কেউ গুলি করবেন না! জরুরি ভিত্তিতে ফিসফিস করল মনক। সবাই ওই রুমে ঢুকুন! পাশের একটা দরজা দেখাল, ওখানে যেতে পারলে একটু সুবিধে করতে পারবে। আড়াল পাওয়া যাবে খানিকটা। অ্যানাকে নিয়ে এলো গানথার। বর্শা দিয়ে একটা দানবকে খতম করে জুলু সর্দার মশি সরে এলেন। মেজর ব্রুকসকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন তিনি। মেজরের উরু থেকে রক্ত ঝরছে। দানবটা গভীরভাবে কামড়ে দিয়েছে ওখানে।
ওরা সবাই রুমের দিকে এগোতে যাবে এমন সময় মনকের অপরপাশ থেকে হিংস্র গর্জন ভেসে এলো।
ওর নাম উচ্চারণ করল কেউ। মনক…
পেইন্টারের অজ্ঞান দেহের পাশে ঝুঁকে রয়েছে লিসা। ওদের দুজনের পেছনে একটা বিশালদেহি দানব উদয় হলো।
কাঁধ উঁচু করে দাঁড়াল ওটা, শিকার দুটোকে দেখছে। ঠোঁট দুটো পেছন দিকে সরে যাওয়া ধারাল দাঁতের চোয়াল প্রায় উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে ওটার। গরগর আওয়াজ করছে, রক্ত ও লাল ঝরছে ঠোঁট থেকে। চোখ দুটো টকটকে লাল।
মন বুঝতে পারল এখন ও যদি অস্ত্র ব্যবহার করতে যায় দানবটা সাথে সাথে পেইন্টার আর লিসাকে ছিঁড়ে ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলবে। কিন্তু তারপরও ওকে একটা চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু মনক আর কিছু ভাবার আগেই হলের পেছন দিক থেকে একটা নির্দেশ ভেসে এলো।
স্কাল্ড! না!
ঘুরল মনক। নির্দেশটা ফিওনা দিয়েছে। উদয় হলো সে। দুটো দানবের পাশ দিয়ে অবলীলায় হেঁটে চলে এলো ফিওনা, দানবগুলো অনেকটা বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে ওকে জায়গা করে দিলো। ফিওনার হাতে একটা টেজার দেখা যাচ্ছে, নীল ফুলকি দেখা যাচ্ছে ওতে। ওর অন্য হাতে আরেকটি জিনিস আছে, অ্যান্টিনাঅলা। অ্যান্টিনাটা লিসা ও পেইন্টারের পাশে থাকা দানবটার দিকে তাক করা।
ব্যাড ডগ! বলল ফিওনা।
মনক অবাক হয়ে লক্ষ করল, পিছিয়ে গেল দানবটা। গর্জন কমে গেল, এতক্ষণ দাঁত খিচাচ্ছিল এখন আর সেটা করছে না। দরজার দিকে সরে গেল ওটা। ওটার লাল টকটকে চোখে এখন আর আগের হিংস্রতা নেই। মেঝেতে শুয়ে পড়ল দানব। আনন্দের গোঙানি ছাড়ল।
ফিওনা এসে গেছে।
হলের দিকে তাকাল মনক। সবকটা হায়েনা একদম কুপোকাত।
ওয়ালেনবার্গরা এই হারামিগুলোর ভেতরে চিপ বসিয়ে রেখেছে, ব্যাখ্যা করল ফিওনা, হাতে ধরা ডিভাইসটা দেখিয়ে বলল, এটা দিয়ে দুটো অপশন সিলেক্ট করা যায়। হিংস্র আর ভদ্র।
দরজার কাছে থাকা একটা দানব মিউ মিউ করে বশ্যতা প্রকাশ করছে।
ভ্রু কুঁচকে ফিওনার হাতে থাকা ট্রান্সমিটারের দিকে তাকাল মনক। এটা কোথায় পেয়েছ?
ফিওনা মনকের দিকে চোখ তুলে তাকাল, ডিভাইস ধরা হাতে তুলে ওর পিছু পিছু আসতে ইশারা করল ওদের।
চুরি করেছ, বলল মনক।
ফিওনা কাঁধ ঝাঁকিয়ে হলের দিকে পা বাড়াল। এক বুড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম, পরে দেখি এই ডিভাইসটা আমার পকেটে চলে এসেছে। বুড়ি এটা ব্যবহার করছিল না।
মন ভাবল, বুড়ি বলতে ফিওনা ইসকিকে বোঝাচ্ছে। সবাইকে ডেকে নিলো ও। লিসা আর পেইন্টারকে সাহায্য করল মনক। ওদিকে গানথার বোনের এক হাত ধরে সামনে এগোতে শুরু করেছে। একে অন্যের সাহায্য নিয়ে এগোচ্ছে মশি আর ব্রুকস। প্রাথমিকভাবে তাদের আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে।
সমস্যা নেই, ব্যাকআপ আছে।
এক ডজন দানব এগিয়ে আসছে ওদের পিছু পিছু। আসলে ওরা এখন ফিওনাকে প্রভু মানছে।
এদেরকে পিছু ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি, পারিনি বলল ফিওনা। মনক খেয়াল করল বেচারির হাত কাঁপছে। দানবগুলোকে যতই পোষ মানাক ভয় ঠিকই পাচ্ছে ফিওনা।
বাটন চাপ দেয়ার পর থেকে আমার পিছু নিয়েছিল ওরা। আমি ওদেরকেসহ একটা জায়গায় গিয়ে লুকিয়েছিলাম, গ্রে আমাকে সেখানে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে বলেছিল… কিন্তু তারপরও হলে আর বিভিন্ন রুমে কয়েকটা দানব ছিল।
খুব ভাল কথা! ভাবল মনক। একদম সেই কয়েকটা দানবের খপ্পরে এসে পড়লাম আমরা!
তারপর আমি আপনাদের চিৎকার আর বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পাই। তারপর…
বেশ। মনক ফিওনাকে থামিয়ে দিলো। গ্রের কী খবর? সে কোথায়?
নিচ দিকে যাওয়ার জন্য লিফটে চড়েছিল। সেটাও এক ঘণ্টা আগের কথা। সামনের দিকে দেখাল ও। ওখানে করিডোর শেষ হয়ে বেলকুনিতে রূপ নিয়েছে। বড় একটা হল দেখা যাবে ওখান থেকে। চলুন দেখাচ্ছি।
দ্রুত এগোল ফিওনা। পেছন পেছন বাকি সবাই এগোচ্ছে, বারবার পেছনে ফিরে দেখছে দানবগুলোকে। ফিওনা এক সারি সিঁড়ি বেয়ে নিচের মূল হলে নিয়ে এলো ওদের। লিফটের দরজাগুলো বন্ধ, ওটার ঠিক বিপরীত দিকে ওয়ালেনবার্গ ভবনের বিশাল সদর দরজা অবস্থান করছে।
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ইলেকট্রনিক লকের দিকে এগোল মেজর ব্রুকস। একগাদা কি কার্ড পাঞ্চ করল… কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অবশেষে একটা কার্ড কাজ করল। লাল বাতি সরে গিয়ে সবুজ হলো। মোটরের আওয়াজ ভেসে এলো কোথা থেকে। নিচের কোথাও থেকে কিছু একটা সরে যাচ্ছে।
অপেক্ষা করছে ওরা। তখন দেখা গেল হায়েনাগুলোও সিঁড়িতে এসে হাজির হয়ে গেছে। ফিওনার হাতে থাকা ডিভাইসে বুঁদ হয়ে আছে ওগুলো। হলের মেঝেতে চলে এলো কয়েকটা। দানবগুলোর ভেতরে সেই স্কাল্ড নামের হায়েনাটাও আছে।
কেউ কিছু বলল না, চুপচাপ দেখছে দানবগুলোকে।
মূল ভবনের দরজার ওপাশ থেকে চিৎকার আর গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। লড়াইয়ে নেমে পড়েছে খামিশি। এখানে পৌঁছুতে ওর কতক্ষণ লাগতে পারে?