বন্ড তা বুঝতে পারে। বলে–ভেসপার, এখন অভিমান করে থেকো না। চল, ঘরে গিয়ে আমরা বসে কফি খাব।–বন্ড ওর একটা হাত ধরে।
কফি খেতে খেতে ঘরে বসে জানলা দিয়ে ওরা রহস্যময়ী সমুদ্রের ক্রীড়াশৈলী দেখছিল।
কফিতে চুমুক দিয়ে বন্ড বলে–একটা ব্যাপার লক্ষ করেছ ভেসপার?
–কী?
–ওই যে সমুদ্র; এত গর্জন, এত আস্ফালন–দেখো, শেষ পর্যন্ত এক জায়গায় এসে তাকে মাটির সাথে মিশে যেতে হচ্ছে। সত্যি, ভাবতেও বেশ লাগে।
ভেসপার হেসে ওঠে। তারপর চেয়ারের পিছনে এসে বন্ডের দুই কাঁধে হাত রেখে সে বলে–রিয়েলি! তুমি যেন কবি হয়ে উঠছ।
বন্ড সিগারেট ধরায়। তারপর চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়ায়।
সমুদ্রের দৃশ্য। সমুদ্রের ওপর মুক্ত নীল আকাশের নীচে সামুদ্রিক পাখির দল তাদের ডানা মেলে আনন্দে মাতোয়ারা যেন। সমুদ্রের ধ্বনির সাথে পাখিদের কলতান মিশে অন্য এক সংগীতের সৃষ্টি করেছে।
ভেসপার বলে–আমি চললাম নিজের ঘরে। যাই, স্নানটা সেরে নিই।
বন্ডের দৃষ্টি ধরে রেখেছে সমুদ্র ও নীলাকাশ। হাতে সিগারেটটা পুড়ে চলেছে।
—কী হল? কী ভাবছ?
চমকে ওঠে যেন বন্ড। ঘাড় ঘুরিয়ে ভেসপারের দিকে তাকাতেই তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়–ভাবছি, সমুদ্রের সঙ্গে কিছুক্ষণ খেলা করে আসি।
–হোয়াট? খেলা করবে মানে?
–মানে… ঘুরে দাঁড়িয়ে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বন্ড হেসে বলে বুঝতে পারলে না। চল, আমরা দুজনে স্নান করে আসি।
ভেসপার বলে না তুমি যাও। আমার এখন সমুদ্রস্নানের মুড নেই। আমি বাথরুমেই স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে রেস্ট নেব কিছুক্ষণ।
–ও. কে.। অ্যাজ ইউ লাইক।
ভেসপার নিজের ঘরে চলে যায়।
বন্ড অ্যাশট্রেতে সিগারেটটা খুঁজে স্যুটকেসটা খুলে সুইমিং কমটা পরে তার ওপর একটা গাউনমতো চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে।
সি-বিচের ওপর দিয়ে বন্ড হেঁটে চলেছে। চারদিক তাকিয়ে দেখল ভালোভাবে–না, ওর দৃষ্টিতে কোনো সমুদ্র দর্শনার্থী বা স্নানার্থীকে চোখে পড়ছে না। কোমরে হাত দেয় বন্ড বেখেয়ালে। না, মনে হয়, ছোটো যন্ত্রটির কোনো প্রয়োজন নেই এখানে।
আবার হাঁটতে শুরু করে বন্ড। সমুদ্রের ঢেউ এসে তার হাঁটু পর্যন্ত ভিজিয়ে দিয়ে চলে যায়। জল পিছন দিকে সরে যাবার সময় মনে হচ্ছে যেন, পা বোধহয় বালির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। মন্দ লাগছে না।
বন্ড এখন সি-বিচের ওপর শুয়ে। পাশে গাউনটা রাখা আছে।
ভেসপারের কথা হঠাৎ মনে আসে তার আরও নানা চিন্তার মধ্যে। বন্ড ভাবে–ভেসপার আসলে কী চায়? ওব ইচ্ছেটা কী? যদিও এসব প্রোফেশনে ভেসপাররা কোনোদিনই পার্মানেন্ট নয়। যদিও সে যথেষ্ট বুদ্ধি ধরে, অন্যের সুখ-দুঃখের প্রতিও তার দৃষ্টি আছে। সে যাই হোক না, বন্ড তার কাছে প্রয়োজন ছাড়া খোলামেলা হবে না। তাতে বন্ডেরই অনেক সময় সুবিধে হবে।
প্রায় মিনিট দশেক পর বন্ড চোখ মেলল। সূর্যের তেজ কমতে শুরু করেছে। কিন্তু সমুদ্রের গর্জন অব্যাহত। দাঁড়িয়ে এক সুব, আর সমুদ্রের কোলে শুয়ে অন্য এক রিদ কানে বাজে।
উঠে বসে বন্ড। নাঃ, আর স্নান করবে না সে এখানে। বরং, হোটেলে ফিরে গিয়েই স্নানটা করা যাবে। ভেসপার নিশ্চয়ই এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।
হোটেলের দিকে হাঁটা শুরু করে বন্ড। গাউনটা হাতে নিয়ে নেয়।
২৪. সমুদ্রে স্নান
–হ্যালো, জেন্টলম্যান, সমুদ্রে স্নান করলেন?–মাদাম ভারসোয়া গেটের মুখে দাঁড়িয়ে।
–না, তবে জাস্ট সান-বাথ।
আর কোনো কথা না বলে বন্ড তার ঘরের দিকে চলে যায়।
মাদাম ভারসোয়া উন্মুখ হয়ে বন্ডের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ঘরে ঢুকে বন্ড বিস্মিত। একী! তার জিনিসপত্র টিপটপ করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে যেটা থাকা উচিত। এমনকি বেসিনে টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, শেভিং আইটেমস, সোপ, আফটার-বাথফ্র্যাগারান্স–যেখানে যা থাকা দরকার। বাথটবে পর্যন্ত জল ভর্তি। শাওয়ার খুলে দেখল বন্ড। না, ঠিকই আছে।
ভেসপারের ঘরের দরজা খুলে উঁকি মারতেই টেবিলের ওপর চোখে পড়ল একটা স্লিপিং পিলের ছোটো শিশি। তার মানে ভেসপার এখন মানসিক অস্থিরতায় আক্রান্ত।
–ভেসপার।–বন্ড ডাকে।
ভেসপার ঘুমিয়ে পড়েছিল। দারুণ দেখাচ্ছে যেন ওকে।
বন্ড আবার ডাকে–ভেসপার। ভেসপার।
ভেসপার উঠে বসে।
বন্ড বলে–আচ্ছা, তোমাকে এত কষ্ট করে আমার জিনিসপত্র কে গুছিয়ে দিতে বলেছে?
একটা হাই তুলে, স্কার্টটা ঠিক করে ভেসপার বলে আমি তোমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। তোমার দেখাশোনার দায়িত্ব আমার। আর কিছু?
বন্ড মৃদু হেসে ঘাড় নাড়ে।
ভেসপার বলে–যাও, তাড়াতাড়ি স্নান করে এসো। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে। ঐ মেয়েটা মনে হয় আজ দারুণ সব রান্না করেছে। কিছুক্ষণ আগে আমি গন্ধ পাচ্ছিলাম।
এখন ওরা ডাইনিং টেবিলে। যদিও লাঞ্চের সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। এবং ওদের ডাইনিং টেবিল বাইরের লনে। ডাইনিং টেবিলের ওপর শ্যাম্পেনের দুটো বোতল। মেটে দিয়ে বানানো হয়েছে একটা কারি, মাখনে ভাজা রুটি, মাখনের কিউব, বরফের কিউব। আর রয়েসে সস, কিছু কাটা ফ্রুটস। মিনারেল ওয়াটার।
প্রথম মিনিট দুই ওরা যেভাবে খাবার গলাধঃকরণ করল; দেখে বোধ হবে, ওরা বোধহয় কয়েকদিন খায়নি।
বন্ড একবার দুটো গ্লাসে শ্যাম্পেন ঢালল। চুমুক দিয়ে বলল–কেমন লাগছে?
–ভালোই। তবে মনে হয় ভেসপার মি. জেমস বন্ডের ঠিক যোগ্য নয়।
–হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার মানে?
শ্যাম্পেনের গ্লাসটা খালি করে ভেসপার বলে–না মানে, এই যে কাজের জন্য আমি সর্বক্ষণের সঙ্গী তোমার, সে কাজ ফুরিয়ে গেলে আমাদের রাস্তা আবার দুদিকে চলে যাবে। এই দেখনা। দীর্ঘকাল কেউ একসঙ্গে থেকেও একসময় তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে।