তবে গ্রে তাকায়নি।
গ্রের দৃষ্টি আটকে রয়েছে কনসোলে থাকা পাওয়ার মিটারের ওপর। ওটার ইনডিকেটর আস্তে আস্তে উপর দিকে উঠে যাচ্ছে। গ্রের আকুতি ব্যালড্রিক কানে নেননি। বেল চালু করেছেন তিনি। বেল-এর চারপাশ থেকে গুঞ্জন ভেসে আসছে। ভিডিও মনিটরে দেখা যাচ্ছে নীল হয়ে গেছে বেল-এর বাইরের শেল।
পাওয়ার মিটার তার সর্বোচ্চে পৌঁছে গেলে এই বেল থেকে যে আউটপুট বেরোবে সেটা ছড়িয়ে যাবে ৫ মাইল। মনক, ফিওনা, রায়ান… যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন মারা পড়বে ওরা। শুধু গ্রে নিরাপদ।
কী হচ্ছে গিয়ে দেখো তো, নাতিকে নির্দেশ দিলেন ব্যালড্রিক। বিস্ফোরণের শব্দ এখন মিলিয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে লাল ফোনের দিকে হাত বাড়িয়েছে ইসাক।
হঠাৎ পিস্তলের শব্দে সবাই চমকে উঠল। বিস্ফোরণের শব্দ থেমে যাওয়ার পর সবকিছু মাত্র সুনসান হচ্ছিল ঠিক এমন সময় এরকম বিকট আওয়াজে সবাই বিস্মিত।
অন্যদিকে ঘুরল গ্রে, টাইলসের মেঝেতে রক্ত ছিটকে পড়েছে।
তাজা রক্তে লাল টকটকে হয়ে গেছে ইসকির বা কাঁধ। গুলির ধাক্কায় সে-ও ঘুরে উঠেছে। পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে ওকে। দুর্ভাগ্যবশত ইসকির ডান হাতে পিস্তলটা ধরা ছিল। গুলির ধাক্কা খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে আততায়ীর দিকে নিজের পিস্তল তাক করল ইসকি।
হাঁটু গেড়ে বসে আছেন ড. মারশিয়া ফেয়ারফিল্ড। ডান হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় বাধ্য হয়ে বা হাত দিয়ে গুলি ছুঁড়েছেন। তাই এক গুলিতে ইসকিকে পরপারে পাঠাতে পারেননি।
তবে ইসকি কঠিন চিজ। আচমকা গুলিতে আহত হয়েও তেজ কমেনি কিংবা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার দক্ষতা হারায়নি। গ্রে শেষমুহূর্তে বাধা না দিলে নিখুঁতভাবে সে আঘাত করতে পারতো।
ইসকির গুলিতে মারশিয়ার হাত থেকে পিস্তল ছুটে গেল। এদিকে গ্রের ধাক্কার ফলে ইসকির হাতেও পিস্তল নেই।
ইসকি ও মারশিয়া দুজনই তাদের টার্গেট মিস করেছে।
ইসকিকে ভালুকের মতো পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে গ্রে। মারশিয়ার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে। কিন্তু ইসকি অত্যন্ত তেজি, সে বুনো বেড়ালের মতো লড়ছে। গ্রে কোনোমতে ইসকির ডানহাতটাকে বাগে আনতে পারল।
হাতে জার্মান স্টিলের ছোরা নিয়ে সামনে এগোলো ইসাক। হাতের ছোরাটা নিচু করে ধরে রেখেছে।
মারশিয়া ইতোমধ্যে নিজের পিস্তল কুড়িয়ে নিয়েছেন কিন্তু গ্রে আর ইসকির ধস্তাধস্তির জন্য ইসাককে গুলি করার মতো ক্লিন শট পাচ্ছেন না।
ইসকির কাঁধের আহত অংশে নিজের থুতনি শক্ত করে গ্রে ঠেসে ধরল। গুঙিয়ে উঠল ইসকি, একটু দুর্বল হয়েছে। পড়ে থাকা পিস্তলটা হাতে তুলে নিতেই গ্রে ওর হাত তুলে নিয়ে আঙুলগুলো মুচড়ে দিলো। গুলি বেরিয়ে গেল পিস্তল থেকে। কিন্তু নিচ দিকে তাক করা থাকায় বুলেট কারও গায়ে লাগলো না। ইসাকের পায়ের কাছে মেঝেতে গিয়ে মুখ খুঁজল সেটা। তবে গুলির আঘাতে মেঝে থেকে কয়েক টুকরো টাইলস ছিটকে গিয়ে ইসাকের কয়েক জায়গার চামড়া তুলে নিয়েছে। সামনে এগোতে গিয়ে ইসাক একটু দুলে উঠল।
ভাইকে আঘাত পেতে দেখে আরও মারমুখী হয়ে উঠল ইসকি। ক্ষীপ্রতার সাথে এক হাত ঘুরিয়ে কনুই দিয়ে আঘাত করল গ্রের পাজরে। হুক করে গ্রের ফুসফুস থেকে সব বাতাস বেরিয়ে গেল, চোখে লাল-নীল ফুটকি দেখতে লাগল ও। ইসকি এখন মুক্ত।
ওদিকে ইসাক নিজেকে সামলে নিয়েছে। চোখে ধুনের নেশা আর হাতে ছোরা নিয়ে এগিয়ে আসছে সে।
গ্রে-ও নিজেকে সামলে নিলো। পেছন থেকে ইসকিকে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা মারল ও। গ্রের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে আহত ইসকি তখনও পুরোপুরি টাল সামলে উঠতে পারেনি উপরন্ত এখন গ্রের ধাক্কা খেয়ে রীতিমতো উড়ে যেতে লাগল ইসাকের দিকে।
একদম ইসাকের ছোরার দিকে।
মুহূর্তের মধ্যে জার্মান স্টিল ব্লেড এসে ইসকির বুকে বিধল।
ব্যথায় গগণ বিদারি চিৎকার করল ইসকি। ইসাকও চিৎকার করে উঠল। অবিশ্বাস নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকাল বোন, হাত থেকে পড়ে গেল পিস্তলটা।
ইসকির হাত থেকে পিস্তলটা ভূমিতে আছড়ে পড়ার আগেই ঝাঁপ দিয়ে ওটাকে তালুবন্দি করল গ্রে। মেঝেতে শুয়ে থেকেই ইসাককে টার্গেট করল।
ইসাক সরে যেতে পারতো, ওর সরে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু বোনকে আঁকড়ে ধরে সে বেদনায় কাতর।
ফায়ার করল গ্রে। একদম ক্লিন হেডশট। ইসাকের মগজে গুলি পৌঁছে গিয়ে ওকে বোনের মৃত্যুশোক থেকে রেহাই দিলো।
মেঝেতে আছড়ে পড়ল যমজ ভাই-বোন। একে অন্যের রক্তে মাখামাখি।
উঠে দাঁড়াল গ্রে।
রুমে ঢুকলেন মারশিয়া, ব্যালড্রিকের দিকে পিস্তল তাক করেছেন তিনি।
বৃদ্ধ তার মৃত নাতি-নাতনির দিকে চেয়ে রয়েছেন। কিন্তু তার চোখে কোনো শোক নেই।
পুরো লড়াইটা হতে এক মিনিটেরও কম সময় লেগেছে।
গ্রে লক্ষ করল রেড জোনে প্রবেশ করেছে বেল-এর পাওয়ার মিটার। ওর হাতে হয়তো আর বড়জোর দুই মিনিট আছে। পিস্তলের গরম মাজল বৃদ্ধ ব্যালড্রিকের গালে ঠেসে ধরল ও। বন্ধ করতে বলেছি।
ওর চোখে চোখ রাখলেন বৃদ্ধ। করব না।
.
বিকাল ৩ টা ১৩ মিনিট।
বিস্ফোরণের আওয়াজ মিলিয়ে যেতেই ওয়ালেনবার্গ ভবনের উপরের হলওয়েতে থাকা স্থবিরতা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করল। বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনে কতগুলো দানবাকার হায়েনা শুয়ে পড়েছিল মেঝেতে, কয়েকটা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেলেও বাকিগুলো ঠিকই শিকার ধরার আশায় রয়ে গেছে। এক এক করে উঠে দাঁড়াতে শুরু করল হায়েনাগুলো।