মাঝে মাঝে অজানা লোকের কাছ থেকে টেলিফোনে আদেশ পেত সে। এবং সেই আদেশ ঠিকমতো সময়মাফিক পালন করতে হত। পুরো ব্যাপারটাই ছিল টপ সিক্রেট। এর জন্য সে মাসে অতিবিক্ত কুড়ি পাউন্ড পেত। ব্যাংকে জমা পডত টাকা; সবাই জানত তার এক আত্মীয ইংল্যান্ড থেকে টাকা পাঠাচ্ছে।
ফসেটের বর্তমানে কাজ এই অজানা ব্যক্তির নির্দেশগুলো ঠিকমতো বন্ডকে জানিয়ে দেওয়া। কেন, ফসেটের মাধ্যমে কেন? কারণ, ফসেটকে জ্যামাইকার পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট কোনো সন্দেহ করবে না। তাছাড়া সে এখন ম্যারিটাইম বেস এন্ড ফোটো এজেন্সির সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করে। ইংল্যান্ডে ও ফ্রান্সে কিছু বিশে সুযোগ পায়। ফলে উপরি টাকা মাসিক আরও দশ পাউন্ড।
উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে করতে একটা গাড়ি বুক করে বসল সে। অফিসেও একটা সবুজ রঙের আই-শেড চোখে লাগিয়ে ডেস্কে বসে কাজ করত। এমন একটা ব্যক্তিত্ব তৈরি করল যে, সবাই তাকে মান্য করতে বাধ্য।
বন্ড ভাবছে–এটাই ভালো, মানে এই ঘুরপথে নির্দেশ আসা। হয়তো এই শহরে সিক্রেট সার্ভিসের আরও লোক আছে। রিজেন্ট পার্কের হেড কোয়ার্টার থেকে ফন্দিফিকির আঁটছে–অর্থাৎ মাত্র ১৫০ মাইল দূর থেকে। তাছাড়া কিংস্টোনে বসে একবারে গাড়ি কেনা সহজ হবে না লন্ডন থেকে প্রশ্ন উঠবে।
বন্ড টেলিগ্রামের উত্তর দিল–ধন্যবাদ .. এই দিয়েই কাজ হবে… বন্ড।
টেলিগ্রামটা আর কে করে ফেলেছে কে জানে! কেউ হয়তো কপি করে নিয়েছে। কেয়ারটেকারকে ঘুস দেওয়া সোজা ব্যাপার।
গুড নাইট!
বন্ড লিফটে উঠতে গিয়ে থেমে গেল। না, লিফটে সে উঠবে না। লিফটে সবসময় সিগন্যাল ফিট করা থাকে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠাই ভালো। ধীর পদক্ষেপে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বন্ড এম–কে পাঠানো খবরটার কথাই চিন্তা করছিল। এটা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। জুয়া খেলতে গিয়ে সে শিখেছে, অল্প মূলধন নিয়ে কাজে নামা ঠিক নয়। যাকগে, যা হবার হয়ে গেছে। তাছাড়া এম-এর বেশি টাকা দিতও না।
হঠাৎ কী ভেবে এক নিমেষে আলো জ্বেলে দরজা খুলল। বলাবাহুল্য তার হাতে এখন উদ্যত রিভলবার। ঘর অবশ্য খালি… কিন্তু একী! বাথরুমেব দরজাটা অর্ধেক খোলা! কিন্তু সেটাও বড়ো ব্যাপার নয়। রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করে দিল বন্ড। টেবিলের কাছে এসে মনোযোগ দিয়ে কী যেন দেখল! আসলে দু এক গাছি চুল টেবিলের ড্রয়ারে আটকে রেখেছিল সে। দেখল, সেগুলো ঠিকই আছে। আলমারির কাচের হাতলের ওপর পাউডার ছড়িয়ে দিয়েছিল। না, কারো হাতের ছাপ নেই সেখানে। বাথরুমের রিজার্ভারে জলের লেভেলে একটা আঁচড় দিয়ে মার্কা করে রাখা হয়েছিল। জল ঠিক লেভেলেই আছে।
সিক্রেট সার্ভিসের লোকেরা জানে–এরকম ছোটোখাটো কাজগুলো করতে হয়। আত্মরক্ষার জন্য, সাবধানতার জন্য। প্রতি পদে বিপদ। হাঁ করে ওৎ পেতে বয়েছে। সবসময় মৃত্যুর পাশে পাশে তাদের জীবন কাটে। এদেব সঙ্গে তুলনা করা যায় গভীব জলের ড়ুবুবি বা টেস্ট পাইলটের জীবনের। সবসময় মৃত্যু নিয়ে খেলা–এটাই কাজ। এটাই জীবিকা।
যাই হোক, এখন বোঝা যাচ্ছে, এই ঘরে কেউ ঢোকে নি। আপাতত নিশ্চিন্ত মনে স্নান সারল বন্ড। তারপর টাকার হিসেব শেষ হল। নোটবুকে কয়েকটা সংখ্যা টুকতে হল! হ্যাঁ ঠিকই দু দিনেব জিত তিবিশ লাখ। লন্ডনে সে পায় এক কোটি, চাওয়া হয়েছিল আরও এক কোটি। টেলিগ্রাম বলছে সেটা আসছে। সুতরাং, আপাতত সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে–দুকোটি তিরিশ লাখ ফ্রাঁ–মানে তেইশ হাজার পাউন্ড।
সিগারেট ধরাল বন্ড। এই নিয়ে আজ সাবাদিনে সত্তরটা সিগারেট খরচ হল। আলো নিভিয়ে জানলা দিয়ে কিছুক্ষণ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল সে। তারপর বালিশের তলায় নোটের বান্ডিল এবং ৩৮ কোল্ট পুলিশ পজিটিভ রিভলভারটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।
০২. দুসপ্তাহ কেটে গেল
দুসপ্তাহ কেটে গেল।
হঠাৎ, এম এর কাছে পৌঁছে গেল ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের চিঠি। বিভাগীয় প্রধান লিখেছেন (বার্তার স্টাইলে)–
…. টু এম
ফ্রম দ্য চিফ অব দ্য ডিফেন্স মিনিস্ট্রি,
ইংল্যান্ড,
বিষয় : মঁসিয়ে ল্য শিফকে ধ্বংসের পরিকল্পনা। (ল্য শিফ দা নামবার, হের নামবার, হির জিফার….)।ল্য শি শত্ৰুদলের চিফ এজেন্ট, ফ্রান্সে। আলসেস-এর শিল্পাঞ্চলে কম্যুনিস্ট প্রভাবিত ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে গোপনে অর্থ দেয়। এই ট্রেড ইউনিয়ন যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের হয়ে স্পাইং করতে পারে–এটা আমরা জানি। বার্তায় আরও জানানো হয়েছে, আমাদের অনুমান ল্য শিফ আগুন নিয়ে খেলছে। স্মার্শ এবং গুপ্তচর সংস্থা তবে সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এদের সোভিয়েট রাশিয়ার উপযুক্ত এজেন্ট বলা যায়। কিন্তু তাদের কতগুলো নীতিগত দুর্বলতা রয়ে গেছে, সেটা আমরা জেনেছি। ল্য শিফের একজন বান্ধবী আছে (নং ১৮৬০), সে আমাদেরই লোক। স্টেশন এফ থেকে নির্দেশ পেয়ে সে ল্য শিফ সম্পর্কে অনেক ব্যক্তিগত ঘটনা আমাদের জানিয়েছে।
…এখন ল্য শিফের চরম আর্থিক সংকট চলছে। নং ১৮৬০ জানিয়েছে, ল্য শিফ গয়না বিক্রি করেছে, অ্যান্টিবেসের বাড়িটাও বিক্রি করেছে। আগে সে যথেচ্ছ খরচ করত, কিন্তু এখন ব্যয়বাহুল্য সংযত করেছে। এই কেস-এ আমাদের সাহায্য করছেন দোয়াজিয়েম ব্যুরো।
তাছাড়া ১৯৪৬-এর জানুয়ারিতে ল্য শিফ কতগুলি খারাপ ব্যবসার মালিক হয়ে ওঠে। কর্ডন জুন নামে পরিচিত এই সংস্থার অনেকগুলো ব্রাঞ্চ আছে নৰ্মান ডি এবং ব্রিটানিতে। এই আপত্তিকর সংস্থাটি কেনার জন্য সে পাঁচকোটি ফ্রাঁ ব্যয় করে। লেনিনগ্রাড থেকে ফ্রান্সের ট্রেড ইউনিয়নকে যে টাকা দেওয়া হত ল্য শিফের মাধ্যমে, সেই টাকা এই খারাপ ব্যবসায়ে লাগিয়ে সে বিরাট বোকামি করেছে। যদি টাকা খাটিয়ে ইউনিয়নের সম্পত্তি বাড়ানো তার উদ্দেশ্য হত, সেদিক থেকে অবশ্য এই খারাপ ব্যবসাটাই ভালো ছিল। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি, এবং সেইসঙ্গে নিন্দনীয় আত্মতৃপ্তি। ফলে যা হবার তাই হল।