তেরপল দিয়ে ঢাকা একটা পয়োনালীর ভেতরে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে খামিশি।
তিন মিনিট, বললেন পলা কেইন, তিনিও পেটে ভর দিয়ে শুয়ে আছেন।
ওরা দুজন বাইনোকুলার দিয়ে কালো বেড়ার ওপর নজর রাখছে।
পার্কের সীমানা দিয়ে খামিশি ওর জনবল ছড়িয়ে দিয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে গরু চড়াচ্ছে কিছু জুলু পোক। বংশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে রয়েছেন একঝাক বয়স্ক জুলু। গ্রামে উচ্চশব্দে ঢোল বাজিয়ে গান-বাজনা শুরু হয়ে গেছে। স্টেশনের দিকে এগোচ্ছে তারা। শত্রুপক্ষের চোখে ধুলো দেয়ার জন্য পুরো আয়োজনটাকে বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো করে সাজানো হয়েছে।
মোটরসাইকেল, এটিভি বাইক এবং ট্র্যাক জড়ো করা হয়েছে এলাকার আশেপাশে। অল্পবয়স্ক জুলু যোদ্ধা ও নারীরা পর্যন্ত উঠছে সেগুলোতে। কয়েকজন জুলু দম্পতি যুদ্ধের আগে একে অপরকে শেষবারের তত দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গন করছে। যুদ্ধে কী হবে সেটা তো কেউ জানে না। একঝাক জুলু খালি গায়ে রং-চং মেখে বিয়ের অনুষ্ঠানের ভেক ধরেছে, হাতে গদা নিয়ে ঐতিহ্যবাহী নাচও করছে তারা। বাকি লোকজনরা যে যার মতো করে তৈরি হচ্ছে। কয়েকজনের গায়ে ভারি কম্বল, এটাও বিয়ের ঐহিত্যবাহী পোশাকের অন্তর্ভুক্ত।
এই গদাগুলো ছাড়া আর কোনো অস্ত্র চোখে পড়ছে না।
খামিশি বাইনোকুলারের ফোকাস ঠিক করে নিলো। কাঁটাতারের বেড়া দেয়া অংশে নজর দিলো ও। বেড়ার ওপাশে জঙ্গলের সামিয়ানার ওপরে ঝুলন্ত রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। ওয়ালেনবার্গ এস্টেটের গার্ডরা সেই রাস্তার ওপর এসে জড়ো হয়ে বেড়ার দিকে নজর রাখছে। পাহারা দিচ্ছে সীমানার ওপর।
এক মিনিট, তেরপলের নিচে একটা স্নাইপার নিয়ে শুয়ে আছেন পলা। তবে স্নাইপারটাকে বসানোর যে ট্রাইপড স্ট্যান্ড ব্যবহার করেছেন সেটা তেরপলে ঢাকা নেই। গাছের ছায়ার আড়ালে রয়েছে সেটা। পলা কেইন অলিম্পিকে সোনা জেতা শুটার, বিষয়টা জানতে পেরে খামিশি অবাক না হয়ে পারেনি।
বাইনোকুলার নামাল খামিশি। জুলুদের ঐতিহ্যবাহী আক্রমণকে ড় বলা হয়। আক্রমণের বড় অংশের নাম বুক, এই অংশ একদম মুখোমুখি হামলায় অংশ নেবে। অন্যদিকে ষাড়ের শিং নামের অংশটি আক্রমণ করবে দুপাশ থেকে। শত্রুপক্ষের কেউ যাতে পালিয়ে ফিরতে না পারে সেটা নিশ্চিত করবে। দুপাশ দিয়ে গিয়ে ঘিরে ফেলবে শত্রুদের। তবে আধুনিক অস্ত্রের সাহায্যে খামিশি এই যুদ্ধকৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। সেই পরিবর্তন আনতে গিয়ে সারারাত ঘুমায়নি বেচারা। শত্রুপক্ষের জন্য চমক রেখেছে ও।
দশ সেকেন্ড, ঘোষণা করলেন পলা। তারপর চুপচাপ উল্টোদিকে শুনতে শুরু করলেন। স্নাইপারে গাল ঠেকালেন তিনি। সময় হলে ফায়ার করবেন।
ট্রান্সমিটার তুলে নিলো খামিশি, চাবি ঘুরিয়ে এক সারি বাটনের ওপর নিজের বুড়ো আঙুল রাখল।
জিরো, পলা গোনা শেষ করলেন।
প্রথম বাটনে চাপ দিলে খামিশি।
সারারাত জেগে বেড়ার ওপাশে খামিশি যেসব চার্জ সেট করে এসেছিল সেগুলোর একটা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো। ঝুলন্ত ব্রিজের কাঠের তক্তা উঠে গেল শূন্যে, বিস্ফোরণের আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে জঙ্গলের সব পাখি আকাশে ডানা মেলল। বিভিন্ন রঙের পাখিকে একসাথে উড়তে দেখে মনে হলো রংধনু ছড়াচ্ছে।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে পাওয়া সি-৪ প্যাকেট সেট করেছিল খামিশি। ঝুলন্ত ব্রিজের বিভিন্ন সংযোগস্থল আর পোলের গায়ে বসিয়েছিল ওগুলো। একে একে সব বিস্ফোরক ফাটতেই পুরো ব্রিজ ধসে পড়ল। ওয়ালেনবার্গ গার্ডদের মধ্যে একই সাথে ভয়, আতঙ্ক ও দ্বিধা জেগে উঠেছে। দিশেহারা হয়ে পড়ছে তারা।
এবার বিয়ের অনুষ্ঠানের সাজে থাকা জুলুরা তাদের আসল চেহারা প্রকাশ করতে শুরু করল। গায়ে থাকা কম্বল ফেলে রাইফেল বের করল তারা। যার আছে যা অস্ত্র লুকোনো ছিল সব একযোগে যার যার হাতে চলে এলো। হামলা করার জন্য ষাড়ের বুক-এ রূপান্তরিত হয়ে গেল তারা। তাদের দুপাশ থেকে গর্জে উঠল ইঞ্জিন। জুলু যোদ্ধারা মোটরবাইক আর ট্রাক নিয়ে হামলার জন্য তেড়ে যাচ্ছে। এরা হলো ড়ের শিং।
এবার, বললেন পলা।
খামিশি ওর হাতে থাকা ট্রান্সমিটারের অন্য বাটনগুলোতে চাপ দিলো।
বিস্ফোরিত হয়ে কাঁটাতার দেয়া বেড়া ধুলোয় মিশে গেল, পুরো আধা মাইল। বেড়া সরে যেতেই যেন শত্রুপক্ষের পেট উন্মুক্ত হয়ে গেল।
তেরপল সরিয়ে উঠে দাঁড়াল খামিশি। ওর পেছনে থাকা একটা মোটর সাইকেল চালু হয়ে এগিয়ে এলো। ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে এসে থামল ওর পাশে। নজঙ্গো ওকে বাইকে উঠতে বলল কিন্তু তার আগে খামিশিকে একটা কাজ সারতে হবে। একটা সাইরেন হর্ন মাথার ওপর তুলে ওটার ট্রিগার টিপল ও। বিকট আওয়াজ বেরোল হর্ন থেকে। সাইরেন হর্নের আওয়াজ পুরো এলাকা কাঁপিয়ে দিলো। জানিয়ে দিলো জুলুদের ষাঁড় শিং উঁচিয়ে ধেয়ে আসছে।
.
বিকাল ৩ টা ১৩ মিনিট।
বিস্ফোরণের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়ে নেমে এলো ওপর থেকে। বেল চেম্বারে থাকা লাইটগুলোর আলো দপদপ করে কেঁপে উঠল। একদম স্থির হয়ে গেল সবাই। নাতি ইসাককে নিয়ে ব্যালড়িক কন্ট্রোল বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একটু দূরে ইসকি গ্রেকে পাহার দিচ্ছে, ওর হাতে একটা পিস্তল, একদম গ্রের বুকের দিকে তাক করা। উপর দিকে তাকাল ইসকি। কীসের শব্দ বোঝার চেষ্টা করছে।