ষষ্ঠ সাবলেভেল পার হলো ওরা। নিচের লেভেলের মতো এটাও ঘুটঘুটে অন্ধকার।
চলার গতি বাড়িয়ে এগোচ্ছে গ্রে। ওর মনে ভয় হচ্ছে, কখন না জানি ব্যাকআপ জেনারেটর চালু হয়ে যায়। পরবর্তী ল্যান্ডিঙে পৌঁছে একটু আলোর আভা দেখা গেল।
এক হাত উঁচু করে পেছনে থাকা মারশিয়াকে থামাল গ্রে।
আলোটা নড়ছে না, চুপচাপ স্থির হয়ে আছে।
তাহলে ওটা কোনো গার্ড নয়। হয়তো কোনো ইমার্জেন্সি লাইট।
তারপরও…
এখানেই থাকুন। ফিসফিস করে মারশিয়াকে বলল গ্রে।
মারশিয়া মাথা নাড়লেন।
গ্রে সামনে এগোলো। হাতে পিস্তল নিয়ে একদম প্রস্তুত। সিঁড়ির ধাপ বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে আলোর উজ্জ্বলতা বাড়লো। আরও সামনে এগোনোর পর কণ্ঠস্বর শুনতে পেল গ্রে। এই লেভেলের উপরের লেভেলগুলো এখনও অন্ধকার… নিচের লেভেলগুলোও অন্ধকার… তাহলে এখানে কারেন্ট আছে কীভাবে? এই লেভেলের জন্য নিশ্চয়ই আলাদা সার্কিট আছে।
করিডোর দিয়ে কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
পরিচিত কণ্ঠ। ইসাক ও ব্যালড্রিক।
তাদের দুজনকে এখান থেকে সরাসরি দেখা যাচ্ছে না। রুমের ভেতরে রয়েছে হয়তো। গ্রে নিচে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল আধো আলোতে মারশিয়ার চেহারা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। ইশারা করে মারশিয়াকে ওপরে আসতে বলল ও।
কণ্ঠস্বরগুলো তিনিও শুনতে পেয়েছেন।
ইসাক ও ব্যালড্রিক কারেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা সম্পর্কে এখনও জানে না। এখানে দিব্যি কারেন্ট আছে, তাই ওরা হয়তো জানে না মূলভবনের কোথাও কারেন্ট নেই। নাকি জানে? উত্তরটা জানার কৌতূহল দমন করল গ্রে। ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিতে হবে।
গ্রে শুনতে পেল ব্যালড্রিক বলছেন। বেল ওদের সবাইকে মেরে ফেলবে।
থামল গ্রে। তারা কী ওয়াশিংটনকে নিয়ে কথা বলছে? যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে তাদের প্ল্যানটা কী? যদি বিস্তারিত জানা যেত…।
দুই আঙুল উঁচু করে মারশিয়াকে দেখাল গ্রে। দুই মিনিট। এর মধ্যে যদি ও না ফেরে তাহলে মারশিয়াকে নিজের বুদ্ধি খাঁটিয়ে এগোতে হবে। ওর কাছে থাকা আরেকটি পিস্তল মারশিয়াকে দিয়ে দিলো। এখানকার বেল-টাকে যদি ও দেখতে পারে তাহলে হয়তো অনেক মানুষের জীবন-বাঁচানো সম্ভব হলেও হতে পারে।
আবার দুই আঙুল দেখাল গ্রে।
মারশিয়া মাথা নাড়লেন। বুঝতে পেরেছেন, গ্রে যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে মারশিয়াকেই নিজের দায়িত্ব নিতে হবে।
সন্তর্পণে এগোচ্ছে গ্রে। একটু টু শব্দ করলে হয়তো ভেতরে থাকা লোকজন সতর্ক হয়ে উঠবে। নিচের লেভেলের মতো এখানে ফুরোসেন্ট লাইট দিয়ে হলওয়ে আলোকিত করা হয়েছে। একটু সামনে এগিয়ে জোড়া স্টিলের দরজার কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে হলওয়ে। তার ঠিক বিপরীত দিকে অন্ধকার লিফটের দরজা খুলে রয়েছে।
জোড়া স্টিল দরজার একটা দরজা এখন খোলা।
পা টিপে দ্রুত এগোল গ্রে। দরজার কাছে পৌঁছে দেয়াল জড়িয়ে ধরল। হাঁটু গেড়ে বসে নিয়ে পার হলো দরজা।
এটা একটা চেম্বার। ছাদটা বেশ নিচু। সাবলেভেলের পুরোটা জায়গা জুড়ে রয়েছে এই চেম্বার। সাধারণ চেম্বার নয়, এটা হলো মূল ল্যাবরেটরি চেম্বার। দেয়ালের পাশ দিয়ে সারি সারি কম্পিউটার রাখা আছে। সারি সারি কোড আর নাম্বার যাচ্ছে মনিটরগুলোতে। কম্পিউটারগুলোর জন্য নিশ্চয় আলাদা সার্কিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
এখানে এখনও কারেন্ট যায়নি বলে হয়তো ওরা এখনও বিষয়টা টের পায়নি। তবে যেকোনো মুহূর্তে টের পেয়ে যাবে।
দাদা ব্যালড্রিক আর নাতি ইসাক একটা স্টেশনের ওপর ঝুঁকে রয়েছে। ৩০ ইঞ্চি ফ্ল্যাট স্ক্রিন মনিটর ঝুলছে দেয়ালে, একটার পর একটা প্রাচীন বর্ণমালা তাতে ভেসে উঠছে। হিউগো সাহেবের বই থেকে পাওয়া ৫টি বর্ণ ঘুরে ফিরে দেখা যাচ্ছে মনিটরে।
কোড এখনও খুলতে পারিনি, বলল ইসাক। এরকম পরিস্থিতিতে কী বেল প্রোগ্রামকে পুরো পৃথিবী জুড়ে পরিচালনা করা ঠিক হবে?
কোড খোলা হয়নি তো কী হয়েছে? খোলা হবে। টেবিলে চাপড় দিলেন ব্যালড্রিক। কোড খোলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাছাড়া, আমরা নিখুঁত করার প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। তুমি নিজেকে আর তোমার বোনকে দেখ। অনেকদিন বাঁচবে তোমরা। শেষ দশকে যাওয়ার আগে তোমাদের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি হবে না। এখন আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সময় এসে গেছে।
ইসাক মেনে নিলো।
সোজা হলেন ব্যালড্রিক। হাত দিয়ে ওপরের দিকে ইশারা করে বললেন, দেখ, দেরি করে কী ফল পাওয়া যাচ্ছে। পুরো দুনিয়ার দৃষ্টি হিমালয়ের দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, সেটাই এখন আমাদের দিকে বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে।
কারণ আমরা অ্যানা পোরেনবার্গকে ছোটো করে দেখেছিলাম।
এবং সিগমাকেও। যোগ করলেন ব্যালড্রিক। যা-ই হোক, সেটা ব্যাপার না। সোনা দিয়ে আমরা সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা কিনে নেব। তবে যা করার এখুনি করতে হবে। প্রথমে ওয়াশিংটনকে দিয়ে শুরু করব, তারপর পুরো পৃথিবী। আর সেই হট্টগোলের ফাঁকে কোড ভাঙার জন্য যথেষ্ট সময় পাব আমরা। নিখুঁতের উৎকর্ষতা আমরা অর্জন করেই ছাড়ব।।
আফ্রিকার বাইরে নতুন এক পৃথিবী গড়ে উঠবে, বলল ইসাক। ওর বলার ধরন শুনে মনে হলো যেন কোনো প্রার্থনা করছে।
একদম নিরেট মানবজাতি পাব আমরা। কোনো মিশ্রণ কিংবা শংকর জাত থাকবে না। ব্যালড্রিক তার নাতির সাথে যোগ করলেন।