কে থামানোর জন্য এগিয়ে এলেন অ্যানা। গানথার আস্তে করে বোনের হাত নিচে নামিয়ে দিলো। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে লিফটের দরজা। ঘুরে দাঁড়াল গানথার। এক হাতে পিস্তল, আরেক হাতে রাইফেল। শেষবারের জন্য মনকের দিকে তাকাল গানথার। ওর চোখ চুপচাপ একটা কথাই বলছে…
অ্যানাকে দেখে রাখবেন।
লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
.
বিকাল ৩টা ১৬ মিনিট।
মোটরসাইকেলে বসে মাথা নিচু করে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ছুটছে খামিশি। ওর পিছনে পলা কেইন বসে আছেন। তার কাঁধে রাইফেল শোভা যাচ্ছে। একজন জুলু যোদ্ধা আরেকজন ব্রিটিশ এজেন্ট, অদ্ভুত জুটি। কারণ উনিশ শতকে ইংরেজ আর জুলুদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল।
তবে সেটা অতীত।
এখন এরা দুজন এক টিমের হয়ে কাজ করছে। বোঝাপড়াও ভাল।
বায়ে! চিৎকার করলেন পলা।
খামিশি বাইক সরালো। কাঁধের এক পাশ থেকে অন্য পাশে রাইফেল সরালেন পলা। রাইফেল হাতে পৌঁছুতেই ফায়ার করলেন। এক ওয়ালেনবার্গ সেন্ট্রি চিৎকার করে পরপারে চলে গেল।
জঙ্গলের দুপাশে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
এস্টেটের গার্ডরা সব কোণঠাসা হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে।
হঠাৎ ওদের বাইকটা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে দশ একর বাগানের ভেতরে এসে পড়ল। ব্রেক চাপল খামিশি। নরম গুল্ম গাছের ভেতর দিয়ে বাইকটা স্কিড করে চলে যাচ্ছে।
সামনেই ওয়ালেনবার্গ ভবন।
গলায় ঝুলানো বাইনোকুলার চোখে লাগাল খামিশি। ছাদের হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার পার্ক করে রাখা আছে। কিন্তু ছাদের কিনারায় নড়াচড়া করছে কী যেন। পরিচিত একজনকে দেখতে পেল ও। তাউ। খামিশির জুলু বন্ধুটি ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে নিচের লড়াই পর্যবেক্ষণ করছে।
বাম পাশ থেকে একটা নতুন অবয়ব প্রবেশ করল। তাউ-এর ঠিক পেছনেই। নতুন আগম্ভকের হাতে একটা পাইপ ধরা। তাউ-এর মাথায় আঘাত হানতে যাচ্ছে সে। আগম্ভকের নাম: জেরাল্ড কেলজ।
নড়বেন না। বললেন পলা।
খামিশির মাথার ঠিক উপরে রাইফেলের নল রেখে স্নাইপার স্কোপের দিকে তাকালেন তিনি।
দেখতে পাচ্ছি, পলা জানালেন।
খামিশি একটু নিচু হলো তবে কাপলো না। এখনও বাইনোকুলার ধরে উপরে তাকিয়ে রয়েছে।
ট্রিগার চাপলেন পলা। রাইফেলের আওয়াজে খামিশির কানে তালা লাগার দশা। মাথায় ঝাঁকি খেয়ে কেলজ পেছনে আছড়ে বলল। গুলির আওয়াজে তাউ শুয়ে পড়েছে… আর একটু হলে ছাদ থেকে পড়েই যেত বেচারা। ও জানেও না এইমাত্র ওর জীবন বাঁচানো হয়েছে।
তাউর এরকম অবস্থা দেখে ভয় পেল খামিশি। তাউ নাহয় অল্পের জন্য বেঁচে গেল কিন্তু বাকিদের কী অবস্থা?
.
বিকাল ৩টা ১৭ মিনিট।
আপনি আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিলেন! একই কথা আবার বললেন ব্যালড্রিক।
কিন্তু যে হাল ছাড়তে নারাজ। ডিসচার্জ করা থেকে বেলকে আরও কিছুক্ষণ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব? তাহলে আমি বাড়তি কিছু সময় পেয়ে নিচে গিয়ে দেখতে পারতাম হাইড্রোলিক্সের কোথায় জ্যাম হয়েছে। শিল্ডের সমস্যাটা দূর করা যেত।
স্থির হয়ে থাকা ব্লাস্ট শিন্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন বৃদ্ধ ব্যালড্রিক। ওটার ওপর দিয়ে নীল আলো দেখা যাচ্ছে। বৃদ্ধের চেহারায় আতঙ্ক। একটা উপায় আছে, কিন্তু… কিন্তু…
কিন্তু কী?
কাউকে ভেতরে ঢুকতে হবে। হাতে থাকা লাঠিটাকে কাঁপতে কাঁপতে ব্লাস্ট চেম্বার দেখালেন বৃদ্ধ। সেইসাথে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলেন তিনি নিজে ভেতরে ঢুকতে নারাজ।
দরজা খোলার পর একটা কণ্ঠ ভেসে এলো। আমি যাব।
পিস্তল হাতে নিয়ে পাই করে ঘুরল গ্রে ও মারশিয়া।
রুমে সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণা হলো। প্রথমে মনককে দেখা গেল। কালো চুলের অধিকারিণী এক নারীকে সাহায্য করছে সে। কণ্ঠটা এই নারীর। ওদের দুজনের সাথে আরও কয়েকজনকে দেখা গেল, অধিকাংশই অপরিচিত। একজন বয়স্ক ব্যক্তি ক্লিন সেইভ করা এক মিলিটারি ধাচের ব্যক্তির কাঁধে ভর দিয়ে ঢুকলেন। তাদের পেছন পেছন ফিওনা ও একজন লম্বা দেহের অধিকারিণী নারী মূর্তির উদয় হলো। নারীকে দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র ম্যারাথন দৌড় শেষ করে এসেছেন। ওরা দুজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোককে সাহায্য করছে। এতক্ষণ লোকটি ওদের কাঁধের ওপর ভর দিয়ে মাথা নিচু করে থাকলেও কিন্তু এখন ধীরে ধীরে মাথা তুলে গ্রের সেই চিরচেনা নীল চোখ দেখতে পেল।
গ্রে… বিড়বিড় করে বলল সে।
গ্রে রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে। ডিরেক্টর ক্রো? দ্রুত এগোলো ডিরেক্টরের দিকে।
হাতে সময় নেই, বললেন কালো চুল। মনকের সহায়তায় তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তবে তাঁর অবস্থা পেইন্টারের চেয়ে ভাল। পরিচিত দৃষ্টিতে শিল্ড আর বেল দেখলেন তিনি। ভেতরে ঢোকার জন্য আমাকে সাহায্য করুন। আর উনাকেও আমার সাথে যেতে হবে। একটা কাঁপা হাত তুলে ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গকে দেখালেন তিনি।
গুঙিয়ে উঠলেন বৃদ্ধ। না…
ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন নারী। আপনি খুব ভাল করেই জানেন ভেতরে কাজ করার জন্য দুই জোড়া হাত প্রয়োজন।
কালো ব্যক্তির দিকে ফিরল মনক। মশি, আপনি অ্যানাকে নিয়ে ভেতরে যান। তারপর গ্রের দিকে ফিরল ও, আন্তরিকতার সাথে শক্ত করে হাত মিলাল। আরও ঘনিষ্ঠ হলো একে অপরের সাথে বুক মিলিয়ে।
আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই, মনকের কানে কানে বলল গ্রে। মনককে দেখে ও নতুন করে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে।