সমস্যা নেই, আমি ম্যানেজ করে নিতে পারব।
তর্ক করার মতো সময় নেই লিসার। পেইন্টারের হাত ছেড়ে দিলো ও। পেইন্টার টলে উঠল। লিসা গানথারকে বলল, চলুন।
ব্রুকস দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে পারছে না কী করবে। লিসা ও গানরের পিছু পিছু যাবে নাকি পেইন্টার ক্রোর হাত ধরে সাহায্য করবে।
ইশারা করে মেজরকে চলে যেতে বলল ক্রো।
তারপর ওদের পিছু পিছু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোতে লাগল।
দৌড়ে পাশের কুঁড়েঘরে যাচ্ছে লিসা। বাইরে বের হতেই প্রচণ্ড গরমের হলকা অনুভব করল ও। মনে হলো, একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। বাতাসে কোনো গতি নেই, তপ্ত বাতাস থেকে শ্বাস নেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সূর্যের আলোর প্রখরতা এত বেশি যে প্রায় অন্ধ হওয়ার দশা। অবশেষে ঘরের ছায়ায় পৌঁছুল ও।
মাদুরের ওপর অ্যানা শুয়ে আছেন। তাঁর শরীর গুটিয়ে রয়েছে, শক্ত হয়ে আছে মাংসপেশি। লিসা দ্রুত তার কাছে এগিয়ে গেল। অ্যানার হাতে ইতোমধ্যে একটা নল লাগানো আছে। এরকম নল পেইন্টারের হাতেও ছিল। শরীরে তরল পদার্থ প্রবেশ করানোর সহজ উপায় এটা।
হাঁটু গেড়ে বসল লিসা। একটা সিরিঞ্জ বের করল। ইনজেকশন পুশ করার কয়েক সেকেন্ড পর অ্যানার শরীর স্বাভাবিক হলো, মাদুরের ওপর শরীর মেলে দিলেন তিনি। কয়েকবার পিটপিট করার পর চোখ খুলে তাকালেন, জ্ঞান ফিরেছে। অসুস্থ হলেও এখন তার মস্তিষ্ক সচেতন।
পেইন্টার হাজির হয়ে গেছে। ওর সাথে মনকও হাজির।
কী অবস্থা? পেইন্টার জানতে চাইল।
তোমার কী মনে হয়? রেগে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল লিসা।
বোনকে ধরে উঠে বসাল গানথার। অ্যানার চেহারা ফাঁকাসে হয়ে গেছে। ঘেমে গেছেন তিনি। একঘণ্টা পর পেইন্টারেরও এই একই দশা হবে। পেইন্টার ও আনা দুজনই খুব বাজেভাবে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ক্রোর বিশালদেহি শরীর ওকে একটু বাড়তি সুবিধা দিলেও মোটের ওপর হাতে আছে মাত্র কয়েক ঘন্টা।
জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলোর দিকে তাকাল লিসা। সন্ধ্যা নামতে এখনও অনেক দেরি।
মনক নীরবতা ভাঙল। খামিশির সাথে কথা বলেছি। সে বলল এইমাত্র এস্টেটের ভেতরকার আলোগুলো সব নিভে গেছে। একটু একটু হাসছে সে। ভাবছে, এই সুখবর দেয়ার জন্য ওকে অভিনন্দন জানানো হবে। আমার মনে হচ্ছে, এটা গ্রের কাজ।
ভ্রু কুঁচকালো পেইন্টার। কাজটা যে সে-ই করেছে সেটা তো আমরা জানি না।
কাজটা যে সে করেনি, সেটাও আমরা জানি। নিজের টাক মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল মনক। স্যার, আমাদের মনে হয় টাইম-টেবিল এগিয়ে এনে কাজ করা উচিত। খামিশি বলছিল…।
খামিশি এই অপারেশন পরিচালনা করছে না, বলল ক্রো। কেশে উঠল।
লিসার দিকে তাকাল মনক। ওরা দুজন ২০ মিনিট আগে একটা ব্যক্তিগত আলোচনা করেছে। এজন্যই খামিশিকে কল করেছিল মনক। অভিযানে রদবদল আনতে হলে অনুমতি নিয়ে রাখা উচিত। সিসার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল মনক।
লিসা পকেট থেকে আরেকটা সিরিঞ্জ বের করল। পেইন্টারের পাশে এলো সে।
তোমার নলটা পরিষ্কার করে দিই, বলল লিসা। ওতে রক্ত জমে গেছে।
হাত উঁচু করল পেইন্টার। কেঁপে উঠল ওটা।
ওর কব্জি ধরে নিয়ে সিরিঞ্জ পুশ করল লিসা। মনক ক্রোর পাশে চলে এসে ধরে ফেলল, কারণ পা সরে গিয়ে আছড়ে পড়তে যাচ্ছিল ক্রো।
কী??? পেইন্টারের মাথা পেছনে হেলে গেছে।
একহাত দিয়ে তাকে সাহায্য করল মনক। আপনার ভালোর জন্যই করা হলো, স্যার।
লিসার দিকে তাকিয়ে পেইন্টার ভ্রু কুঁচকালো। এক হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দিল ক্রো। বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য হয়তো লিসাকে আঘাত করতে চাইছে। লিসা সন্দেহ করল, এমনটা হয়তো ক্রো আন্দাজও করতে পারেনি। সিডেটিভ পেইন্টারকে অবশ করে দিলো।
মেজর ব্রুকস এসব দেখে হাঁ হয়ে গেছে।
তার দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল মনক। এর আগে কখনও বিদ্রোহ দেখোনি?
নিজেকে সামলে নিলো ব্রুকস। স্যার, আমি শুধু একটা কথা বলতে পারি… সময়টা খুবই খারাপ।
মাথা নাড়ল মনক। প্যাকেজ নিয়ে খামিশি আর তিন মিনিটের মধ্যে চলে আসছে। সে আর ড. কেইন এখান থেকে গ্রাউন্ড সাপোর্ট নেবে।
লিসা গানথারের দিকে ফিরল। তুমি তোমার বোনকে তুলে নিতে পারবে?
কথা বলল না। গানথার বোনকে কোলে তুলে উঠে দাঁড়িয়ে কাজে প্রমাণ করল।
আপনারা কী করছেন এসব? দুর্বল কণ্ঠে জানতে চাইলেন অ্যানা।
রাত নামা পর্যন্ত আপনারা দুজন টিকতে পারবেন না, লিসা বলল। তাই আমরা বেল-এর দিকে এগোচ্ছি।
কীভাবে…?
আপনার ছোট মাথা দিয়ে আর এসব চিন্তা করার কষ্ট করবেন না, প্লিজ। পেইন্টারকে ও আর মেজর মিলে সাহায্য করছে। আমরা একটা ব্যবস্থা করে রেখেছি।
লিসার সাথে মনকের আবার চোখাচোখি হয়ে গেল। মনকের চোখের ভাষা পড়ল লিসা।
হয়তো ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
.
দুপুর ২টা ৪১ মিনিট।
হাতে পিস্তল নিয়ে এগোচ্ছে গ্রে। যতটুকু সম্ভব চুপিসারে এগোচ্ছে ও আর মারশিয়া। ফ্ল্যাশলাইটের উপরে মারশিয়া একহাতের তালু রাখলেন। আলোর বিচ্ছুরণ কম রাখতে চান, ঠিক যতটুকু তাদের দরকার ঠিক ততটুকু। বাড়তি আলো বিপদের কারণ হতে পারে। লিফটগুলো যেহেতু এখন বন্ধ হয়ে গেছে… তাই গ্রে ভাবল হয়তো সিঁড়িতে নড়াচড়া করছে গার্ডরা।
যদিও গ্রে নিজেই এখন একজন গার্ডের ছদ্মবেশে আছে। ভাবটা এমন–একজন মহিলা গবেষককে গার্ড দিয়ে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে সে। কিন্তু তারপরও গ্রে কোনো সত্যিকার গার্ডের সামনে পড়ে গিয়ে বাড়তি ঝামেলায় জড়াতে চায় না।