লিন্ড তাই এই বন্ড-এর সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জের মত নিয়েছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে বন্ডের গলার সুরে সে কিছুটা আহত।
বন্ড বলল–আসল কথা লাক! পক্ষে বা বিপক্ষে দুদিকেই ভাগ্য থাকা চাই। সংক্ষেপে প্ল্যানটা এই :
… আজ রাতে ল্য শিফ ইজিপ্সিয়ান সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ব্যাংক কিনে নিয়েছে। দাম দিয়েছে দশ লক্ষ ফ্রাঁ। ওর ক্যাপিটাল এখন কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র দুকোটি চল্লিশ লক্ষ। আমারও মূলধন প্রায় তাই। খুব সম্ভব দশজন খেলবে আজ।
.. টেবিলটাকে দুভাগে ভাগ করা হবে। বয্যালে বাকীরা প্লেয়ারদের সংখ্যা কম। ওদের জেতার সম্ভাবনা কম, কিন্তু একটা সুবিধে আছে। মাঝখানে ব্যাংকার বসে। একজন পার্টনার ডাক দেয়
বন্ড তাসখেলার বিশদ তাৎপর্য ও কায়দাগুলো বোঝাল। সঙ্গে ব্যাংকারের ভূমিকাও বুঝিয়ে দিল। কীভাবে ব্যাংকার দান ও টাকার পৰিমাণ ঘোষণা করবে, এক নম্বর টাকা ফেলবে, দু-নম্বর পাশ দেবে, সারা টেবিল ঘুরবে। দর্শকরাও অংশ নিতে পারে। অল্প পরিমাণ দিয়ে শুরু হয়, ক্রমশ টাকার অঙ্ক বাড়তে থাকে। দশ বা কুড়ি লাখের মাথায় বন্ড যোগ দেবে। সমান সমান টাকা দিয়ে খেলা শুরু হতে পারে।
এবার কফি এল।
কথাবার্তায় বন্ড এখন পুরো পেশাদার। পয়েন্ট পাওয়া, ব্যাংকারের তাস পাওয়া,নয় সংখ্যাটার গুরুত্ব, টেক্কা এক, কিন্তু ছবিওয়ালা তাসগুলোর দাম নেই–ইত্যাদি ইত্যাদি।
মিস লিন্ড সুবাধ্য ছাত্রীর মতো বোঝার চেষ্টা করছিল।
–যে নয়ের কাছে আসবে সেই জিতবে। ড্র হলে আবার খেলতে হবে।
বন্ড বলল–মনে রেখো, একদিক থেকে ব্যাংকাব সুবিধেজনক অবস্থায় থাকবে। তবে, প্রথমবারের আট আর নয় থেকে জিত। তাই দেখতে হবে আট আর নয় গুলো আমি যেন ওর থেকে বেশি পাই।
এত মারপ্যাচ মাথায় নিতে কিছুটা নার্ভাস লিন্ড। কিন্তু বুদ্ধিমতী সে, তাই অনেকটাই বুঝে ফেলেছে।
বন্ড অ্যাশট্রেতে সিগারেট গুঁজে দিল।
১০. খেলা শুরু
খেলা শুরু। বন্ড উত্তেজিত। এই তো ল্য শিফের সঙ্গে বোঝাঁপড়া হতে চলেছে। এখন সে শুধু জুয়াড়ি–আর কিছু নয়।
এর আগে হোটেল থেকে বেরিয়ে ওরা যখন কাসিনোতে এল, তখন ভালো সম্বর্ধনা পেল বন্ড।
ভেসপার লিন্ডের সঙ্গে ফেলিক্স-লিটার এর আলাপ হল। লিটার চাইল ভেসপার লিন্ডকে রুলেতের আসরে নিয়ে যেতে। ভেসপাব রাজি। লাকি নাম্বারের কথা উঠল।
–আমার কোনোও লাকি নুম্বব নেই।–বন্ড বলল।
রেলিং এর ওপার যাবার পথটা ভেলভেট মোড়া চেন দিয়ে ঘেরা। শেফ দ্য পার্টি চেন সরিয়ে ঢুকল।
–মঁসিয়ে বন্ড। ছ-নম্বরটা আপনার জন্য, যেমন আপনি চেয়েছিলেন।
–থ্যাংক ইউ।
টেবিলে তখন তিনটে জায়গা খালি যখন বন্ড ঢুকল। জুয়াড়িদের একনজরে দেখে নিল বন্ড বেলজিয়ান, গ্রিক–নানা জাতেব লোক। এখনও অনেকে এসে পৌঁছায় নি। বন্ড হিসাব কষল–
এক নম্বর– …
দুনম্বর–কারমেল ভিলানি, আমেরিকান ফিলমের নায়িকা।
তিন নম্বর লেডি ভ্যানডার্স।
চার ও পাঁচ নম্বর–মি. অ্যান্ড মিসেস ড়ু পন্ট।
ছয় নম্বর–জেমস বন্ড।
সাত নম্বর–মঁসিয়ে সিক্সটে।
আট নম্বর–এক ভারতীয় মহারাজা।
নয় নম্বর–লর্ড ভ্যানডার্স।
দশ নম্বর–সিনর ডোমেলি, ইতালীয়ান ব্যবসায়ী।
খেলার শুরুতে জমা পড়েছে পাঁচ লক্ষ ফ্রাঁ। খেলা শুরুতেই ল্য শিফ ঝুঁকে পড়েছে। চৌকা, পাঞ্জা, ছক্কা, সাত্তা–এলোমেলো ভাবে ঘুরছে।
ক্রুপিয়ার ঘোষণা করল জমা দশ লক্ষ।
গ্রিক বলল–লেট গেম গো অন।
বন্ড টান হয়ে বসল–এইবার আসল খেলা আসছে।
একটু পরে পিয়ারের ঘোষণা–কুড়ি লক্ষ।
সবাই চুপ। বন্ড বলল–আছি।
১১. ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা
ল্য শিফের চোখের দৃষ্টি সাদা।
বন্ড তাকে সর্বক্ষণ লক্ষ করছিল। খোঁচা খোঁচা লালচে চুল। চওড়া ডিনার জ্যাকেট। এবার খেলায় বেশ রেষারেষি। সংখ্যাটা একটি, উত্তেজক ফিগার। কেউ আপশোশ করছে কেউ উল্লসিত, নানা কথাবার্তা চলছে। ড়ুপন্ট দম্পতি উৎসাহী। ল্য শিফের ডানপাশে লম্বা চেহারার লোকটার কাঠের মতো চেহারা, জ্বলজ্বলে চোখ। রেলিং-এর ওর হাতের মুভমেন্ট দেখে বন্ড বুঝল লোকটা গলাটিপে খুন করতে অভ্যস্ত। মাদক খায়। অন্য লোকটির চেহারা লোমশ জন্তুর মতো, হাতে লাঠি–আসলে গুপ্তি-জাতীয় কিছু আছে।
খেলা চলছে। ব্যাংকার হারছে।
ল্য শিফও সারাদিন হেরেছে। বাত একটার সময় বন্ড জিতেছে চল্লিশ লক্ষ। ফলে তার মোট মূলধন দুকোটি আশি লক্ষ। অতি সতর্ক হয়ে খেলছে সে। টেবিল ঘিরে সবাই চুপচাপ। ক্রুপিয়ের থেকে তার সংখ্যা ঘোষণা করে যাচ্ছে।
–এখন জমা হয়েছে চল্লিশ লক্ষ।
–আছি–বন্ড বলল।
এরপর আশি লক্ষ। বন্ড বলল— লেট আস গো অন্।
এবার ল্য শিফ জিতছে। বন্ডের হাতের তালু ঘর্মাক্ত।ল্য শিফের চোখে কৌতুক— আরও দম আছে? বন্ড বলছে–চলুক।
শেষবাজি! ক্লাইমেক্স!
সাবধানে দান দিল ল্য শিফ। শেষ তাস চার তুলে সে পৌঁছলো নয়ে।
বন্ড পরাস্ত! সর্বস্বান্ত। ফতুর!!
১২. এখন কী করণীয়
এখন কী করণীয়?
রুটিন কাজ— হোটেলে ফেরা, শয্যাগ্রহণ, লন্ডনে ফোন, পরের দিন প্লেন ধরা। ট্যাক্সিতে রিজেন্ট পার্ক। সিঁড়ি দিয়ে উঠে এম-এর সামনে। কর্তাদের কৃত্রিম সান্ত্বনা বাক্য।
অলরাইট! নেক্সট টাইম—
নেক্সট টাইম আর আসবে না— সেটা ভালোই জানে বন্ড।
উঠে দাঁড়িয়ে সে আশ্চর্য হয়ে দেখল ভেসপার লিন্ডের হাসিমুখ। হাসি! আশ্চর্য! একটা মোটা খাম সে নীচু হয়ে এগিয়ে দিল। বেশ মোটা খাম— ডিকশনারির মতো। মুখটা আঠা দিয়ে আঁটা।