বুড়ো ব্যালড্রিক। লিসা দেখল বুড়োর কয়েকটা আঙুল উন্মাদের মতো শিল্ডের দেয়াল আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। এখন আর তার পক্ষে শিল্ডের দেয়াল টপকে এপাশে আসা সম্ভব নয়। শিল্ডের দেয়াল উঠতে উঠতে সিলিঙে থাকা বৃত্তাকার অংশে মসৃণভাবে লেগে গেল।
ব্যালড্রিকের চিৎকার এখনও শোনা যাচ্ছে। উন্মাদের মতো চিৎকার করছেন তিনি।
হঠাৎ লিসা একটা শক্তির প্রভাব অনুভব করল। অনুভূতিটা কীরকম সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একটা ঝাঁকুনি… তারপর সব চুপ। নিশুতি সুনসান হয়ে গেল সব।
গুঙিয়ে উঠল পেইন্টার। ওর মাথা লিসার কোলে রাখা। ওকে পরীক্ষা করল লিসা। পেইন্টার চোখ দুটো উল্টে ভেতরে ঢুকে গেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস একদম অস্বাভাবিক। লিসা ওকে ঝাঁকুনি দিলো। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। হারিয়ে যাচ্ছে পেইন্টার।
মনক…!
.
বিকাল ৩টা ২৩ মিনিট।
গ্রে, তাড়াতাড়ি! রেডিওতে বলল মনক।
ফিওনার পিছু পিছু গ্রে পা চালালো। নিচে ফিউজের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে ওর বেশ দেরি হয়ে গেছে। মনক কেন এত তাগাদা দিচ্ছে তার কারণ পুরোটা না জানলেও আন্দাজ করতে পারছে গ্রে। পেইন্টার ক্রো রেডিয়েশনে আক্রান্ত আর তাকে সারিয়ে তোলার একমাত্র উপায় এই বেল।
ছয় তলার ল্যান্ডিঙের কাছাকাছি আসতেই পা ফেলার ভারি আওয়াজ ভেসে এলো। কিছুটা টলতে টলতে এগিয়ে আসছে কেউ। পিস্তল বের করল গ্রে। এবার?
বিশালদেহি এক ব্যক্তি হাজির হলো। তার শার্ট রক্তে ভিজে গেছে। সিঁড়ির ওপর প্রায় বসে পড়ল আগন্তক। মুখের এক পাশ থেকে গলা পর্যন্ত চিড়ে গেছে তার। একটা ভাঙ্গা কব্জি পেটের কাছে ধরে রেখেছে।
পিস্তল উঁচু করল গ্রে।
ফিওনা ওর পাশ কাটিয়ে সামনে এলো। না। ইনি তো আমাদের পক্ষে। নিচুস্বরে গ্রেকে বলল, অ্যানার ভাই।
বিশালদেহি চোখ তুলে তাকাল। ফিওনাকে চিনতে পেরেছে। ক্লান্ত থাকার পরও চোখ সরু করে সন্দেহ নিয়ে গ্রের দিকে তাকাল বেচারা। কিন্তু রাইফেল উঁচিয়ে সিঁড়ির পেছনের অংশ দেখাল সে। ঘোতঘোত করে বলল, Blockiert.
তার মানে এই বিশালদেহি ব্যক্তি নিজের রক্তের বিনিময়ে ওদের জন্য বাড়তি সময়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
ওরা তিনজন বেল চেম্বারের দিকে এগোলো। গ্রে জানে গানথারকে ওর বোন সম্পর্কে জানিয়ে রাখা ভাল। নইলে বেচারা খুব ধাক্কা খাবে। অ্যানা ওদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন তার শেষ কথাগুলো গানথারকে জানিয়ে দেয়া গ্রের দায়িত্ব। গানপারের কনুই স্পর্শ করল গ্রে।
অ্যানা…
গানথার ওর দিকে ঘুরল। ওর চোখে-মুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট। আন্দাজ করে নিয়েছে খারাপ কিছু হয়েছে হয়তো।
কঠিন কথাটা কীভাবে সহজভাবে জানাবে ভেবে পেল না গ্রে। অবশেষে সরাসরি জানিয়ে দিলো, তার চেষ্টার কারণে বাকি সবাই বেঁচে গেছে।
কথাটুকু শুনতে শুনতে গানধারের চলার গতি কমে গেল। রক্তক্ষরণ আর ক্লান্তি ওকে ধীর করতে পারেনি যতটা বোনের মৃত্যু সংবাদ করতে পেরেছে। ধীরে ধীরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ও।
গ্রেও থামল। তার শেষ কথাগুলো আপনার উদ্দেশে বলা। তিনি আপনাকে ভালবাসেন।
গানথার নিজের মুখ ঢেকে মেঝেতে শুয়ে পড়ল।
আমি দুঃখিত…সমবেদনা জানাল গ্রে।
দরজার সামনে মনক হাজির। গ্রে, এত সময় ধরে কী করছ? কোথায় ছিলে?… কিন্তু শোকে কাতর গানথারকে দেখে থামল ও। আর কিছু বলল না।
গ্রে মনকের দিকে পা বাড়াল।
ওদের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
.
বিকাল ৩ টা ২২ মিনিট।
শিল্ড নিচে নামান!
লিসা দেখল কমান্ডার পিয়ার্স ও মনক একসাথে চেম্বারে প্রবেশ করছে। মাথা নিচু করে রেখেছে দুজন। লিসা এখন বেল-এর কন্ট্রোল প্যানেলের ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিগত কয়েক মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে বেল কীভাবে পরিচালনা করতে হবে সেটা জানার চেষ্টা করেছে ও। ওদের পক্ষে থাকা লোকদের মধ্যে একমাত্র অ্যানা বেল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতেন। আপদকালীন সময়ে কাজে লাগতে পেরে ভেবে লিসাকে কিছু টিপস দিয়ে গেছেন তিনি। তবে লিসার ভয় ছিল ও হয়তো তালগোল পাকিয়ে ফেলবে। যা-ই হোক, অ্যানার কাছ থেকে শেখা বিদ্যা লিসা এখন কাজে লাগাচ্ছে।
শিল্ড! মনকের পাশ থেকে আবার হাক ছাড়ল গ্রে।
মাথা নেড়ে লিসা সুইচ চাপল।
গুঞ্জন হলো মোটরে। কন্ট্রোল প্যানেল থেকে ঘুরে তাকাল লিসা। ব্লাস্ট শিল্ড নামছে। বেল এখন শান্ত, তাই কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না। সিসার পাশেই একটা তেরপলের ওপর শুয়ে আছে পেইন্টার। ওর পাশে রয়েছেন ড. মারশিয়া। মশি আর মেজর রয়েছেন ডান দিকে। যমজ ভাইবোনের মৃতদেহ দুটোকে তেরপল দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন।
ওদের দাদুর কী খবর? ব্যালড্রিক?
শিল্ড আরও নিচে নামছে। কোমড় সমান হয়েছে এখন। চেম্বারের ঠিক মাঝখানে বেল চুপচাপ বসে আছে, আবার চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে ওটা। অ্যানার মুখে বেল সম্পর্কে যা শুনেছিল সেটা মনে পড়ে গেল লিসার। পরম কোয়ান্টাম পরিমাপক যন্ত্র। ভয়াবহ জিনিস। লিসা এই যন্ত্রটাকে খুব ভয় পায়।
বাঁ পাশে রয়েছে মনক। খামিশির কাছ থেকে রেডিও মেসেজ নিচ্ছে সে। জুলু যোদ্ধারা এস্টেটের দখল নিয়ে নিয়েছে। এর বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ওয়ালেনবার্গ গার্ডদেরকে তাড়িয়ে এনে ভবনে জড়ো করছে ওরা। সামনে আরেকটা বন্দুকযুদ্ধ হবে, নিশ্চিত।