–উত্তর অঞ্চল আর স্ট্রাসবর্গে এখন খুব অশান্তি। নিস্ট পার্টির এক বিরাট নেতা হিসেবে ও আর ওর দলের ক্যাসিনো ও অন্যান্য অ-সামাজিক কাজকর্ম প্রকাশ হয়ে পড়াতে অসম্মানিত হতে হয়েছে চতুর্দিকে, এমনকি ওদের পাটির কাছেও।.. বন্ড, নার্স হয়ত এখুনি এসে পড়বে। পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে। এখন বল, ওই টাকাটা কোথায়? কোথাও পাইনি আমি।
বন্ড এবার হো হো করে হেসে উঠল। যেন কিছুই হয়নি তার।
বন্ড বলে–সেদিন লিটার চলে যাওয়াব পর দরজার বাইরে কালো প্লাস্টিকের নাম্বারপ্লেটটা খুলে চেকটা ভাঁজ করে আমি নাম্বারপ্লেটটা আগের মতোই করে রেখেছি। এতে কী প্রমাণিত হয় জান?
–কী?
–বোকা ইংরেজরাও চালাক ফরাসিদের একটু আধটু শেখাতে পারে।
ম্যাথুস হেসে উঠল। বলল–তোমার জবাব নেই। শোন, মুনজদের খবরটা আমিই দিয়েছিলাম। ওরা ধরা পড়ে গেছে। সব ভাড়াটে ওরা। তাহলে এখন আসি। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ।
ডাক্তার ইতিমধ্যে এসে গেল।
বন্ডের ঘুম পাচ্ছে। সে ভাবতে থাকে–এখনও অনেক সমাধান বাকি রয়ে গেল।
এই ভাবনার মধ্যে ভেসপারের চেহারাটাও ভেসে উঠল। তাকেও ভোলেনি বন্ড।
২০. ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড
ক্রমশ সুস্থ হচ্ছে বন্ড। এখন উঠে বসতে পারছে। কোমরের নীচটা ঢাকা। দেহের নীচের অংশে বেশ ব্যথা আছে।
ম্যাথুস এসে বলল–এই তোমার চেক! বেশ কিছুদিন চারকোটি ফ্রাঁ নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, কতখানি ঝুঁকি, তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ! চেকটা সই করে দাও, অ্যাকাউন্টে জমা করে দিই।
–স্মার্শের বন্ধুটির খবর কী?
–তার পাত্তা নেই, একেবারে হাওযা হয়ে গেছে।
–সেকী!
–হ্যাঁ। ওয়াশিংটন নাকি কিছু কিছু খবর জানে। তবে সেগুলো তেমন বিশ্বাসযোগ্য নয়। রিফুইজিদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে যতটুকু জানা গেছে আর কী!
বন্ড চিন্তিত। সে যতদূর জানে, লোকটা ওয়ারশ হয়ে লেনিনগ্রাড় এসেছিল। কিন্তু বন্ডকে খুন করার অর্ডার ছিল না বলে হয়তো ফিরে গেছে। বার্লিন থেকে ইউরোপের নানা অংশে যাওয়া যায়।
–শোন ম্যাথুস, আমার সম্বন্ধে ওদের কাছে একটা ফাইল আছে। তারা মধ্যে একটা ওরা কেটে দিয়েছে।
–তার মানে?
–মানে ওটা রাশিয়ান অক্ষর। স্মার্শ (SMARSH) কথাটার প্রথম অক্ষর। কাটা হলে মানেটা দাঁড়ায–ডাউন উইথ ট্রেটরস। মোট কথা, আমি দাগী হলাম বিশ্বাসঘাতক হিসেবে।
একটু ভেবে বন্ড বলল–যাক গে, সেটা বড়ো কথা নয়। আমি ঠিক করেছি রেজিগনেশন দেব।
–সেকি, কেন?
–আমার অন্যরকম একটা ফিলিং হচ্ছে। মার খাওয়ার সময় ভাবছিলাম, বেঁচে থাকার মধ্যে অনেক সুখ আছে। এইরকম চাকরি করে, নিত্য মৃত্যুর মোকাবিলা করে হঠাৎ একদিন টেসে গিয়ে লাভ কী? কম বয়েসে কত অ্যাডভেঞ্চারাস চিন্তা থাকে, কিন্তু পরিণত বয়েসে-
ম্যাথুস বলল–কিন্তু দুম্ করে পদত্যাগ করা উচিত নয়।
বন্ড বলল–দুটো খারাপ লোককে শেষ করেছি আমি। মানে গত দু-বছরের মধ্যে। নিউ ইয়র্কে সেই জাপানিটাকে যে আর. সি. এ. বিল্ডিং-এ বসে আমাদের সংকেতগুলো ধরত। ওটা কে কী ভাবে মেরেছি, তা কখনও ভুলব না।
ম্যাথুস কোনো প্রশ্ন না করলেও বন্ড সেই ঘটনাটার বর্ণনা দেয়।
–ওই বাড়ির পাশে একটা উঁচু বাড়ির চল্লিশতলায় ঘর নিলাম। নিউইয়র্ক অফিস থেকে দুটো রেমিংটন থার্টি-থার্টি রিভলভার আনালাম, টেলিস্কোপিক সাইট আর সাইলেন্সার ফিট করা। অপেক্ষা করছি। আমার ধারণা, ও আগে একদিন গুলি চালাবে। তাতে জানলায় একটা ফুটো হবে। পরে আমি সেই গর্তটা দিয়ে গুলি চালাব। তাই হল। হাঃ হাঃ। আমার গুলিটা সোজা ওর হাঁ করা মুখের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল।
ম্যাথুস চুপচাপ শুনছে। বন্ড এখন বেশ খোশমেজাজে। নিজের কীর্তিকাহিনি শুনিয়ে যাচ্ছে।
–দ্বিতীয়টা স্টকহোমে। সে ব্যাটা একটা নরোয়েজিয়ন। সে জার্মানদের হয়ে স্পাইং করত। ওকে ছুরি মেরে, স্ট্যাবিং করে খুন করতে হল। ওর বেডরুমেই।… হ্যাঁ, এই দুটো সাহসিকতার জন্য ডবল জিরো–০০ টাইটেল পেলাম।
…কিন্তু এখন অন্য চিন্তা হচ্ছে। প্রথমে নিজেকে খুব হিরো মনে হচ্ছিল। কিন্তু নিজে যখন ল্য শিফের হাতে মার খেলাম। তখন বুঝলাম, বন্ড যদি দুটি শয়তানকে খুন করে থাকে, তাহলে বন্ডের মতো শয়তানকেও খুন করার লোক থাকবে না কেন? কিন্তু আমি তো শয়তান নই! হয়তো ল্য শিফের চোখে আমি–সে যাইহোক, বিচারটা কে করবে? কে হিরো, কে ভিলেন?
ম্যাথুস কিছু বলার আগেই বন্ড বলল–আরে জানি, জানি, তুমি কী বলবে। দেশপ্রেম, দেশের কাজ, দেশের নিরাপত্তা–এই সব কথা তো? এসব পুরোনো কথা। এখন কমুনিজমের বিরুদ্ধে লড়ছি, বেশ! কিন্তু এটাই বা এমন কী! এটাও পুরোনো হয়ে যাবে একদিন। দিন বড়ো জোরে ছুটছে, ম্যাথুস, বুঝেছ?
ম্যাথুস বলল–ল্য শিফ তোমাকে চিরকালের মতো পঙ্গু করে দিচ্ছিল, সেটা চরম শয়তানি নয়? তোমার মনে এসব চিন্তা কে ঢোকাল? ল্য শিফকে খতম করাই তোমার ডিউটি। দেখবে কর্তারা তাই বলবে। স্মার্শদের কথা এত সহজে ভুলতে পারছ? তোমার কোনো কর্তব্য নেই?
–হুঁ। কিন্তু ল্য শিফকে যদি আমি খুন করতাম, সেটা নিজের স্বার্থেই করতাম! দেশের সাথে নয়–টু বি ফ্রাঙ্ক।
ম্যাথুস বলল–মনে হচ্ছে, তোমার পুনর্জন্ম হয়েছে। নতুন জেমস বন্ড কথা বলছে। তবে, তোমার যুক্তিগুলো আমি শিখে নিচ্ছি।
বন্ড বলল–দুটো মূর্তি আছে আমার মনে। একটা সাদা, আরেকটা ঘন কালো। ভগবান পরিষ্কার, শয়তান অন্ধকার। কিন্তু শয়তানকে দেখতে কেমন?