-তুমি কি আমার সঙ্গে…।
বন্ড থেমে যায়। না, মনের সব কথা কোনো সুন্দরী মহিলাকে সবসময় উচিত নয় বলা।
বন্ড শুধু বলে–ও. কে., ও. কে.। রিল্যাক্স। আগে তো পেটভরে খেয়ে নাও। পরে আমরা আমাদের কাজের বিষয় ও অন্যান্য সবকিছু নিয়ে ফ্রিলি আলোচনা করব।
বলে বন্ড ভেসপারের গ্লাসে আবার শ্যাম্পেন ঢেলে দেয়।
ওদের খাওয়া শেষ হয়। বয় এসে খাবারের প্লেট, বোতল সব তুলে নিয়ে যায়।
বন্ড বলে–চল, সমুদ্রের ধার থেকে ঘুরে আসি।
সমুদ্রের ধারে বসে, কিছুক্ষণ শুয়ে ওরা অনেকক্ষণ গল্প করল।
বন্ড শুয়ে শুয়ে সিগারেট টানছিল। ভেসপার বলে–কী ভাবছ?
সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বন্ড বলে–ভাবছি বিগত কয়েকটা দিনের কথা। কীভাবে যে আমি বেঁচে ফিরলাম। সত্যি আশ্চর্য! এখনও কাজ বাকি আছে।
বন্ডের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে ভেসপার বলে–কী কাজ? কোনটা?
–যথাসময়ে জানতে পারবে।–বলে বন্ড হাতঘড়ির দিকে তাকায়।
রাত আটটা।
খুব ভোরে ঘুম ভাঙল বন্ডের। সিগারেট ধরিয়ে জানলার সামনে দাঁড়াল। ভোরের সূর্যের রঙে সমুদ্রের এ এক অন্য রূপ। প্রকৃতির এ রূপকে বন্ড অগ্রাহ্য করতে পারল না।
ভেসপার এখনও ঘুমোচ্ছে। ওর সম্বন্ধে আজকেই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে। থাক, ঘুমোক ভেসপার। ওর ওপর দিয়েও তো কম অত্যাচার হয়নি।
না, আর দেরি নয়। এরপর দেরি করলে প্রকৃতির এই রূপদর্শন থেকে সে বঞ্চিত হবে।
সুইমিং কমটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বন্ড সমুদ্রের উদ্দেশে।
বন্ডের পা এখন সমুদ্রের জলে।
২৫. এখন হোটেল অন্ধকার
এখন হোটেল অন্ধকার, কেন?
একটা টেলিফোন বুথ থেকে ভেসপার বেরিয়ে আসছে। বন্ডের চিৎকার শুনে সে ফিরে দাঁড়াল। মুখে হাত চেপে দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
বন্ড বলল–কী ব্যাপার? কী হয়েছে তোমার?
–তেমন কিছু না। পরার মতো ড্রেস নেই। জামাকাপড়ের দোকানে এক বান্ধবীর খোঁজ করছিলাম। ম্যাথুসকেও জানাচ্ছিলাম, যদি কিছু পোশাক জোগাড় করে দিতে পারে।
–কিন্তু তুমি তো সি বিচে এলে না?
–যেতাম। তুমি অপেক্ষা করলে না কেন?
–যাকগে! চলো, আমরা বাইরে ব্রেকফাস্ট সারি।
ভেসপারকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ। বন্ডের মনটাও নরম হয়ে যাচ্ছে। বন্ড বলল–তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।
সুন্দর কাটল কয়েকটা দিন। বেশ অন্তরঙ্গভাবেই।
কিন্তু ক্রমশ একঘেয়ে লাগছে। নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব দেখা দিল। সেদিন ওই টেলিফোনটা আসলে কাকে করেছিল ভেসপার। জামাকাপড়ের এতই অভাব দেখা দিল? ড্রেস নেই— ব্যাপারটা স্রেফ ছুতো! আজও বন্ড জানতে পারেনি। টেলিফোন বুথ থেকে কাকে ফোন করেছিল ভেসপার লিন্ড!
সম্পর্কটায় আর জোড়াতালি দেওয়া গেল না।
ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনারে দেখা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কথাবার্তার সুর পালটে গেছে। ভেসপারই উদাসীন। হাঁ করে দায়সারা উত্তর সারছে।
হঠাৎ অন্যমনস্ক ভেসপার যেন চমকে উঠল। হাতে খাবারের কাটাটা ঝনঝন করে মেঝেতে পড়ে গেল।
উলটোদিকের টেবিলে একটা লোক এসে বসেছে। ভেসপার তাকে দেখেই চমকে উঠেছে, ফ্যাকাসে মুখ!
–কী ব্যাপার, ডার্লিং?
–সেই লোকটা।
–কোন লোক?
–সেই গাড়ির লোক, যে গাড়িটা আমাদের ফলো করেছিল।
লোকটি এখন মেনুকার্ড দেখছে। খাবার পছন্দ করছে। খাবারের সঙ্গে ওয়াইনের অর্ডার দিল সে। বোধহয় বুঝতে পারল সে এখন কারুরলক্ষ্যবস্তু। তাই খবরের কাগজের পাতায় মন দেওয়ার ভান করল।
লোকটার একটা চোখ ঢাকা। কালো কাপড়ের ব্যান্ডেজ করা একচক্ষু দানবের মতো দেখায় মুখটা। চোখের কভারটা ক্রু দিয়ে আটকানো!
বন্ড বোঝাল–বাদ দাও! হোক না কেউ, কী করা যাবে? কিন্তু ভেসপার উত্তেজিত। চাপা উত্তেজনা। সামলাতে গিয়ে থরথর করে কাপছে সে। গেলাস তুলতে গিয়েও তার হাতে কম্পন! ভেসপার বিড়বিড় করল–সেই লোক! আমি নিশ্চিত, এ সেই লোক!
মাথা ধরার অজুহাত দেখিয়ে উঠে পড়ল ভেসপার।
–একী।
–ভীষণ মাথা ধরেছে। দুপুরে ঘরেই থাকব।
দ্রুত বেরিয়ে গেল ভেসপার।
বন্ড কফির অর্ডার দিল। একটু দেরি আছে। সে বাইরে এসে একটা গাড়ি লক্ষ করল। খুব সম্ভব এই লোকটার গাড়ি! এটাই কি ওদের ফলো করেছিল? নম্বর প্লেটটা দেখল। লাগেজ ক্যারিয়ারে তালা-আঁটা।
রেস্টুরেন্টে ফিরে এল বন্ড।
লোকটি আহাররত।
বন্ডের কফি এল। প্রোপ্রাইটারকে ডাকল বন্ড। সে লোকটির সঙ্গে খাবার বাছাই-এর সময় হেসে হেসে কথা বলছিল।
–আচ্ছা, ওই লোকটা কে বলুন তো? আপনার পরিচিত?
–মোটেই না। কেন বলুন তো?
–না, আমার এক বন্ধুও ওইরকম চোখে কালো কভার বাঁধে। অনেকদিন দেখা হয় না। ভাবলাম, ও নাকি! হয়তো আপনার জানাশোনা, তাই–
প্রোপ্রাইটর-এর কাছ থেকে অন্য একটা বিষয় জানতে পারল বন্ড। এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, এখানকার একজন গেস্ট প্যারিসে ফোন করেছিল, কিন্তু নো রিপ্লাই হয়েছে। তারা নাকি মাদাম, অর্থাৎ ভেসপারের খোঁজ করছিল! একটা নম্বর দিয়েছে, মাদামের কি সেটা দরকার?
২৬. আরও তিনটে দিন
আরও তিনটে দিন পার হয়ে গেল।
ভেসপার একবার রয়্যালে গিয়েছিল। ফিরে এসে জানাল, ওর কতগুলো ওষুধের খুব প্রয়োজন ছিল। হঠাৎ সে খুব উল্লসিত। আসল, না নকল, কে জানে। কিন্তু বহুদিন বাদে বন্ডের সঙ্গে হাসিঠাট্টা-আদর-আহ্লাদের মধ্যে রাতটা কাটিয়ে দিল সে।
আশ্চর্য, ভোরবেলা কান্না। গমকে গমকে কান্নায় ভেঙে পড়ছে। বন্ড ব্যাপারটা ধরতে পারল না।
ভোরবেলায় চুপি চুপি নীচে গেল ভেসপার।