টেলিফোন রাখল ম্যাথুস। বন্ডকে বলল–ওঃ, ভাগ্যের জোরে বেঁচে গেছ। তোমাকে লক্ষ করে বোমা ছুঁড়ে গাছের আড়ালে লুকাতে চাইছিল। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে অন্যরকম হয়ে গেছে ব্যাপারটা। বুঝতে পারছি–ওরা তোমাকে এখনই খুব গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ আবার কেমন কথা!
অপমানিত মুখে ম্যাথুস বলছে–শয়তান বুলগেরিয়ান দুটো পালাল কোথায়? লাল বাক্সের টুকরোটায় কী আছে দেখা দরকার।
বলল–আমি যাই, পুলিশকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে হবে।
একা ঘরে বন্ড। চুপচাপ শুয়ে রইল।
খাবার এল। হ্যাঁ, দারুণ খিদে পেয়েছে।
খাবারের প্লেটে হাত দিতে রিং রিং টেলিফোন রিসিভার তুলতেই ওপারে নারীকণ্ঠ— আমি লিন্ড বলছি। আপনার কিছু হয়নি তো?
–না, না, আমি ঠিক আছি।
–যাক। কিন্তু সাবধানে থাকবেন।
বন্ড কিছু বলার আগেই ফোন রেখে দিল সে।
০৭. জুয়া শেষ হতে ভোর
মনে হয়, জুয়া শেষ হতে ভোর হয়ে যাবে।
বন্ড একজনকে ডেকে পাঠিয়েছিল। তার আসার কথা তিনটের সময়। খাবার পর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজের চিন্তায় ড়ুবেছিল বন্ড।
দরজায় টোকা। লোকটি এসেছে, সুইডিশ।
কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করল সে, পা থেকে ঘাড় পর্যন্ত। ম্যাসেজের আরামে ঘুমিয়ে পড়ল বড়।
এবার ক্যাসিনো। জুয়াড়ির পেশাগত গুণগুলো চিন্তা করে নিল সে ধৈর্য, আশা এবং অঙ্কজ্ঞান। বন্ডকে অবশ্য বলা যায়–জন্ম জুয়াড়ি।
তাসের খসখস আওয়াজের মধ্যে একটা মনোমুগ্ধকর ব্যাপার আছে। খেলা চলবে, দামি পানীয় পাওয়া যাবে। শ্যাম্পেন তো থাকবেই। নিজের চেয়ারে বসে সে একাধারে অভিনেতা এবং দর্শক। বেশ ইনটারেস্টিং লাগে ব্যাপারটা। ভাগ্যকে মানুষ চালায়। ভাগ্য মানুষকে নয়। ভালোমন্দ যাই হোক না কেন, সংযমী-নিস্পৃহ থাকতে হবে। বন্ডের সৌভাগ্য, এখনও পর্যন্ত জুয়া তার কোনো ক্ষতি করেনি। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে—
আজকেও বন্ডের মনে আত্মবিশ্বাস অটুট। প্রথমে খেলার ধারাটা লক্ষ করল সে। একটা বল, সেটাকে মার্কামারা জায়গায় ফেলতে হবে।
রিপোর্টে এতক্ষণের খেলার বিবরণ যা লেখা আছে, তাতে তেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নজরে এল না। সুতরাং ভেবেচিন্তে খেলা শুরু করল সে। দফায় দফায় এক লাখ ফ্ৰা জিততে থাকল।
দেখতে দেখতে সংখ্যাটা পৌঁছে গেল দশ লাখ ফ্রাঁতে। অবশ্য যোগ বিয়োগ মিলিয়ে, কারণ ইতিমধ্যে বন্ড একবার চার লাখ ফ্রাঁ হেরেছে। সুতরাং বন্ড এবার আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করল। এবং পরপর জিততে থাকল।
উলটো দিকে বসেছিল এক আমেরিকান। মনে হল, সে বন্ডের হয়ে খুব উৎফুল্ল। বন্ড যে খেলা ছেড়ে উঠল, সে-ও উঠে দাঁড়াল। নিজেই যেচে বন্ডের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল— দারুণ খেলেছেন। চলুন, দু-এক পেগ খাওয়া যাক।
বন্ড অবশ্য নিশ্চিত, এ সি. আই.এ-র লোক, লোকটির নাম ফেলিক্স লিটার।
নানারকম কায়দা করে একটা পানীয়ের অর্ডার দিল লোকটি।
বারম্যানকে ঠিকমতো বোঝাতে তার সময় লাগল।
বন্ড বলল— আমি এখন বেশ ব্যস্ত। সবসময় কাজের চিন্তা রয়েছে। তাই ডিনারের আগে এসব পান করিনা।
এবার পানীয় নিয়ে বন্ড তার নিজের বিদ্যার কিছু নমুনা পেশ করল। বারম্যানকে বললপানীয়টা আলুর বদলে অন্য শস্য থেকে নিলে আরও ভালো হত। যাইহোক, খুব ভালো হয়েছে।
লিটার মন্তব্য করল–এটা ককটেল! এবং আজ দুপুরে যা ঘটে গেল, তাকে বলা যায় মলোটভ ককটেল।
বন্ড জিজ্ঞেস করল–ব্যাপাবটা কী হয়েছিল বলে আপনার মনে হয়?
–কেউ বলছে, কম্যুনিস্টদের অন্তর্কলহ। কেউ বলছে। গ্যাসের শেল ফেটেছে। সৌভাগ্যের কথা, আপনি বেঁচে গেছেন।
–তা বলতে পারেন।
–দেখুন। আমরা এই কেসটাতে ইনটারেস্টেড। ওয়াশিংটন চাইছে, আমরা টেক-আপ করি, কিন্তু আপনি তো লন্ডনের নির্দেশে কাজে নেমে পড়েছেন। তাইনা?
–তাতো বটেই।
–তবু বলছি, আমরা আপনার পাশে আছি। যখন যা প্রয়োজন হবে বিনা দ্বিধায় বলতে পারেন।
–হুঁ! ল্য শিফ এখন বেপরোয়া। স্বাভাবিক। তবে এই মুহূর্তে আমরা তেমন কিছু বলতে পারছি না। তবে আজ রাতে ক্যাসিনোতে আমার কাছাকাছি থাকবেন। আমার সহকারী মিস লিস্তকে একটু দেখবেন।…. তাছাড়া, ল্য শিফের বডিগার্ড দুটোর ওপর নজর রাখলে ভালো হয়।
–মেরিন কোর কাকে বলে জানেন?
–জানি।
–আমি আগে ওখানে কাজ করেছি। সুতরাং আমাকে আপনার কাজে লাগবে মনে হয়। জানা গেল, লিটার টেক্সাসে থাকে। ন্যাটোর জয়েন্ট ইনটেলিজেন্স-এ কাজ করত একসময়ে। বয়েস পঁয়ত্রিশ, লম্বা-পাতলা চেহারা। আস্তে কথা বলে, কিন্তু যথেষ্ট দৈহিক শক্তি আছে বোঝা যায়। ওর সঙ্গে মুনজদের সম্পর্কে কিছু কথা হল। তাছাড়া ল্য শিফের ভিলার কথাও উঠল।
সাড়ে সাতটা। ওরা হেঁটে হোটেল পর্যন্ত যাবে।
বেরোবার আগে বন্ড সব টাকা—দুকোটি চার লক্ষ ফ্রা-ক্যাশিয়ারের কাছে রেখে দিল। কয়েকটা দশ হাজারের নোট সঙ্গে রইল।
রাস্তায় বোমাবিধ্বস্ত জায়গাটায় মেরামতের কাজ চলেছে। উপড়ে-যাওয়া গাছ দুটো সবানো হয়েছে। হার্মিটেজের সামনের দিকটাও সারানো হয়ে গেছে।
রয়্যাল লিজো আবার স্বাভাবিক চেহারা ফিরে পেয়েছে।
লিটার জিজ্ঞেস করল কেয়ারটেকারটাকে আপনার কেমন মনে হয়?
বন্ডকে ম্যাথুস বলেছিল, সব কেয়ারটেকার টাকা খায়। সমাদরটা ওদের কৃত্রিম ব্যবহার। তবু এই নিয়ে বিশেষ কথা হল না। আবার আসল রূপ প্রকাশ পাবে খেলার সময়।
ক্যাসিনোতে পরের রাউন্ড খেলা এগারোটায়।
০৮. আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ
নিজের ঘরে এসে আবার সাবধানী পর্যবেক্ষণ সারল বন্ড। তারপরে যথারীতি শাওয়ারবাথ, এবং শয্যায় টান হয়ে শোওয়া। চিন্তার পর্দায় ছবি উঠছে—ম্যাথুস, লিটার আর মিস লিন্ড। কার কী ভূমিকা, সেটা বোঝা যাবে ঠিক সময়েই।