করতে শুরু করল মনক।
ছাদে একটা হেলিকপ্টার আছে, লিসা জানালো।
মুহূর্তের মধ্যে ছুটল সবাই। মনকের কাছ থেকে পেইন্টারকে নিলো গ্রে। মশি মেজরকে সাহায্য করছেন। ওদের পিছু পিছু এগোলো লিসা, ফিওনা আর মারশিয়া।
গানথার কোথায়? ফিওনা জানতে চাইল।
সে তার বোনকে নিয়ে চলে গেছে। জবাব দিলো মেজর।
গানথারকে খোঁজার সময় নেই। লিফট দেখাল গ্রে। মনকের দল লিফটের দরজায় চেয়ার ঢুকিয়ে রেখেছিল যাতে দরজা বন্ধ হতে না পারে। ফলে লিফটটাকে কেউই ব্যবহার করতে পারেনি। মশি এক হাতে চেয়ারটাকে টান দিয়ে বের করে হলের দিকে ছুঁড়ে মারলেন।
ভেতরে ঢুকল সবাই।
উপরের বাটনে লিসা চাপ দিলো। সাত তলা। ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করল লিফট।
মনক বলতে শুরু করল। উপরে আমি আমার লোককে রেডিওতে খবর জানিয়ে দিয়েছি। সে কপ্টার উড়াতে পারে না তবে ইঞ্জিন চালু করে গরম রাখতে পারবে।
বোম, বলল যে, লিসার দিকে ফিরল ও। বিস্ফোরণটা কীরকম হতে পারে?
হিমালয়তে যেরকম দেখে এসেছি এটাও যদি সেরকম হয় তাহলে ব্যাপক বিস্ফোরণ হবে। জেরাম-৫২৫ দিয়ে এরা কোয়ান্টাম বোম টাইপের কিছু একটা বানিয়েছে।
নিচের ভূগর্ভস্থ লেভেলে থাকা ট্যাংকগুলোর কথা গ্রের মনে পড়ে গেল।
সর্বনাশ…
লিফট ধীরে ধীরে উপরে উঠছে।
পেইন্টার এখনও দুর্বল। নিজের ওজন বহন করতে অক্ষম। তবে গ্রের চোখে ঠিকই। চোখ রাখল সে। পরেরবার…ভাঙা স্বরে বলল, … তুমি নিজে নেপালে যাবে।
হাসল গ্রে। পেইন্টার ক্রো ফিরেছে।
কিন্তু কতক্ষণের জন্য?
সাততলায় এসে পৌঁছুল লিফট, দরজা খুলে গেল।
এক মিনিট, বললেন মারশিয়া। মনে মনে সময়ের দিকে খেয়াল রাখছেন তিনি।
সিঁড়ি ধরে ছাদে পৌঁছে গেল সবাই। হেলিকপ্টার অপেক্ষা করছে ওদের জন্য। ব্লেড ঘুরছে। একে অপরকে সাহায্য করতে করতে এগোল সবাই। রোটরের নিচে পৌঁছুনোর পর পেইন্টারকে মনকের হাতে তুলে দিলো গ্রে। সবাইকে নিয়ে উঠে পড়ো।
অপরপাশে ঘুরে গিয়ে গ্রে পাইলটের সিটে গিয়ে বসল।
১৫ সেকেন্ড! জানিয়ে দিলেন মারশিয়া।
গ্রে ইঞ্জিনের স্পিড বাড়িয়ে দিলো। চিৎকার করে উঠল ব্লেডগুলো। কন্ট্রোল প্যানেল ব্যবহার করে গ্রে কপ্টারটাকে ছাদ থেকে শূন্যে তুলল। এর আগে কোনো জায়গা ছেড়ে চলে যেতে পেরে গ্রের এত খুশি লাগেনি। বাতাসে ভর করেছে কপ্টার। উপরে উঠে যাচ্ছে। বিস্ফোরণের প্রভাব থেকে বাঁচতে কতটা দূরে সরতে হবে ওদের?
আরও পাওয়ার যোগ করে ব্লেডের গতি বাড়িয়ে দিলো গ্রে।
উপরে উঠতে উঠতে গ্রে কপ্টারের নাকটাকে একটু নিচ দিকে রাখল। এস্টেটের ভূমিতে নজর ওর। জিপ, মোটরসাইল সবকটি ভবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
কাউন্ট ডাউন শুরু করলেন মারশিয়া। পাঁচ, চার…
কিন্তু তার হিসেবে একটু গলদ ছিল।
হঠাৎ ওদের নিচে দৃষ্টিশক্তি অন্ধ করে দেয়ার মতো আলো ঝলসে উঠল। মনে হলো ওরা যেন সূর্যের উপরে উড়ছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব: সুনসান নীরবতা। কোনো শব্দই শোনা যাচ্ছে না। চোখে কিছু দেখতে না পারার ফলে গ্রে কপ্টারটাকে বাতাসে উড়িয়ে রাখতে খুব কসরত করছে। মনে হচ্ছে, বাতাসও নেই। ও টের পেল কপ্টার নিচ দিকে ছুটে যাচ্ছে।
তারপর হঠাৎ করেই শব্দ ও আলো দুটোই ফিরে এলো।
অনেকক্ষণ আকাশে খাবি খাওয়ার পর কপ্টারের নোটরগুলো অবশেষে আঁকড়ে ধরতে পারল বাতাসকে।
কপ্টারকে স্থির করল গ্রে, খুব ভয় পেয়েছে। ভবনটা যেখানে থাকার কথা সেদিকে তাকাল। কিন্তু ওখানে এখন একটা বড় গর্ত দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো বিশাল দৈত্য, বিরাটাকার চামচ দিয়ে ওখান থেকে মাটি তুলে নিয়েছে।
কিছু নেই ওখানে নেই কোনো ধ্বংসাবশেষ। শুধুই শূন্যতা।
গর্ত থেকে দূরে তাকাল গ্রে। দূরে সরতে থাকা যানবাহনগুলো থেমে দাঁড়িয়ে পেছন দিকে তাকাচ্ছে। অনেকে আস্তে আস্তে হেঁটে আসছে গর্তের দিকে। ওরা সবাই খামিশির সৈন্যবাহিনি। সবাই নিরাপদ। সীমানার কাছে দাঁড়িয়েছে জুলুরা। অনেকদিন আগে ওরা যেটা হারিয়েছিল আজ সেটা আবার ফিরে পেয়েছে।
ওদের ওপর দিয়ে গ্রে কপ্টার উড়িয়ে নিলো। নিখোঁজ একটা ড্রামের কথা মনে পড়ল ওর। ওতে জেরাম-৫২৫ আছে, আমেরিকার নাম লেখা ছিল ড্রামটায়। রেডিও অন করল ও। একগাদা সিকিউরিটি কোড জানিয়ে সিগমা কমান্ডে পৌঁছুতে হলো।
লোগ্যান-এর জায়গায় অন্য কারও কণ্ঠ শুনে অবাক হলো গ্রে। এখন কথা বলছেন শ্যেন ম্যাকনাইট, সিগমার সাবেক ডিরেক্টর। গ্রের শরীর দিয়ে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে গেল। ওখানে যা যা হয়েছে চটপট সবকিছু জানিয়ে দিলেন ম্যাকনাইট। সর্বশেষ খবরটা গ্রেকে বড়সড় ধাক্কা মারল।
অবশেষে রেডিওতে কথা বলা শেষ হলো। গ্রে স্তম্ভিত। সামনে ঝুঁকল মনক।
কী হয়েছে?
ঘুরল গ্রে।
মনক… বিষয়টা ক্যাট সংক্রান্ত।