কোয়ান্টাম দুনিয়ার ইলেকট্রনের মতো। সেগুলো কণা হতে পারে, তরঙ্গ হতে পারে আবার একই সাথে দুটোই হতে পারে।
তৃতীয় অপশন, মাথা নেড়ে গ্রে বলল, এটা শুনতে খুব একটা সুবিধের মনে না হলেও এই অপশনটাকে যদি কম্পিউটারে যোগ করা যেত তাহলে একই সাথে একাধিক অ্যালগরিদম কার্য সম্পাদন করা সম্ভব হতো।
কিছুই বুঝতে পারছি না। পকেটে চুইংগাম নেই, নইলে ওটা চিবিয়ে সময় কাটাতাম। বিড়বিড় করল মনক।
যে কাজগুলো করতে আধুনিক কম্পিউটারগুলো বছর বছর সময় নেয় সেগুলো কয়েক সেকেন্ডে করা সম্ভব হতো তখন।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মতো আমাদের ব্রেন এই কাজ করে? লিসা বলল।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন… জটিল নিউরন সংযোগের মাধ্যমে আমাদের ব্রেন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করতে সক্ষম। কয়েকজন বিজ্ঞানীর ধারণা সেই ফিল্ডের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক কোয়ান্টাম দুনিয়ায় সংযোগ ঘটাতে পারে। ফিল্ডটা একটা সেতু হিসেবে কাজ করে থাকে।
আর কোয়ান্টাম বিষয় নিয়ে বেল খুবই সংবেদনশীল, বলল লিসা। সেজন্য হিউগো নিজেও বাচ্চাটির সাথে বেল চেম্বারে ঢুকেছিলেন যাতে এক্সপেরিমেন্টের ফলাফলে নিজে প্রভাব ফেলতে পারেন।
দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করলে অনেককিছু দেখতে অন্যরকম লাগে। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টাকে আরও বড় বলে মনে হয়। স্টার অফ ডেভিডের দিকে তাকাল গ্রে। এটা কেন? প্রার্থনার প্রতীক কেন?
লিসা মাথা নাড়ল, জানে না।
প্রার্থনা জিনিসটা কী? মনকে একাগ্রচিত্তে আনা, চেতনা জাগ্রত করা… আর চেতনা যদি কোয়ান্টাম বিষয় হয় তাহলে প্রার্থনা করাটাও কোয়ান্টাম বিষয়।
এবার লিসা বুঝতে পেরেছে। আর কোয়ান্টাম সংবেদনশীল হওয়ায় সেটাকে পরিমাপ করে ফলাফলে অবশ্যই প্রভাব ফেলবে।
সহজে বললে…গ্রে থামল।
উঠে দাঁড়াল লিসা। প্রার্থনা কাজ করে।
ঠিক এই বিষয়টাই আবিষ্কার করেছিলেন হিউগো। বইগুলোর ভেতরে এটাই লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। বিষয়টা খুবই ভয়ঙ্কর আর খুব সুন্দরও।
লিসার পাশে কনসোলের ওপর ঝুঁকল মনক। তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো, হিউগো সাহেব প্রার্থনা করেছিলেন বাচ্চাটা যাতে নিখুঁত হয়?
গ্রে মাথা নাড়ল। বাচ্চাটিকে নিয়ে হিউগো সাহেব চেম্বারে ঢোকার পর নিখুঁত হওয়ার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। চিন্তা, চেতনা একত্র করে…. একাগ্রচিত্তে, নিঃস্বার্থভাবে, খাঁটি মনে প্রার্থনা করেছিলেন তিনি। মানুষ যখন প্রার্থনা করে তখন তার চেতনা একটা নিখুঁত কোয়ান্টাম পরিমাপক যন্ত্র হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। আর বেল-এর ভেতরে থাকা অবস্থায় বাচ্চাটির সম্ভাবনা পরিমাপ করা হচ্ছিল কিন্তু হিউগো তার প্রার্থনা ও চেতনার সাহায্যে বাচ্চাটিকে একদম নিখুঁত করতে সক্ষম হোন। একটা নিখুঁত জেনেটিক ছক তৈরি হয়।
ঘুরল লিসা। তাহলে আমরাও সেভাবে পেইন্টারের কোয়ান্টাম ক্ষতিকে উল্টোদিকে চালিত করতে পারব।
নতুন একটা কণ্ঠ ভেসে এলো। মারশিয়ার। তিনি মেঝেতে বসে পেইন্টারের সেবা করছেন। যা করার তাড়াতাড়ি করুন।
.
বিকাল ৩টা ৩২ মিনিট।
একটা তেরপলে করে পেইন্টারকে ব্লাস্ট চেম্বারের ভেতরে নিয়ে গেল।
ওকে বেল-এর কাছে রাখুন। বলল লিসা।
ওরা লিসার কথামতো কাজ করল। বেল ইতোমধ্যে ঘুরতে শুরু করেছে। বেল এর ব্যাপারে গানথার একটা কথা বলেছিল সেটা মনে পড়ল লিসার। বেল একটা মিক্সমাস্টার। ভালই বলেছিল গানথার। বেল-এর বাইরের সিরামিক শেল থেকে অল্প করে আলোর দ্যুতি বের হচ্ছে এখন।
পেইন্টারের পাশে হাঁটু গেড়ে বসল লিসা। ক্রোকে পরীক্ষা করে দেখল।
আমি আপনার সাথে থাকতে পারি, লিসার কাঁধে হাত রেখে বলল গ্রে।
না। একাধিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার থাকলে ফলাফল বিগড়ে যেতে পারে।
অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট, সায় দিলে মনক।
তাহলে আপনি যান, আমি থাকি স্যারের সাথে। গ্রে প্রস্তাব দিলো।
মাথা নাড়ল লিসা। আমাদের হাতে মাত্র একটাই সুযোগ আছে। ঠিকভাবে একাগ্রতার সাথে প্রার্থনা না করলে পেইন্টারকে সুস্থ করা সম্ভব হবে না। আর কাজটা একজন মেডিক্যাল ডাক্তার করলেই বোধহয় বেশি ভাল হয়।
মেনে নিলো গ্নে।
আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদেরকে উত্তরটা জানিয়েছেন, আশার আলো দেখিয়েছেন। গ্রের দিকে তাকাল লিসা। এবার আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
গ্রে মাথা নেড়ে সরে গেল।
লিসার দিকে ঝুঁকল মনক। কী প্রার্থনা করছেন সেটার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকবেন। বলল ও। কথাটার পেছনে একধরনের ভয় কাজ করছিল ওর।
গ্রে আর মনক বেরিয়ে এলো বেল চেম্বার থেকে।
মারশিয়া কনসোল থেকে ঘোষণা করলেন, এক মিনিটের মধ্যে পালস পাওয়া যাবে।
ঘুরল লিসা। ব্লস্ট শিল্ড তুলে দিন।
পেইন্টারের ওপর ঝুঁকল লিসা। ক্রোর চামড়া এখন নীল হয়ে আছে, হয়তো বেল-এর আলোর কারণে এরকম দেখাচ্ছে এখন। এক অন্তিম মুহূর্তে আছে ক্রো। ঠোঁট ফেটে গেছে, শ্বাস নিচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে, ওর হৃদপিণ্ড আর ধকধক করছে না… এখন যেরকম আওয়াজ করছে সেটা অনেকটা গুঞ্জনের মতো। চুলের অবস্থাও খারাপ। চুলের গোড়াগুলো বরফ-সাদা দেখাচ্ছে। খুব করুণ অবস্থা পেইন্টারের।
লিসার চারপাশে ব্লাস্ট শিল্ড উঠতে শুরু করল। বাকি সবার থেকে আলাদা করে ফেলছে ওদের দুজনকে। ধীরে ধীরে শিল্ড উঠে গিয়ে ছাদের সাথে গিয়ে ঠেকল।