লিসার চোখে কী যেন দেখতে পেল গ্রে। একটু আগে সেটা ছিল না।
আশা।
অ্যানার মতে, বলল লিসা, একটা বাচ্চা নিয়ে হিউগো একা একা বেল চেম্বারে ঢুকেছিলেন। তাঁর সাথে কোনো বিশেষ যন্ত্র ছিল না। পরীক্ষা শেষ করে দেখা গেল তার এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে। প্রথমবারের মতো সূর্যের বীর-এর জন্ম হয়েছিল তখন।
ভেতরে ঢুকে কী করেছিলেন তিনি? ফিওনা প্রশ্ন করল।
স্টার অফ ডেভিডে টোকা দিলো লিসা। ওটার সাথে কোনো না কোনোভাবে এটা জড়িত। কিন্তু আমি এই চিহ্নের সঠিক মর্মার্থটা ধরতে পারছি না।
তবে গ্রে পেরেছে। তরুণ বয়সে বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বিষয় ও ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছে গ্রে। এছাড়াও সিগমার ট্রেনিং নেয়ার সময়ও সেই জ্ঞানগুলো আরেকবার ঝালাই হয়েছিল। এই স্টারের মানে, নানা রকম। এটা প্রার্থনা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তারচেয়ে বেশিও হতে পারে। খেয়াল করে দেখুন ৬টা শীর্ষের কী অবস্থা। প্রত্যেকটা একে অন্যের বিপরীত দিক নির্দেশ করছে। একটা উপরের দিকে, আরেকটা নিচের দিকে। ইহুদিদের কেবলা অনুযায়ী… স্টারে থাকা দুটো ত্রিভুজ ইন ও ইয়াং, আলো ও আঁধার, শরীর ও আত্মা নির্দেশ করে। একটা ত্রিভুজ নির্দেশ করে বস্তু ও শরীরকে। আর আরেকটা নির্দেশ করে আত্মা, আধ্যাত্মিক জগৎ আর মনকে।
আর সবমিলিয়ে, দুটো জিনিস দাঁড়ায়। বলল লিসা। শুধু কণা কিংবা তরঙ্গ নয়… দুটোই… একসাথে।
গ্রে বুঝতে বুঝতেও ঠিক বুঝতে পারছে না। কী?
ব্লাস্ট চেম্বারের দিকে তাকাল লিসা। অ্যানা বলেছিলেন বেল হচ্ছে একধরনের কোয়ান্টাম পরিমাপক যন্ত্র। বেল দিয়ে বিবর্তনে প্রভাব ফেলা যায়। কোয়ান্টাম বিবর্তন। এসব কিছুই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিষয়। চাবি এটাই।
ভ্রু কুঁচকাল গ্রে। মানে কী?
অ্যানা লিসাকে যা শিখিয়েছিলেন সেটা জানালো লিসা। জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের ওপর পর্যাপ্ত পড়াশোনা করা আছে গ্রের। স্রেফ একটু বিস্তারিত জানার দরকার ছিল। চোখ বন্ধ করে স্টার অফ ডেভিড আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মধ্যে ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টা করল গ্রে। এই দুটোর মধ্যে কী উত্তরটা আছে?
আপনি বললেন, হিউগো শুধু সেই বাচ্চাটাকে নিয়ে চেম্বারে ঢুকেছিল? প্রশ্ন করল গ্রে।
হ্যাঁ, লিসা নরমভাবে জবাব দিলো। ও বুঝতে পারল গ্রেকে চিন্তা-ভাবনা করতে দিতে হবে। প্রয়োজন আছে।
মনোযোগ দিলো গ্রে। হিউগো সাহেব ওকে তালা দিয়েছেন। লিসা চাবি দিয়েছে। এবার ওর পালা। যাবতীয় চাপ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মনকে এপর্যন্ত পাওয়া সব তথ্য, উপাত্ত, সূত্র পর্যালোচনা করার সুযোগ দিলো ও। তথ্য, উপাত্ত পরীক্ষা করছে, প্রয়োজনে বাতিলও করে দিচ্ছে।
এ যেন হিউগোর আরেকটা জিগস পাজল।
স্টার অফ ডেভিডকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অবশেষে ওর মাথায় আসল বিষয়টা উদয় হলো। এত পরিষ্কার, এত নিখুঁত। বিষয়টা আরও আগে মাথায় আসা উচিত ছিল।
চোখ খুলল গ্রে।
ওর চেহারায় লিসা কিছু একটা দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল, কী?
উঠে দাঁড়াল গ্রে। বেল চালু করুন, কনসোলের পাশ দিয়ে এগোলো ও, এক্ষুনি!
লিসা ওর পিছু পিছু এগোলো। বেল চালু করবে। প্রশমনকারী পালস্-এ পৌঁছুতে চার মিনিট লাগবে। কাজ করতে করতে গ্রের দিকে তাকাল লিসা। আমরা কী করছি?
গ্রে বেল-এর দিকে ফিরল। হিউগো কোনো যন্ত্র ছাড়াই চেম্বারে ঢুকেছিলেন।
কিন্তু সেটা অ্যানার বক্তব্য…।
না। লিসাকে থামিয়ে দিলো গ্রে। তিনি স্টার অফ ডেভিডকে সাথে নিয়ে ঢুকেছিলেন। প্রার্থনা ও বিশ্বাস নিয়ে ঢুকেছিলেন তিনি। আর সবচেয়ে বড় কথা তার সাথেই নিজস্ব কোয়ান্টাম কম্পিউটার ছিল।
কী?
দ্রুত বলতে শুরু করল গ্রে। চেতনা বিষয়টা বিজ্ঞানীদেরকে শত বছর ধরে ঘোল খাইয়ে আসছে। সেই ডারউইন থেকে শুরু করে…। চেতনা জিনিসটা কী? সেটা কী শুধুই আমাদের মস্তিষ্ক? নার্ভ ফায়ার করে চলেছে? মস্তিষ্ক আর মনের মাঝে সীমারেখাটা কোথায়? জাগতিক আর আধ্যাত্মিক-এর সীমানা কোনটা? দেহ আর আত্মার সীমা কী?
চিহ্নের দিকে নির্দেশ করল গ্রে।
বর্তমান গবেষণা বলছে সবকিছু ওখানে। আমরা দুটোই। কণা ও তরঙ্গ; দুটোই আমরা। দেহ ও আত্মা। আমাদের জীবনটাই একটা কোয়ান্টাম ঘটনা কিংবা বিষয়।
খুব ভাল কথা। কিন্তু তোমার কথা সব আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে, মনক নিজের মতামত জানালো।
গভীর দম নিলো গ্রে, উত্তেজিত। আধুনিক বিজ্ঞান আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে বাতিল করে দিয়েছে। বিজ্ঞান অনুযায়ী, আমাদের মস্তিষ্ক একটা জটিল কম্পিউটার ছাড়া কিছুই নয়। নিউরনের (স্নায়ুকোষ) ফায়ারিঙের ফলে আমাদের চেতনা জাগ্রত থাকে। সহজ ভাষায় বললে, আমাদের ব্রেন একটা নিউর্যাল-নেট কম্পিউটার যেটা কোয়ান্টাম লেভেলে চালিত হয়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার, বলল লিসা। আপনি বিষয়টা ইতোমধ্যে একবার বলেছেন। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার জিনিসটা কী এবার সেটা বলুন।
আপনি দেখেছেন কম্পিউটার কোডগুলোকে একদম বেসিক পর্যায়ে নিলে কী দেখা যায়। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জিরো আর ওয়ান। এই শূন্য আর এক দিয়ে আধুনিক কম্পিউটার চিন্তা করে থাকে। একটা সুইচ বন্ধ নাকি চালু। শূন্য কিংবা এক। তাত্ত্বিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার… যদি সেটা তৈরি করা সম্ভব হতো তাহলে সেখানে তৃতীয় একটা অপশন থাকত। শূন্য বা এক, সাথে তৃতীয় অপশন। শূন্য ও এক দুটোই।