গ্রে ওর হাত দুটো টেনে নিচে নামাল। লিসার চোখে চোখ রেখে বলল, আমি ডিরেক্টর ক্রোকে চিনি আর আপনিও তো চেনেন। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মতো ক্ষমতা ওনার আছে।
মেডিক্যাল ডাক্তার হওয়ার সুবাদে এরকম তর্ক লিসার কাছে নতুন নয়। কিন্তু ও নিজে একজন বাস্তববাদী মানুষ। তাই যেখানে আশা নেই সেখানে একজন ডাক্তার যেটা করতে পারে সেটা হলো রোগীর জন্য শান্তির ব্যবস্থা করা।
যদি ওকে সারিয়ে তোলার কোনো সুযোগ থাকতো, মাথা নাড়তে নাড়তে বলল লিসা। যদি একটা ছোট্ট সুযোগও থাকতত আমি সেটা নিতাম। হিউগো সাহেব তার মেয়েকে ওই কোডগুলো দিয়ে কী বলতে চেয়েছিলেন সেটা যদি জানতে পারতাম। কোডটা যদি ভাঙা সম্ভব হতো… আবার মাথা নাড়ল ও।
আঙুল দিয়ে লিসার চিবুক স্পর্শ করল গ্রে। সরে যেতে চাইল লিসা, অস্বস্তিবোধ করছে। কিন্তু গ্রে শক্ত করে ধরে রইল।
আমি জানি, হিউগো ওই কোডের মধ্যে কী লুকিয়ে রেখেছেন।
ভ্রু কুঁচকে গ্রের দিকে তাকাল লিসা। কিন্তু গ্রের চোখে সততা দেখতে পেল ও।
আমি উত্তরটা জানি। বলল গ্রে।
১৬. রিডল অফ দ্য রুনস
বিকাল ৩ টা ২৫ মিনিট।
সাউথ আফ্রিকা।
এটা কোড নয়, বলল গ্রে। এটা কখনও কোড ছিলই না।
হাতে মার্কার নিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসল ও। ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গকে দেখানোর জন্য ও যে প্রাচীন বর্ণগুলো লিখেছিল ওগুলো কেন্দ্রে রেখে একটা বৃত্ত আঁকল।
ওর চারপাশে এসে দাঁড়াল বাকি সবাই। তবে গ্রের দৃষ্টি শুধু লিসার দিকে। গ্রে যে উত্তরটা পেয়েছে সেটার কোনো মানে ওর জানা নেই। কিন্তু এতটুকু বুঝতে পেরেছে এটা হলো তালা আর লিসা যেহেতু বেল সম্পর্কে ধারণা রাখে তাই সে হলো চাবি। ওদের দুজনকে একসাথে কাজ করতে হবে।
আবার সেই প্রাচীন বর্ণ, বলল লিসা।
ব্যাখ্যা শোনার জন্য লিসার দিকে গ্রে ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
মেঝের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল লিসা। আমি এর আগে ভিন্ন ধরনের বর্ণ দেখেছি। ওগুলো রক্তে আঁকা ছিল। উচ্চারণ করলে দাঁড়াল : Schwarze Sonne.
ব্ল্যাক সান। কালো সূর্য। গ্রে অনুবাদ করল।
নেপালে আনার প্রজেক্টের নাম ছিল এটা।
কথাটা গুরুত্ব সহকারে নিলো গ্রে। নিচের ওয়ার্কস্টেশনে দেখে আসা কালো সূর্যের প্রতীকের কথা ভাবল ও। হিমল্যারের মূল সংঘটি নিশ্চয়ই যুদ্ধের পর ভেঙে গিয়েছিল। অ্যানার দল গিয়েছিল উত্তরে। ব্যালড্রিক দক্ষিণে। আলাদা হওয়ার পর দূরত্ব বাড়তে বাড়তে পরিস্থিতি এমন পর্যায় চলে গেল যে একসময়ের মিত্র হয়ে গেল শত্রু।
মেঝেতে আঁকা বর্ণগুলোর ওপর টোকা দিলো লিসা। আমি সেই রক্তে আঁকা বর্ণগুলোর অর্থ একটু এদিক-ওদিক করে খুব সহজেই বের করেছিলাম। এটাও কী সেরকম কিছু?
গ্রে মাথা নাড়ল। আপনার মতো ব্যালড্রিকও একইভাবে চিন্তা করেছিল। আর সেজন্যই এতদিনেও সফল হতে পারেনি। গুরুতর গোপন কোনো তথ্যকে হিউগো সাহেব এত হালকাভাবে লুকিয়ে রাখবেন না।
আচ্ছা, এটা যদি কোড না হয়, তাহলে কী? মনক প্রশ্ন করল।
জিগস পাজল।
কী?
রায়ানের বাবার সাথে আমরা যখন কথা বলেছিলাম, মনে আছে?
মনক মাথা নাড়ল, আছে।
তিনি বলেছিলেন, একটু অদ্ভুত প্রকৃতির ছিলেন তার দাদা। উদ্ভট বিষয়গুলো নিয়ে পড়ে থাকতেন, ঐতিহাসিক রহস্যগুলো নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ ছিল।
আর সে কারণেই তিনি নাৎসিতে যোগ দিয়েছিলেন। বলল ফিওনা।
অবসর সময়েও তিনি নিজেকে বিশ্রাম দিতেন না। ধাঁধা, জিগস পাজল, মগজের খেলা নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। এই বর্ণগুলো তেমনি এক মগজের খেলা। কোড নয়,.. জিগস পাজল। বর্ণগুলোকে এদিক-ওদিক সরিয়ে, ঘুরিয়ে, সাজিয়ে সমাধান করতে হবে।
বিগত দিন জুড়ে গ্রে এই বর্ণগুলোকে ওর মাথায় এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছে। চেষ্টা করতে করতে একটা নির্দিষ্ট আকৃতি পাওয়ার সময় ক্ষান্ত দিয়েছে ও। এখন ও উত্তরটা জানে। বিশেষ করে, হিউগো সাহেবের জীবনের শেষ অংশ জানার পর উত্তরটার ওপর ওর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। নাৎসিদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আফসোস করেছিলেন হিউগো। কিন্তু কেন? মানে কী? লিসার দিকে তাকাল গ্রে।
বর্ণগুলোকে গ্রে আবার মেঝেতে আঁকল। তবে এবার পাশাপাশি না একে একটু ভিন্নভাবে আঁকল ও। জিগস পাজলের সমাধান এটা।
অন্ধকার থেকে আলোর জন্ম।
পাপ থেকে প্রায়শ্চিত্তের পথ।
অপবিত্র থেকে পবিত্রকরণ।
পেগান ধর্মের বর্ণগুলো ব্যবহার করে নিজের আসল রূপ প্রকাশ করেছেন হিউগো।
এটা তো একটা স্টার, বলল মনক।
লিসা চোখ তুলল। কোনো সাধারণ তারকা নয়… এটা হলো স্টার অফ ডেভিড। (ডেভিড–বাইবেলের একটি চরিত্র। জুদাহ রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা।)
মাথা নাড়ল গ্রে।
এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি করল ফিওনা। কিন্তু এটার মানে কী?
গ্রে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমি জানি না। আমি এটাও জানি না এই স্টারের সাথে বেল-এর কী সম্পর্ক কিংবা এটা কীভাবে এই ডিভাইসের সাথে নিখুঁত করার কাজ করে। হতে পারে এটা হিউগোর শেষ বার্তা। নাৎসিদের সাথে কাজ করলেও তিনি তাঁর আসল পরিচয়টা হয়তো পরিবারকে জানাতে চেয়েছিলেন।
অ্যানার শেষ কথাটা মনে পড়ল গ্রের।
আমি নাৎসি নই।
হিউগো কী এই বর্ণগুলো দিয়েও একই কথা জানাতে চেয়েছেন?
না, তীক্ষ্ণ স্বরে বলল লিসা। যদি আমরা এটার সমাধান করতে চাই তাহলে আমাদেরকে উত্তরের দেখানো পথে কাজ করতে হবে।