ব্রুকস ও মশি মূলভবনে যাওয়ার জন্য ছাদের দরজার দিকে এগোলো। ওদের দুজনের কাঁধে রাইফেল শোভা যাচ্ছে। দুজন এত গোছানোভাবে কাজ করছে যেন একে অন্যের কত চেনা, এর আগেও একসাথে মিশন পরিচালনা করেছে! সুন্দর বোঝাপড়া আছে মেজর আর মশির মধ্যে। গানথারের হাতে পিস্তল আছে, এছাড়া খাটো নাকতলা একটা রাইফেল শোভা পাচ্ছে পিঠে। অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওরা দরজার কাছে পৌঁছে গেল।
সামনে এগোল ব্রুকস। সেন্ট্রিদের কাছ থেকে কি-কার্ড সংগ্রহ করেছে সে। লক খুলে। নিচের দিকে এগোল দুজন : মশি ও ব্রুকস। বাকিরা দাঁড়িয়ে রইল।
ঘড়ি দেখল মনক। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে হবে। টাইমিংটাই আসল।
নিচ থেকে শিস দেয়ার আওয়াজ শোনা গেল।
সংকেত।
এবার আমরা নিচে যাব। বলল মনক।
সামনে এগিয়ে ওরা দেখল সাত তলায় একটা সিঁড়ি চলে গেছে। ল্যান্ডিঙে দাঁড়িয়ে আছে ব্রুকস। আরেকটা গার্ড পড়ে আছে সিঁড়িতে। গলা ফাঁক হয়ে রয়েছে তার, গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে। মশি পরবর্তী ল্যান্ডিঙে নিচু হয়ে বসে রয়েছেন, হাতে রক্তাক্ত ছুরি।
সিঁড়ি বেয়ে নামছে সবাই। প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে নেমে গেছে সিঁড়িটা। আর কোনো গার্ডের মুখোমুখি হতে হলো না ওদের। ওরা আশা করল, অধিকাশং গার্ড বাইরের দিকে রওনা হয়েছে। কারণ, জুলু গোত্রের লোকজন দৃষ্টিআকর্ষণ করেছে তাদের।
মনক আবার ঘড়ি দেখল।
তিন তলায় পৌঁছে পালিস করা কাঠের লম্বা করিডোরের দিকে এগোল ওরা। করিডোরটা ছায়াময়, বেশ অন্ধকার। দেয়ালে মোমদানি জ্বলছে। পাওয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হয়তো মোম জ্বালানো হয়েছে। কোনো এক কারণে পাওয়ার বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা এমনকিছু চালু করা হয়েছে যেটা অনেক পাওয়ার গ্রহণ করছে।
বাতাসের দুর্গন্ধটা খেয়াল করল লিসা।
একটা আড়াআড়ি ক্রস প্যাসেজে গিয়ে করিডোরটা শেষ হয়েছে। ডান দিকে এগোল ব্রুকস। পরিকল্পনা মতে, ওদেরকে ডান দিকেই যেতে হবে। একটু পরেই দ্রুত ফিরে এলো মেজর।
পিছু হটুন… পিছু হটুন সবাই!
কোণা থেকে রক্তহিম করা গর্জন ভেসে এলো। তারপর আরও কয়েকটা গর্জন… উত্তেজিত হুঙ্কার।
উকুফা। বললেন মশি। ইশারা করে সবাইকে পিছু সরতে বললেন।
দৌড়ান! মেজর বলল। আমরা ওগুলোকে ভয় পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা করব, তারপর এগোব।
লিসা ও পেইন্টারকে নিয়ে মনক পিছু হটল।
কী…? লিসা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও আটকে গেল। শব্দ হারিয়ে ফেলেছে। কেউ আমাদের উপরে ওগুলোকে লেলিয়ে দিয়েছে, বলল মনক।
অ্যানাকে নিয়ে চলছে গানথার। বোনকে রীতিমতো উঁচু করে নিচ্ছে সে, অ্যানার পা দুটো আলগোছে মেঝে স্পর্শ করছে।
হঠাৎ ওদের পেছনে বন্দুকের আওয়াজ শোনা গেল।
গর্জন আর হুঙ্কারগুলো পরিণত হলো রাগ আর আর্তনাদে।
দ্রুত দৌড়াল ওরা।
ধুর! গলা উঁচিয়ে বলল মেজর।
লিসা পেছন ফিরে তাকাল।
ব্রুকস আর মশি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু এখন পেছন দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে তারাও ওদের দিকে এগিয়ে আসছে।
যান, এগোন… তাড়াতাড়ি… চিৎকার করল মেজর। সংখ্যায় ওগুলো অনেক!
ওদের পেছনে তিনটে সাদা রঙের দানব উদয় হলো। মেঝের সাথে মাথা ঠেকিয়ে এগোচ্ছে ওগুলো। থাবা দিয়ে কাঠের মেঝে আকড়ে ধরে এগোচ্ছে। বুলেট হজম করছে ঠিকই কিন্তু বুদ্ধি খাঁটিয়ে মারাত্মক বুলেটগুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছে, ওগুলো গায়ে ঢুকলে মারা পড়তো। দানব তিনটার শরীর থেকে রক্ত ঝরলেও নিস্তেজ হওয়ার বদলে উল্টো আরও জেদ নিয়ে এগিয়ে আসছে।
পেছনে তাকানো অবস্থায় একটু চোখ বুলালো লিসা। দেখল ওরকম আরও দুটো দানব করিডোরের দুপাশ থেকে বেরিয়ে আসছে।
অ্যামবুশ। হামলা।
হাতে থাকা বিশাল পিস্তল থেকে গানথার গুলি ছুড়ল কিন্তু সামনে এগিয়ে থাকা দানবটার গায়ে গুলি লাগলো না। গুলির লাইন বরাবর থেকে হঠাৎ করে চোখের পলকে একপাশে সরে গেল দানবটা।
নিজের অস্ত্র তুলল মনক, দানবগুলোকে থামানোর চেষ্টা করবে।
দৌড়ের গতি সামলাতে না পেরে হাঁটু গেড়ে পড়ে গেল লিসা। পড়ার সময় পেইন্টারকেও টেনে নামালো। আছড়ে পড়ার ধাক্কায় একটু জ্ঞান ফিরল ক্রোর।
কী…? কোথায়…?
পেইন্টারকে টেনে আরও নিচে নামাল লিসা। গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। নিচু হয়ে থাকাই নিরাপদ।
তীক্ষ্ণ আর্তচিৎকার ভেসে এলো ওর পেছন থেকে। ভারি দেহের কিছু একটা পাশের দরজা থেকে বেরিয়ে এসে মেজর ব্রুকসকে দেয়ালে আছড়ে ফেলল।
দৃশ্যটা দেখে চিৎকার করে উঠল লিসা।
মেজরকে বাঁচাতে মশি এগিয়ে এলেন। মাথার উপরে একটা বর্শা নিয়ে হুঙ্কার দিলেন তিনি।
ভয়ে লিসা পেইন্টারকে জড়িয়ে ধরল।
দানবগুলো সবজায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে।
লিসার চোখে কিছু একটা নড়াচড়া ধরা পড়ল। বাঁ পাশের একটা দরজার পেছন থেকে আরেকটা দানব বেরিয়ে আসছে। ওটার মুখ তাজা রক্তে মাখামাখি। রুমের অন্ধকারের ভেতরে ওটার লাল টকটকে দুটো চোখ যেন ইট ভাটার মতো জ্বলছে। অতীতে ফিরে গেল সিসা। এরকম চোখ ও আগেও দেখেছে। নেপালে বুদ্ধ সন্ন্যাসীর চোখে ঠিক এরকম ভয়ঙ্কর বুনো চাহনি ছিল, চাহনিতে অস্বাভাবিকতা থাকলেও বুদ্ধি কিংবা চালাকিতে কেউ-ই কম নয়। বুদ্ধ সন্ন্যাসী আর এই দানব দুটোই জাতে মাতাল তালে ঠিক।
দানবটা লিসার দিকে এগোচ্ছে… পেছন দিকে বেঁকে রয়েছে ওটার ঠোঁট দুটো। গরগর আওয়াজ করে বিজয়ের উল্লাস প্রকাশ করছে।
১৫. হর্নস্ অফ দ্য বুল
বিকাল ৩টা ১০ মিনিট।
সাউথ আফ্রিকা।