এখন নটা কুড়ি। ল্য শিফের সঙ্গে লড়াই তো আরম্ভ হয়ে গেছে।
পোশাক পরতে পরতে আয়নায় নিজের চেহারাটাও ভালো করে দেখল বন্ড। ডানগালের কাটা দাগটার জন্য মুখটা একটু ভিলেন টাইপের হয়ে গেছে বটে, কিন্তু সব মিলিয়ে চেহারাটা বেশ আকর্ষণীয় আছে।
হিপ পকেটে সিগারেট কেস নিয়ে সে আবার পরীক্ষা করল লাইটারে গ্যাস আছে কিনা। পকেটে এক বান্ডিল দশ হাজারর নোট, তারপর সেফটি ক্যাচ লাগিয়ে লোডেড ২৫ অটোমেটিক রিভলবারটাও নিল। গায়ে চড়াল একটা প্রিন্টেড জ্যাকেট।
হঠাৎ লিফট খোলার শব্দ।
–গুড ইভিনিং।
মিস লিন্ড! বন্ড সামান্য উত্তেজিত। মিস লিন্ড লিফটের কাছেই দাঁড়িয়ে। কালো ভেলভেটের ড্রেস, গলায় সরু হিরের নেকলেস। বুকের কাছটা V শেপে কাটা, সেখানেই লকেটটা।
–বাঃ, ইউ আর লুকিং ফাইন।
সোজাসুজি বন্ডের হাত ধরে মিস লিন্ড বলল–চলুন আগে খেয়ে নিই। আপত্তি নেই তো?
সামান্য হাসি-ঠাট্টা! ততক্ষণের খাদ্যের সঙ্গে সামান্য পানীয়ও এসে গেছে। এই রেস্টুরেন্টের একটা অংশ জাহাজের মতো বাগানের দিকে ঢুকে গেছে। এই জায়গাটা বেশ জাঁকজমকপূর্ণ।
মিস লিন্ড অবশ্য তার পছন্দমতো পানীয়ের অর্ডার দিল।
বন্ড বলল— আজকে আপনার পোশাক মুগ্ধ করার মতো। এবার আপনার নামটা বলুন।
–ভেসপার। ভেসপার লিন্ড! আমার জন্ম এক ঝড়ের সন্ধ্যায়। তাই নিজের নামের তাৎপর্য। ব্যাখ্যা করতে হয় অনেক সময়। নামটা কারুর ভালো লাগে, কারুর লাগে না।
–আমার ভালো লেগেছে।
কিছু হালকা সুন্দর কথাবার্তা।
বন্ড বলল— এবার খাবারের অর্ডার দিই?
-হ্যাঁ, লাখোপতির উপযুক্ত আইটেম চাই।
–বুঝিয়ে দিন।
–যেমন, ক্যাভিয়ার দিয়ে শুরু হোক। তারপর গ্রিলড় রোভোন দ্য ভো। সঙ্গে পোম্ সুফল। তারপর ফেজ দ্য বোয়া ক্রিম! …ইস, খুব নির্লজ্জের মতো কথা বলছি। তাইনা?
–নট অ্যাট অল! তবে প্রচুর টোস্ট চাই। নইলে খাবারটা জুতসই হবে না।
এরপর আরও কিছুক্ষণ পানীয় বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করল বন্ড। টর্নেডো, সঙ্গে বার্নিস স। স্ট্রবেরি, আভাকাভো পেয়ার সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ড্রেসিং।
এরপরেই শেষ নেই। শেষরাতে দুজনেই শ্যাম্পেন খাওয়ার পরিকল্পনা করল।
বাটলারও কমতি নয়। সে সুপারিশ করল–-ব্লা দ্য ব্লা ব্রাট ১৯৪৩! বলল–এটাকেই বলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শ্যাম্পেন।
বন্ড বলল— অবিবাহিতদের দোষ সব কিছু খুঁচিয়ে দেখা।
–আমারও সেই অভ্যাস। তবে আমাকে বোধহয় মানায় না।
গেলাস তুলে বলল–আজ রাতে কথাবার্তা ঠিক হবে মনে হয়।
বন্ড চুপ করে শুনছে।
ভেসপার বলল–হ্যাঁ, ভালো কথা। ম্যাথুস খবর পাঠিয়েছে ওই বোমাবিস্ফোরণ সম্বন্ধে। খবরটা অদ্ভুত, গল্পের মতো।
০৯. কথাবার্তা জমে উঠেছে
খাওয়া শেষ হয়নি। কথাবার্তা জমে উঠেছে।
বন্ড বলল–আপনিই বলুন না গল্পটা।
–বেশ। শুনুন, তৃতীয় বুলগেরিয়ানটা অ্যারেস্টেড হয়েছে। প্যারিসে পালাতে চাইছিল। পথে দুজন ইংরেজকে গাড়িতে তুলেছিল। সে একজন পুলিশকে মাথায় গুলি করে মেরেছে। অপরজন ওকে পাকড়াও করেছে। সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। পরে রুয়েনে নিয়ে গিয়ে ওর সব কথা পেট থেকে বের করা হল।
–কী কথা?
–ওদের দল ফ্রান্সে নানারকম স্যাবোটেজের কাজ করে। আরও দল আছে ওদের। আপনাকে খুন করার জন্য ওদের কুড়ি লাখ ফ্লা দেওয়া হবে ঠিক হয়েছিল।
–তারপর?
–হ্যাঁ, তারপরেই আসল কথা। এজেন্ট ওদের দুটো ক্যামেরা কেস দেয়— লাল-নীল রং–আপনি দেখেছেন সেগুলো। নীল কেসে স্মোক্ বোম, লাল কেসে আসল বোমা। ওদের প্ল্যান ছিল, বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া সৃষ্টি করে পালাবে। কিন্তু আসলে ওরা জানত না–দুটি কেসেই বিস্ফোরক বোমা আছে। লাল-নীলে তফাত নেই।
বন্ড চমৎকৃত– তারপর?
–আসলে বুলগেরিয়ানরা কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি। আগে ধোঁয়া বোমা এবং পরে আসল বোমাটা ছুড়বে ভেবেছিল। কিন্তু ধোঁয়া বোমা বলে কিছু ছিল না। দুটোই ছিল বিস্ফোরক বোমা। সুতরাং দুজনেই খতম।
–তিন নম্বর লোকটা কী করল?
–সে যখন দেখল ধরা পড়ে গেছে, পুলিশ ওকে না-ফাটা লালরঙা বোমাটা দেখাল, তখন ও সবই বলে দেয়। তবে এখনও জেরা চলছে, তবে সে ল্য শিফের নাম শোনেনি।
বন্ড বলল–তাহলে আমাকে খুন করতে এসে খুনিরাই মারা গেল। মজা এই যে, নিজেরাই নিজেদের মারল। ম্যাথুস খুশি হবে, পাঁচজন শত্ৰু চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে খতম!…. যা হোক, এবার বলো, এই লাইনে তুমি কী করে এলে? কোনো বিভাগে করছ?
–আমি হেড অব এস-এর পি. এ.। যোগাযোগ রাখার কাজ!…. আচ্ছা, আপনি নাকি এসব কাজে কোনো মেয়েকে দেখালে রেগে যান?
বন্ড চুপ করে রইল।
লিন্ড জানাল, সে ম্যাথুসের সঙ্গে প্যারিসে কাজ করেছে। বলল— আপনাকে কিন্তু সবাই হিংসে করে।
–কারণ?
–কারণ, আপনি আমাদের হিরো।
বন্ড ভাবল, এই হচ্ছে ডবল জিরোর ইমেজ! খুন করার বাহাদুরি। আমি দুটো খুন করে এই পজিশন পেয়েছি–নিউইয়র্কে এক জাপানি জ্যোতিষী, আর স্টকহোমে এক নরোয়েজিয়ান ডবল এজেন্টকে।
বন্ড বলল—আমি এখানে এসেছি সম্পূর্ণ কাজের উদ্দেশ্যে। কাজের নানাদিক আছে, নানারকম সম্ভাব্য ফলাফল আছে।
সেসব বোঝাবার সময় দ্বিতীয় দফায় খাবার এল। বন্ডকে একটু কঠোর লোক বলেই মনে হচ্ছে তার। বস বলেছিল–বন্ড কাজ-পাগলা লোক। কাজেই প্রধান ওর কাছে, অন্য দিকে বেশি মন নেই। তবে সুন্দর চেহারা, ওকে দেখে অনেকেই ভালোবেসে ফেলবে। মনে রেখো, ওর হৃদয় বলে কিছু নেই।