লাঠিতে ভর দিয়ে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালেন ব্যালড্রিক। গ্রে লক্ষ করে দেখল নিজের নাতির সামনে তিনি যথেষ্ট নরম মানুষ। শুধু বাইরের লোক উপস্থিত থাকলে সেখানে তিনি বাড়তি শক্ত-সামর্থ্য হবার ভান করেন। গ্রে ভাবল, ব্যালড্রিক যেভাবে দাবার ছক কেটে এগোচ্ছেন সেটা কী তিনি সচেতনভাবে করছেন নাকি অবচেতনভাবে? সামনে তিনি যা করতে চাচ্ছেন সেটা সম্পর্কে তাঁর পরিষ্কার ধারণা আছে? ন্যায়-অন্যায়বোধ আছে?
আরেকটি ওয়ার্কস্টেশনে গিয়ে ইসাক মুখ খুলল। বোর্ডে সবুজ আলো দেখতে পাচ্ছি। বেল-এ পাওয়ার আছে… চালু করার জন্য তৈরি। আমরা এখন এস্টেট থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদেরকে সাফ করতে পারব।
কপাল কুঁচকালো গ্রে। ওরা কী বলছে এসব? মানে কী?
মনিটরের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ালেন ব্যালড্রিক। রুমের ঠিক মাঝখানে তাকালেন তিনি। তাহলে চালু করার জন্য তৈরি হও।
একটু সরলো গ্রে, যাতে রুমের মাঝে কী আছে সেটা দেখতে পায়।
রুমের মাঝখানে বিরাটাকার শেল রাখা। সিরামিক ও ধাতু দিয়ে নির্মিত ওটা। আকৃতিতে একটা ঘণ্টার মতো। গ্রের সমান উচ্চতা হবে বেলটার। বেল-এর পরিধি দেখে গ্রের সন্দেহ হলো, দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ওটার অর্ধেক নাগাল পাবে কি-না।
মোটরের গুঞ্জন শোনা গেল। একটা ধাতব পর্দা নেমে গেল সিলিং থেকে। বিভিন্ন গিয়ারকে আবৃত করে বাইরের বড় একটা শেলে গিয়ে পড়ল। ঠিক সেইসময় পাশে থাকা একটা হলুদ ট্যাঙ্ক খুলে গ্যাসকিট রক্তবর্ণের তরল প্রবেশ করতে শুরু করল বেল-এর ভেতর।
লুব্রিক্যান্ট? জ্বালানি?
গ্রের কোনো ধারণা নেই। তবে ট্যাঙ্কের পাশে থাকা নাম্বারটা ঠিকই ওর চোখে পড়ল। ৫২৫। সেই রহস্যসময় জেরাম।
ব্লাস্ট শিন্ড তোল! নির্দেশ দিলেন ব্যালড্রিক। কথাটি বলতে গিয়ে রীতিমতো চিৎকার করতে হলো তাকে। কারণ মোটর আর গিয়ারের আওয়াজে কথা শুনতে পাওয়া কঠিন।
এই লেভেলের পুরোটা ধূসর টাইল দেয়া, শুধু একটা বৃত্তাকার কালো অংশ বাদে। বেল-এর চারদিকে প্রায় ৯০ ফুট জুড়ে আছে সেটা। ৯০ ফুট অংশ জুড়ে দেয়াল তুলে দেয়া হলো। দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ১ ফুট। দেখতে অনেকটা সার্কাস রিঙের মতো। মেঝের উপরে থাকা সিলিং দেখতে হুবহু মেঝের মতোই… তবে সিলিঙে একটা খাঁজ কাটা বর্ডার আছে।
পুরোটা সীসার তৈরি।
গ্রে বুঝতে পারল দেয়ালটাকে নিশ্চয়ই সিলিঙ পর্যন্ত তুলে দেয়া হবে। বেল-এর চারিদিকের মোট ৯০ ফুট অংশ একদম সিলিন্ডার বন্দী হবে তাহলে।
কী সমস্যা? আবার গলা ফাটালেন ব্যালড্রিক।
ইসাক একটা সুইচ বারবার চাপ দিলো। ব্লাস্ট শিল্ড মোটরে আমরা কোনো পাওয়ার পাচ্ছি না!
গ্রে নিজের পায়ের দিকে তাকাল। মোটরগুলো নিশ্চয়ই নিচের লেভেলে রয়েছে। অন্ধকার লেভেল। রুমের ভেতরে কোথাও ফোন বেজে উঠল। গ্রে বুঝতে পারল কে ফোন করেছে। আসল কাহিনি অবশেষে সিকিউরিটির লোকজন জানতে পেরেছে।
এখান থেকে কেটে পড়তে হবে।
সোজা হয়ে ঘুরল গ্রে।
একটা পাইপ ওর কব্জিতে এসে আঘাত করল। পিস্তলটা পড়ে গেল ওর হাত থেকে। পরের আঘাতটা এলো ওর মাথা বরাবর। কোনোমতে আঘাত থেকে নিজের মাথা বাঁচাল গ্রে।
ইসকি ওর দিকে ধেয়ে এলো। তার পেছনে অন্ধকার লিফটের দরজা খোলা অবস্থায় রয়েছে। কারেন্ট বন্ধ করে দেয়ার ফলে এই মহিলা নিশ্চয়ই লিফটে আটকা পড়েছিল। তারপর লিফটের ওপরের অংশ খুলে ধীরে ধীরে এখানে এসে হাজির হয়েছে। মোটরের আওয়াজের কারণে গ্রে এসবের কিছুই টের পায়নি।
আবার পাইপ তুলল ইসকি। তার ভাবভঙ্গি দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এসবে সে খুবই দক্ষ।
ইসকির দিকে চোখ রেখে ধীরে ধীরে বেল-এর চেম্বারের দিকে পেছালো গ্রে। ও আর মারশিয়া ইমার্জেন্সি সিঁড়ি দিয়ে এখানে উঠে এসেছিল, পেছানোর সময় গ্রে একবারও সেদিকে তাকালো না। মনে মনে প্রার্থনা করল, মারশিয়া এতক্ষণে সেখান থেকে চলে গিয়ে যেন শর্টওয়েভ রেডিও যোগাড় করে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দেয়।
ইসকির পোশাকে তেল, ময়লা, আর কালিতে মাখামাখি। গ্রের সাথে সাথে সে-ও বেল-এর চেম্বারে ঢুকছে।
গ্রের পেছন থেকে ব্যালড্রিক মুখ খুললেন। আরে, কী ব্যাপার? দেখা যাচ্ছে আমার ইসকি দাদু একটা ইঁদুর ধরেছে, হুম?
ঘুরল গ্রে।
ওর কাছে কোনো অস্ত্র নেই। বিকল্প কোনো রাস্তাও নেই।
অনলাইনে আসছে জেনারেটরগুলো… জানালো ইসাক। তার কণ্ঠে কোনো প্রাণ নেই, গ্রেকে এখানে দেখে সে মোটেও খুশি হয়নি।
একাধিক মোটর চালু হওয়ায় গ্রের পায়ে কাঁপুনি অনুভূত হলো। ব্লাস্ট শিল্ড উঠতে শুরু করল মেঝে থেকে।
এবার বাকি ইঁদুরগুলোকে মারার পালা। বললেন ব্যালড্রিক।
.
দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট।
হেলিকপ্টার রোটরের আওয়াজকে ছাপিয়ে চিৎকার করল মনক। আপনি এই মেশিন ওড়াতে জানেন? ওদের চারপাশে ধুলো-বালি উড়ছে।
কপ্টারের স্টিক ধরতে ধরতে মাথা নাড়ল গানথার, জানে।
গানথারের কাঁধ চাপড়ে দিলে মনক। আপাতত নাসির উপরে ওকে ভরসা করতেই হচ্ছে। কারণ মনক হেলিকপ্টার চালাতে জানে না। তার উপর ওর এক হাত নেই। এদিকে গানথার ওর বোনকে বাঁচাতে মরিয়া, সে-হিসেবে পরিস্থিতি এখন নিরাপদ বলা যায়।
পেছনে লিসা ও অ্যানা একসাথে বসেছে। ওদের দুজনের মাঝখানে বসানো হয়েছে পেইন্টারকে, ওর মাথা ঝুলছে। অল্প করে সিডেটিভ দেয়া হয়েছে ওকে। একটু পরপর শব্দ করছে, গোঙাচ্ছে… সামনে বালুঝড় আসছে বলে সতর্ক করছে কাকে যেন। পুরানো স্মৃতি সব।