যা করতে হবে জানিয়ো। একটা রেডিও বের করে গ্রের হাতে দিলো ও। যন্ত্রটা চলতে থাকুক। বাকিটা আমি দেখছি।
রেডিওটা হাতে নিয়ে সামনে এগোল গ্রে। ওর মনে হাজারটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু উত্তরগুলো পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। রেডিও চ্যানেল খোলা রাখল ও। বিভিন্ন শব্দ, কণ্ঠ, তর্কাতর্কি আর চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেল। পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে ওর দিকে। পেছন ঘুরল ও। ফিওনা।
আমিও তোমার সাথে যাব! দ্রুত এগোতে এগোতে চিৎকার করল বেচারি।
সিঁড়ি ধরে গ্রে নামতে শুরু করেছে।
একটা ট্রান্সমিটার বের করে ওটার অ্যান্টিনা বড় করল ফিওনা। যদি ওই = দানবগুলোর ভেতর দিয়ে তোমাকে এগোতে হয়…
নিজের কাছেই রাখো ওটা।
চুপ করো, তুমি!
বাকি পথটুকু ওরা দুজন একসাথে দৌড়াল। নিচের লেভেলের হলওয়েতে পৌঁছে ইউটিলিটি রুমের সামনে গেল ওরা।
মনক রেডিওতে কথা বলছে। অ্যানা আর বুড়ো শয়তানটা চেম্বারের ভেতরে ঢুকেছে। বুড়োটা বেজায় খোশ।
মনক… রসিকতা বাদ দিয়ে সহকর্মীকে কাজের কথা বলার জন্য তাগাদা দিলো গ্রে।
আমি অ্যানাকে রেডিওটা দিয়ে দিচ্ছি। তিনি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন। আর হ্যাঁ, তোমার হাতে সবমিলিয়ে আছে মাত্র ১ মিনিট।
মাথা নেড়ে গ্রে ইউটিলিটি রুমে দরজা ধাক্কা দিলো।
লকড।
ওকে আবার চেষ্টা করতে দেখে ফিওনা বলল, কি-কার্ড নেই?
ভ্রু কুঁচকানো গ্রে। ওয়েস্টব্যান্ড থেকে পিস্তল বের করে তালা বরাবর ফায়ার করল। পুরো হল কেঁপে উঠল গুলির শব্দে। যেখানে এতক্ষণ তালাটা ছিল ওখানে এখন একটা গর্ত দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ফেলল গ্রে।
ওর পিছু পিছু ফিওনাও ঢুকল। আমিও তাই ভাবছিলাম, কি-কার্ড না থাকলে পিস্তল দিয়েও কাজ চালানো যায়।
সামনে এগোতেই মোটর আর উপরে-নিচে ওঠানামা করার পিস্টন দেখতে পেল গ্রে। এই পিস্টনগুলোর সাহায্যেই ব্লাস্ট শিল্ড ওঠানো কিংবা নামানো হয়।
রেডিওতে একধরনের অদ্ভুত গুঞ্জন ভেসে এলো। গ্রে বুঝতে পারল বেল-এর কারণে হচ্ছে সেটা। মনক নিশ্চয়ই আমার কাছে রেডিও দিয়ে ফেলেছে।
ওর ধারণাকে সত্য প্রমাণ করতেই যেন গুঞ্জনের ভেতরে একটা নারী কণ্ঠ ভেসে এলো। জার্মান আর ডাচ ভাষায় কারিগরি বিভিন্ন দিক দিয়ে তর্ক হচ্ছে। রেডিওর ভলিউম বাড়িয়ে টিউন করল গ্রে। মোটরগুলোর কাছে চলে এসেছে ও। এমন সময় পরিষ্কার ইংরেজিতে নারী কণ্ঠ ভেসে এলো রেডিওতে।
কমান্ডার পিয়ার্স?
গলা পরিষ্কার করল গ্রে। বলুন…
তার গলায় ক্লান্তি। আপাতত হাত ব্যবহার করে আমরা কোনোমতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু এটা তো বেশিক্ষণ টিকবে না।
শক্ত করে ধরে থাকুন।
ইতোমধ্যে সমস্যাটা কোথায় হয়েছে সেটা খুঁজে পেয়েছে গ্রে। একটা পিস্টনের ফিউজ থেকে ধোয়া বেরোচ্ছে। গ্রে শার্টের এক অংশ দিয়ে ধরে ফিউজটাকে বের করল। ফিওনাকে বলল, আরেকটা ফিউজ লাগবে। এখানে কোথাও অতিরিক্ত ফিউজ থাকার কথা।
কমান্ডার, তাড়াতাড়ি করুন।
রেডিওর গুঞ্জন আরও বাড়তে শুরু করলেও ব্যালড্রিকের কণ্ঠ ঠিকই শোনা গেল এপাশ থেকে জরুরি ভিত্তিতে অ্যানার সাথে কথা বলছেন তিনি। … আমাদের সাথে যোগ দাও। আমরা দক্ষ লোকবল ব্যবহার করে আরেকটা বেল তৈরি করতে পারব।
ভয়ে সিঁটিয়ে থাকার পরও বুড়ো ভাম কূটচাল দিয়েই চলেছে।
ভাল করে কান পাতল গ্রে। অ্যানা কী ওদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে? ফিওনার দিকে ফিরল ও, ট্রান্সমিটারটা দাও তো।
ফিওনা ট্রান্সমিটার দিলো। ট্রান্সমিটার থেকে অ্যান্টিনা খুলে ফেলল গ্রে। বাড়তি ফিউজ খুঁজে বের করার মতো যথেষ্ট সময় নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। অ্যান্টিনা দিয়ে সংযোগ ঘটিয়ে দিলো। ফিউজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল, অ্যান্টিনা দিয়ে আপাতত সমস্যার সমাধান হলো। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় জুড়তেই উপরে-নিচে উঠতে শুরু করল পিস্টন।
রকেট সাইন্স নয়, স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধি খাঁটিয়ে সমস্যার সমাধান করল গ্রে।
অ্যানা, আপনি ও ব্যালড্রিক ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। গ্রে রেডিওতে বলল।
সম্ভব না, কমান্ডার। আমাদের যে-কোন একজনকে আঙুল রাখতে হবে নালায়। নালা থেকে আঙুল সরানো মাত্র বেল বিস্ফোরিত হবে।
চোখ বন্ধ করল গ্রে। কোনভাবেই ব্যালড্রিকের ওপর ভরসা করা যাবে না।
গুঞ্জন বেড়েই চলছে। কানের সহ্য ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
কমান্ডার, আপনি জানেন আপনাকে এখন কী করতে হবে।
অ্যানার কথা মতো কাজ করল গ্রে।
আবছাভাবে অ্যানার শেষ কয়েকটি কথা ভেসে এলো। আমার ভাইটাকে বলবেন… তাকে আমি ভালবাসি।
রেডিও নামাতে নামাতে আরও একটা কথা বললেন অ্যানা। কথাটা ব্যালড্রিকের প্রস্তাবের জবাব হতে পারে কিংবা পৃথিবীর উদ্দেশে কোনো বার্তা বা স্রেফ নিজের সষ্টির জন্য।
আমি নাৎসি নই।
.
বিকাল ৩টা ১৯ মিনিট।
পেইন্টারকে নিয়ে মেঝেতে বসে আছে লিসা। হঠাৎ ও মেঝেতে ভারি মেশিনের কম্পন টের পেল। সেইসাথে ওর সামনে থাকা শিন্ড উঠতে শুরু করল ওপর দিকে। নীল আলো ধীরে ধীরে শিল্ডের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
বসা থেকে উঠতে যাচ্ছিল লিসা। অ্যানা এখনও ভেতরে রয়েছেন। এমনকি মনকও পা বাড়িয়েছে শিল্ডের দিকে।
শিন্ডের ভেতর থেকে তীব্র আর্তনাদ ভেসে এলো।