টাকা!
কে পাঠাল? টুকরো কাগজে লেখা–মার্শাল এন্ড। তিন কোটি কুড়ি লক্ষ ফ্রাঁ! শুভেচ্ছা, আমেরিকার পক্ষ থেকে।
বন্ড নিজের চোখ-কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
ভেসপারের পাশে ফেলিক্স দাঁড়িয়ে। তার মুখেও হাসি।
আবার দান শুরু হচ্ছে। পরের রাউন্ড। ক্যাসিনোর প্রাপ্য টাকা কেটে নিচ্ছে ক্রুপিয়ার।
দ্য শিফ টেবিলে রয়েছে।
এখন এসপার-ওসপার। হয় জয়, নয় মৃত্যু।
পুরো তিনকোটি কুড়ি লক্ষ ফ্ৰাঁ টেবিলে। সব টাকার উপর বাজি ধরা। ক্রুপিয়ার সংখ্যাটা ঘোষণা করতেই সকলে চমকে উঠল।
বাকারার ইতিহাসে এতটাকার বাজি রেকর্ড করল। শোনা যায়, একবার ১৯৫০ সালে দোভিলে এমন কাণ্ড নাকি হয়েছিল।
সংখ্যাটা সত্যি কেন, সেটা শেফ দ্য পার্টি একবার বাজিয়ে নিল। তাবপর টাকাটা গুনে দেখা হল। গোনা শেষ হতে বন্ড টের পেল তার মেরুদণ্ডের নীচে শক্ত কী যেন স্পর্শ করল। তার ডান দিক থেকে চাপা গলায় কেউ বলল–মঁসিয়ে, এটা রিভলবার। সাইলেন্সার দেওয়া আছে, তাই কোনো শব্দ হবে না। আপনার শিরদাঁড়া উড়ে যাবে। লোক মনে করবে, আপনি উত্তেজনায় জ্ঞান হাবিয়েছেন। তোক ডাকলেই গুলি চালাব। আমার কথা, আমি দশ গোনা শেষ করার আগেই বাজি ফিরিয়ে নিন।
আসলে সেই মোটা ছড়িব ভেতর এই অস্ত্র ছিল। বন্ড এও জানে–এরা যা বলে তাই করে।
লোকটা গোনা শুরু করেছে— এক, দুই, তিন…
ল্য শিফ বন্ডের দিকে তাকিয়ে।
–চার, পাঁচ, ছয়—
আঃ, ভেসপার এবং ফেলিক্স দূরে নিশ্চিত মনে কথা বলছে। কিছু বুঝতে পারেনি ওরা।
–সাত, আট, নয়—
সমস্ত শক্তি দিয়ে এবার পেছনে ধাক্কা মারল বন্ড। বেতের ছড়িধারী রিভলবারওয়ালা ছিটকে পড়ল। একটা ভল্ট খেয়ে পেছনে দাঁড়ালো ভল্ট। চেয়ারটা মট করে ভেঙে গেল। মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল সে। সকলের সাহায্যে উঠে দাঁড়াল। এমন কি শেফ দ পার্টিও সাহায্য করল। অভিনয়
অবশ্য!
কপালের ঘাম মুছে বন্ড বলল–হঠাৎ মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল, উঃ কী গরম।
–ডাক্তার ডাকা হোক।
–না, না, দরকার নেই। প্লিজ, আই অ্যাম সো সরি!
পরিচারক ছড়িটা তুলে পরীক্ষা করছে।
বন্ড বলল–ওটা মি. ফেলিক্সের এক বন্ধুর। ওর হাতে দিন।
ছড়ির মালিক উধাও। একজন বডিগার্ডকেও এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না।
কী ঘটল আসলে কেউ-ই সেটা বুঝল না। অবশ্য যে বা যারা বোঝবার তার বুঝেছে।
আঙুল দিয়ে টেবিলে জোরে টোকা মারল বন্ড।
অর্থাৎ, খেলা আবার শুরু হোক। সে প্রস্তুত।
১৩. ঘোষণা হল
ঘোষণা হল আবার জমা পড়েছে তিন কোটি কুড়ি লক্ষ।
ল্য শিফ টেবিলে চাপড় মারল।
বন্ড এখন আবার সতেজ। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। অবশ্য শরীর এখনও ঘামে ভিজে আছে।
দশ মিনিট বিরতি দেওয়া হয়েছিল।
এখন রাত দুটো।
একজন বলল–লালের ন’নম্বর জিতেছে।
রোমহর্ষক স্তব্ধতা। তাস টানাটানি, উলটে দেখা চলছে।
এখন টেবিলে বন্ডের তাস : দুটির গোলাপি পিঠ–আরেকটা হরতনের নয়। দুই বিবি সবুজ কাপড়ে ঢাকা। ব্যাংকারের নাক বেয়ে ঘাম ঝরছে। ল্য শিফের মুখে ধূর্ত হাসি। সবাই ধরে নিয়েছে বন্ডের অবশ্য পরাজয়।
কুপিনের কাঠের হাতা এগিয়ে দিল।
তাস উলটে দিল বন্ড–আঃ, দুই লালবিবি হাসছে।
ল্য শিফ চেয়ারে এলিয়ে পড়েছে। মনে হবে কেউ যেন ওর বুকে ছুরি মেরেছে।
ক্রুপিয়ের হাঁক দিল–এক কোটি জমা পড়েছে।
বন্ড সিগারেট ধরিয়ে দেখল পাশে একটা গোলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোঁ চোঁ করে এক গেলাস উড়িয়ে দিল সে।
ডাকাতির পাহাড় জমে উঠেছে।
পরের দান নয় উঠতেই ল্য শিফ উঠে পড়ল। বন্ডও উঠে দাঁড়াল। অজস্র ধন্যবাদ বর্ষিত হচ্ছে। ক্যাসিনোর ডাইরেক্টরদের পক্ষ থেকে তার নিমন্ত্রণ এল। টেবিলে এবার নোটের পাহাড়।
মোট সাতকোটি ফ্রাঁ!!
ফেলিক্সের টাকা বন্ড ক্যাশে নিল, বাকি প্রায় চার কোটি চেকে। ডাইরেক্টররা বললেন–কাল সন্ধেবেলা আসছেন তো!
বন্ড হ্যাঁ বা না, কিছুই পরিষ্কার বলল না।
নিভৃতে আসার পর লিটার বলল–তোমার কান্ড দেখে আমরা তাজ্জব। পরে অবশ্য বুঝেছি। রিভলবারধারী ছড়ি ফেলে পালিয়েছে। এই দেখ ওর বুলেট! যাক সব ভালো যার শেষ ভালো। ল্য শিফকে মারাত্মক শিক্ষা দিয়েছ তুমি!
বন্ড হেসে বলল–আসলে তোমার দেওয়া খামের জয়। দুঃসময়ে প্রকৃত বন্ধুর কাজ করেছ। এর প্রতিদান দেব নিশ্চয়ই!
ভেসপার লিন্ডকে বন্ড বলল–চলো, নাইট ক্লাবে। একটু শ্যাম্পেন খেলে ভালো লাগবে।
–চলুন, টাকাটা রেখে আসুন। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিই।
ওরা দুজন এরপর বেরিয়ে পড়ল। বাইরে জ্যোৎস্না।
বন্ডের ঘর ঠিকঠাক আছে।
বাথরুমে গিয়ে মুখে জলের ঝাঁপটা দিয়ে কুলকুচো কবল বন্ড। হ্যাঁ, ভল্ট খেতে গিয়ে মাথার পেছনে একটু চোট লেগেছে। ডান কাঁধেও।
একদিনে দুবার মরণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সোজা কথা নয়।
রাতেও এক আক্রমণ অপেক্ষা করছে।
নাকি ল্য শিফ পালিয়েছে, জাহাজে পাড়ি দিয়েছে অন্যকোথা। স্মার্শ তো ওকে ছাড়বে না।
দরজায় তালা লাগিয়ে এবার বাইরে এল সে।
১৪. ছোটো নাইট ক্লাব
রোগা গোলান্তের ছোটো নাইট ক্লাব।
ভেসপারকে ঢুকল বন্ড। শ্যাম্পেন খেতে খেতে গল্প চলল। নানা বিষয়–ম্যাথুস, লিটার, ল্য শিফের ভবিষ্যৎ–ইত্যাদি। জানা গেল, ওরা বডিগার্ড দুটোর ওপর নজর রাখছিল বটে। কিন্তু বন্ডের পেছনে চলে-আসা ছড়ি রিভলবারধারীকে লক্ষ করেনি আগেই। সে অবশ্য প্যারিসে ফোন করেছে। এম-এর লোককে খেলার ফলাফল জানিয়ে দিয়েছে।
ভেসপার লিন্ড যেন একটু নিস্পৃহভাবে কথা বলছিল। বন্ড একটু বিরক্ত হল। রেগে মেগে একটু বেশি শ্যাম্পেন খেয়ে আবার ডিমের অর্ডার দিল।