কপ্টারের পাখার প্রকোপ থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাথা নিচু করল মনক, কপ্টারের চারপাশে একটা চক্কর দিয়ে এলো। অপরদিকে খামিশি ও মশি পাশাপাশি একে অন্যের কনুই ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছেড়ে মশি এখন খাকি পোশাক পরেছেন। তাঁর মাথায় ক্যাপ আর কাঁধে অটোমেটিক রাইফেল শোভা যাচ্ছে। কালো বেল্টে একটা পিস্তলও রেখেছেন তিনি। তবে গোত্রীয় ঐতিহ্য পুরোপুরি শ্রাগ করেননি। একটা খাটো বর্শা আছে তার পিঠে।
আপনাদেরকে তো ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, মনক এদিকে আসতেই খামিশিকে বললেন মশি।
জি, জনাব।
মাথা নেড়ে খামিশির কনুই ছাড়লেন মশি। তোমার সম্পর্কে অনেক ভাল কথা শুনেছি, ফ্যাট বয়।
মনক ওদের সাথে যোগ দিলো। ফ্যাট বয়? মানে কী?
খামিশির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। একই সাথে লজ্জা ও সম্মানের ছাপ পড়েছে ওর চোখে। মাথা নেড়ে পিছু হটল সে। মশি হেলিকপ্টারে চড়লেন। হামলার প্রথম ধাপে থাকছেন তিনি। মনকের এখানে করার কিছু নেই। মশিকে সুযোগটা দেয়া ছাড়া ওর হাতে বিকল্প কোনো রাস্তা ছিল না।
পলা কেইনের দিকে গেল খামিশি। ওরা দুজন ভূমিতে হামলা পরিচালনা করবে।
ধুলো-বালির ভেতর দিয়ে চোখ বুলাল মনক। জনবল সব জড়ো হচ্ছে। পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে, মরিচা ধরা মোটরসাইকেলে আর ট্রাকে করে আসছে সবাই। মশির ঘোষণা শুনে জুলু গোত্রের লোকজন হাজির হচ্ছে। পূর্বপুরুষ বিখ্যাত সাকা জুলুর মতো মশি-ও একদল সেনাবাহিনি জড়ো করে ফেলেছেন। নর-নারী সবাই আছে এতে। সবার পরনে ঐতিহ্যবাহী জুলু পোশাক। এছাড়াও আরও জনবল আসছে।
এস্টেট দখল করার জন্য ওয়ালেনবার্গ আর্মিদের সাথে লড়বে ওরা। জুলু বনাম আধুনিক সিকিউরিটি ফোর্সদের লড়াইটা কেমন হবে? সামনে কী আরেকটা রক্তাক্ত নদীর পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে? আগেভাগে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। মোকাবেলা করার পরই সেটা জানা যাবে।
কপ্টারের পেছনের জনবহুল অংশে উঠল মনক। মেজর ব্রুকসের পাশে মশি বসেছেন। অ্যানা, লিসা আর পেইন্টারের ঠিক বিপরীত পাশের বেঞ্চে বসে আছেন তারা। আরও একজন আছে এখানে। অর্ধ-নগ্ন জুলু-তাউ। কপ্টারের কো-পাইলটের গলায় বর্শার ফলা ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে ও।
বাধাবস্থায় প্রধান ওয়ার্ডেন জেরাল্ড কেলজ বসে আছেন গানথারের পাশে। তার এক চোখ ফুলে গিয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।
মক গানরের কাঁধে টোকা দিয়ে কপ্টারটাকে ওড়ানোর জন্য ইশারা করল। মাথা নেড়ে সায় দিলো গানথার। ইঞ্জিনে গর্জন তুলে হেলিকপ্টার বাতাসে ভর করল।
ভূমি দূরে সরে যেতেই এস্টেটকে সামনে দেখা গেল। মনক জানতে পেরেছে ওখানে ভূমি থেকে আকাশে ছোঁড়া যায় এরকম মিসাইল আছে। এদিকে ওদের কমার্শিয়াল কপ্টারে কোনো গোলা-বারুদ নেই। এই কপ্টার নিয়ে এগিয়ে যাওয়া অনেকটা আত্মহত্যার সামিল।
কিন্তু আপাতত এটাই করতে হবে। হাতে বিকল্প কোনো উপায় নেই।
সামনে ঝুঁকল মনক।
ওয়ার্ডেন সাহেব, সময় হয়ে গেছে।
ফাটা হাসি হাসল মনক। জানে পরিস্থিতি খুব একটা অনুকূলে নেই, তবে ফন্দিটা কাজে দেবে।
সোজা হলো কেলজ।
সন্তুষ্ট হয়ে মনক একটা রেডিও মাউথপিস এসে ওয়ার্ডেনের মুখের সামনে ধরল। আমাদেরকে সিকিউরিটি ব্যান্ডে লাইন দিন।
খামিশি ইতোমধ্যে কোড নিয়ে রেখেছে। সেটা করতে গিয়েই কেলজের এক চোখ রক্তবর্ণ হয়েছে।
যেভাবে শিখিয়েছি সেভাবে বলবেন, সতর্ক করে দিলো মনক, এখনও হাসছে।
একটু পেছনে ঝুঁকল কেলজ।
মনকের হাসি কী এতটাই ভয়ানক?
হুমকির জোর বাড়াতে তাউ ওয়ার্ডেনের গলার নরম মাংসের ভেতরে বর্শার ফলা খানিকটা ঢুকিয়ে দিলো।
রেডিও চালু হতেই শিখিয়ে দেয়া কথাগুলো বলল কেলজ। আমরা আপনাদের এক পালিয়ে যাওয়া বন্দীকে ধরেছি। সিকিউরিটি বেজের সাথে কথা বলছে সে। তার নাম–মক ক্যালিস। তাকে নিয়ে ছাদের হেলিপ্যাডে আসছি আমরা।
ওপাশ থেকে কী জবাব দিলো সেটা খেয়াল করছে গানথার।
ওকে, রজ্যার দ্যাট। ওভার অ্যান্ড আউট। কেলজ কথা শেষ করলেন।
খুশিতে গানথার চিৎকার করে উঠছিল প্রায়। আমরা অনুমতি পেয়ে গেছি। এবার নো প্রবলেম।
নির্ভীকভাবে কপ্টারকে এস্টেটের দিকে নিয়ে চলল ও। উপর থেকে এস্টেটের ভবনটাকে দেখতে আরও বিশাল লাগছে।
লিসার মুখোমুখি বসে আছে মনক। অ্যানা জানালার সাথে ঠেস দিয়ে বসে রয়েছেন। ব্যথায় তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আছে। সিট বেল্টে বাধা অবস্থায় সামনে ঝুঁকে গোঙাচ্ছে পেইন্টার। ওর সিডেটিভের প্রভাব কেটে যাচ্ছে।
লিসা ওকে ঠিক করে বসিয়ে দিলো।
মনক খেয়াল করে দেখল, লিসা পেইন্টারের হাত ধরে আছে… কপ্টারে ওঠার পর থেকেই ধরে ছিল… এখনও আছে।
মনকের দিকে তাকাল লিসা।
লিসার চোখে ভয়।
তবে ভয়টা নিজের জন্য নয়।
.
দুপুর ২টা ৫৬ মিনিট।
ব্রডকাস্টের রঙ উঠেছে? প্রশ্ন করলেন ব্যালড্রিক।
সায় দিলো ইসাক।
বেল-কে চালু হওয়ার জন্য তৈরি করো।
ব্যালড্রিক গ্রের দিকে ফিরলেন। আপনার সাথীদের ডিএনএ কোডগুলো আমরা বেল-এ ঢুকিয়ে দিয়েছি। বেল থেকে এখন যে আউটপুট বেরোবে সেটা ওই ডিএনএ গুলোর সাথে যাদের মিল পাবে ধ্বংস করে দেবে তাদেরকে। এছাড়া আর কারও কোনো ক্ষতি হবে না। একদম পরিষ্কার হিসেব। আমরা এভাবেই হিসেব মিটিয়ে থাকি।
গ্রে ভাবল, ফিওনা তো সেই একটা রুমে লুকিয়ে রয়েছে। আর মনক এখন কোথায় দৌড়াচ্ছে কে জানে।