জরুরি সিঁড়ির অংশটুকু গানথার নিজে আটকে দিয়ে এসেছে, বলল গ্রে। আর খোলা রেখে জ্যাম করে দেয়া হয়েছে লিফটের দরজাগুলো। এর ফলে আমাদের হাতে বেশকিছু সময় থাকবে। মশি ও মেজরের দিকে ফিরল ও। এখন শুধু বাইরের হলের দিকে নজর রাখুন। তাতেই হবে।
মশি আর মেজর অস্ত্র নিয়ে সেদিকে এগোলো।
ওরা দুজন বেরিয়ে যাওয়ার পর গানথার ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করল। ওর চেহারা দেখেই লিসা বুঝতে পারল বোনের খবরটা বেচারা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছে। নিজের শরীরে থাকা অস্ত্রগুলো এক এক করে খুলে মেঝেতে ফেলল গানথার। নিচু হতে থাকা শিল্ডের দিকে এগোচ্ছে। বোনের কী অবস্থা দেখতে চায়।
নামতে নামতে শিল্ড থেমে গেল। মোটরের গুঞ্জনও নেই। ভেতরে কী অবস্থা হয়েছে সেটা দেখার কথা ভাবতে গিয়ে ভয় হলো লিসার। কিন্তু ওকে তো দেখতেই হবে। কারণ বিষয়টা ওর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
বেল-এর দিকে এগোলো ও।
ডিভাইসের ছায়ার আড়ালে একপাশে আনার দেহ পড়ে রয়েছে। ছোট বাচ্চার মতো কুঁকড়ে রয়েছেন তিনি। তার চামড়া ছাইয়ের মতো সাদাটে আর কালো চুলগুলো বরফ-সাদা হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে তিনি যেন এক মার্বেলের মূর্তি। শিল্ড পেরিয়ে বোনের কাছে গেল গানথার। হাটু গেড়ে বসল। কোনো কথা না বলে চুপচাপ মৃত বোনকে কোলে তুলে নিলো বেচারা।
বোনকে কোলে নিয়ে বেল-এর দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াল গানথার, রওনা হয়ে গেল বাইরের দিকে।
কেউ ওকে থামানোর চেষ্টা করল না।
দরজার বাইরে গানথার অদৃশ্য হয়ে গেল।
ব্লাস্ট চেম্বারের ভেতরে থাকা আরেকটা লাশের দিকে তাকাল লিসা। ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গ। অ্যানার মতো এর চামড়ারও অস্বাভাবিক রকম সাদা হয়ে গেছে। রেডিয়েশনের প্রভাবে তার মাথায় কোনো চুল নেই। এমনকি চোখের ভ্রু, চোখের পাতা সেগুলোও গায়েব। শরীরের মাংসগুলো লেপ্টে গেছে হাঁড়ের সাথে। অনেকটা মমির মতো লাগছে। তার অস্থিগত গঠনে কিছু একটা হয়েছে…
ভয়ে লিসা আর সামনে এগোতে পারছে না।
মাথায় কোনো চুল না থাকায় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে খুলির আকৃতি আর স্বাভাবিক নেই। ওটার কিছু অংশ গলে গিয়ে আবার জমাট বেধে গেছে। হাত মুচড়ে গেছে ব্যালড্রিকের। আঙুলগুলো অদ্ভুত দেখাচ্ছে, অনেকটা গরিলাদের মতো। বিকেন্দ্রীকরণের কথা মনে পড়ল লিসার।
ওকে বের করতে হবে, বিরক্তি নিয়ে বলল গ্রে। তারপর লিসার দিক তাকাল। পেইন্টারকে ভেতরে নিতে আমি আপনাকে সাহায্য করব।
ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে লিসা পিছু হটল। আমরা পারব না… ওয়ালেনবার্গের মরহুম সর্বেসর্বা ব্যালড্রিক সাহেবের ভয়াবহ পরিণতির ওপর থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না লিসা। ও চায় না পেইন্টারেরও এইরকম ভয়াবহ অবস্থা হোক।
লিসার কাছে এলো গ্রে। আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?
লিসা ঢোঁক গিলল। দেখল মনক ব্যালড্রিকের মৃত দেহ সরাচ্ছে কিন্তু দেহের গায়ে স্পর্শ করছে না। শার্টের হাত ধরে টানছে সে। ব্যালড্রিকের শরীরের সাথে সরাসরি স্পর্শ করতেও ভয় পাচ্ছে মনক। পেইন্টার অনেক দূরে চলে গেছে। বেল-এর মাধ্যমে আমরা স্রেফ এই বিকেন্দ্রীকরণকে ঠেকিয়ে রাখা কিংবা গতি কমিয়ে রাখতে পারতাম। কিন্তু পুরোপুরি উল্টো ফলাফল তো আনা সম্ভব নয়। আপনি কী চান আপনাদের ডিরেক্টর এখনই মারা যাকঃ
যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। আমরা হাল ছাড়তে রাজি নই। নরম সুরে বলল গ্রে।
এরকম মিথ্যা আশার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গেল লিসা।
কিন্তু ব্যালড্রিকের ওপর ওর চোখ পড়ল। ধপ করে দুচোখ খুলল বুড়ো ওয়ালেনবার্গ। তার দুটো চোখ এখন দুধের মতো সাদা। ওগুলোকে পাথরের মতো স্থবির দেখাচ্ছে। মুখ হাঁ করে চিৎকার করতে চাইলেন ব্যালড্রিক কিন্তু তার কণ্ঠস্বর নষ্ট হয়ে গেছে। জিহ্বাও নেই। ভয় আর যন্ত্রণা ছাড়া তার ভেতরে আর কিছুই নেই এখন।
বুড়োর এই দশা দেখে চিৎকার করে উঠল লিসা। পেছাতে পেছাতে একেবারে কন্ট্রোল প্যানেলের সাথে গিয়ে ধাক্কা খেল। এতক্ষণে মনকের চোখেও পড়েছে বিষয়টা। ব্যালড্রিককে ব্লাস্ট চেম্বারের বাইরে ফেলে দূরত্ব বাড়াল সে।
পড়ে রইল বুড়ো ওয়ালেনবার্গ। তার পুরো শরীর নিশ্চল হলেও মুখটা বারবার খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। ভাঙায় ভোলা মাছ যেরকম পানির জন্য খাবি খায় অনেকটা সেরকম অবস্থা। দুটো অন্ধ চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছেন ব্যালড্রিক।
ব্যালড্রিক আর লিসার মাঝে এসে গ্রে দাঁড়াল। লিসার কাধ ধরল গ্রে। ড. কামিংস, ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকাল লিসা। ডিরেক্টর ক্রোর আপনার সাহায্য প্রয়োজন।
আমার করার মতো কিছুই… নেই।
আছে, অবশ্যই আছে। আমরা বেলকে ব্যবহার করতে পারি।
না, আমি পারব না। লিসার গলা চড়ে গেল। পেইন্টারকে আমি ওটা করতে পারব না।
আপনি যেমনটা ভাবছেন ওরকম হবে না। মনক বলল অ্যানা নাকি আপনাকে বেল পরিচালনা করা শিখিয়ে গেছেন। আপনি বেলকে একদম সর্বনিম্ন আউটপুটে সেট করবেন। যাতে ওখান থেকে প্রশমনকারী রেডিয়েশন বের হয়। একটু আগে এখানে যেটা হলো সেটা ভিন্ন বিষয়। কারণ ব্যালড্রিক বেলকে সর্বোচ্চতে সেট করেছিল যাতে সবাইকে খুন করতে পারে। তারপর তার অবস্থা কী হলো… যেমন কর্ম তেমন ফল।
দুহাতে মুখ ঢাকল লিসা। কিন্তু আমরা কী ফল পেতে চাচ্ছি? গুঙিয়ে উঠল বেচারি। পেইন্টার ওর জীবনের একদম শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওকে কেন আরও বেশি কষ্ট দেব?