ল্য শিফ বলল–তুমি এবার ঠিক করো কী করবে। নাহলে বেশকিছু যন্ত্রণা–অবশেষে মৃত্যু। এই তোমার ভাগ্যে আছে।
বন্ডের কিছুসহকর্মী জার্মান ও জাপানিদের হাতে অত্যাচার সয়েছিল তাদের মুখে বন্ড শুনেছিল যে, অত্যাচার সইতে প্রথমদিকে কষ্ট হয় কিন্তু যদি কোনোমতে প্রথমদিকে সহ্য করা যায়। তবে আপনা থেকেই সহ্যশক্তি চলে আসে।
ল্য শিফ বলল–চার কোটি ফ্রাঁর চেকটা নিশ্চয়ই তোমার ঘরেই আছে। কিন্তু তোমার ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে আমরা সেটা পাইনি। পেলে তোমার আর এই অবস্থা হত না। তাহলে তুমি এখন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আরামেই থাকতে … আর একটা কথা শোন, অত্যাচারীর পক্ষে নিগ্রহ চালানো খুবই সহজ এবং স্বাভাবিক কাজ। বিশেষ করে বন্দি যদি পুরুষ হয়। এই যন্ত্রণাই যথেষ্ট। তবে যুদ্ধের ব্যাপারে তো শুনেছ।… যদি তোমার পুরুষত্ব কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে বেঁচে থাকলেও তুমি কিন্তু আর পুরুষ থাকবে না। এমন মানসিক কষ্ট হবে যে আত্মহত্যার চেষ্টা করবে। সারা পৃথিবী তোমার কাছে তখন অন্ধকার।.. টাকাটা কোথায়?
বন্ড কোনোমতে বলল–জল।
–রাইট। জিভ শুকোলে তো আর কথা বলা যায় না।
উঠে এসে বন্ডের চুলের মুঠি ধরে মাথাটা ঠেলে কয়েক ফোটা কফি ওর মুখে ঢেলে দিল ল্য শি, তারপর মুঠো ছেড়ে দিতেই বন্ডের মাথা আবার ঝুঁকে পড়ল।
ল্য শিফ বলল–অবশ্য আমার কোনো তাড়া নেই। এখন যে খেলাটা চলছে সেটাই চলুক। অপরের সহ্যশক্তি পরীক্ষা করতে আমার বেশ ভালোই লাগে।
আবার সেই অত্যাচার। তার মধ্যেই বন্ডের চিন্তাশক্তি কাজ করে চলেছে। এখন হয়তো বেলা সাতটা। হয়তো লিটাব বা ম্যাথুস এখুনি এখানে এসে পড়বে। হয়তো বন্ডের গাড়িটা চোখে পড়েছে। এই যেকোনো একটা হয়তো সত্যি হলে ল্য শিয–ধরা পড়বেই।
দাঁতে দাঁত কামড়ে অত্যাচার সইতে লাগল বন্ড। এবার অত্যাচাবের মাত্রা বাড়ছে। হঠাৎ একসময় সাবা জগৎ অন্ধকার হয়ে গেল তার চোখে।
ল্য শিফ পরীক্ষা করল, বন্ড মরে গেছে কিনা। নিশ্চিত হল, না মরেনি। সে বলল–আপাতত তোমার ব্যাপারে থামছি। প্রাণে মারছি না অবশ্য। তবে যা বলেছি, ওই প্রাণে মারার চেয়েও ভয়ংকর কাণ্ডটা ঘটবে। তারপর মেয়েটাকে আনব এখানে। দেখি, ওকে নিয়ে কী করা যায়।
গম্ভীর গলা এবার ল্য শিফের–জেমস বন্ড, নিজেকে চিরকালের মতো হারানোর জন্য প্রস্তুত হও।
১৮. চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড
ক্রমাগত মারের ফলে চেতনাহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় বন্ড। ল্য শিফের সব কথা তার কানে ঢুকছিল না। আচমকা এক বজ্রকঠিন স্বরে বন্ডের হুঁশ ফিরে এল।
নুয়ে পড়া মাথা সোজা হল বন্ডের। সামনের দিকে তাকাল সে। কয়েক সেকেন্ড লাগল অস্পষ্ট দৃষ্টি কাটতে। বন্ড এবার পরিষ্কার দেখতে পেল ল্য শিফের মুখের হিংস্র চেহারার বদলে এক ভয়ার্তভাব।
বন্ড শুনতে পেল আবার সেই শব্দ–হাত থেকে ওটা ফেলে দাও ল্য শিফ।
ল্য শিফের হাত কাঁপছে, মুখ ভয়ার্ত। বন্ড দেখল, ল্য শিফ যেই পকেটে হাত ঢোকাতে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে পিছনের কণ্ঠস্বরটি বলে উঠল।–নো নো, কোনোরকম বাজে চেষ্টা কোর না। ট্রিগারে আঙুলটা শুধু ছোঁয়ানো আছে। আঙুলে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করিও না।
কয়েকমুহূর্ত চুপচাপ। পিছনের লোকটি কি আছে? তবে চুপচাপ কেন? কে ও?
সেই লোকটির গলা আবার শোনা যায়—কী হল? আমি সময় নষ্ট করা একদম পছন্দ করি না। ফেলে দাও ওটা।
ল্য শিফের মুখের কথা আটকে যাচ্ছে–আসলে আমি মি. বন্ডকে একটু ভয়… মানে–
–চোপ। শয়তান, বিশ্বাসঘাতক, ঠগবাজ। শোন হে, আমাকে যারা সোভিয়েত ইউনিয়ন। থেকে পাঠিয়েছে, তার বলেছে, তোমার মৃত্যুটা যেন পরিপূর্ণ যন্ত্রণাময় হয়। যেরকম যন্ত্রণা তুমি একে দিচ্ছিলে। হাতে আমার সময় কম। তাই একটা মাত্র গুলিই আমাকে খরচ করতে হবে।
ল্য শিফ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে — আমি মুক্তি চাইছি। আমি চলে যাব এখান থেকে। আমি যা করেছি–
আর কোনো কথা বলতে দিল না বন্ডের পিছনে দাঁড়ানো আগন্তুকের রিভলবার। ল্য শিফের নাকের ওপরে শুধু একটা ছিদ্র তৈরি হল। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে এল। হুমড়ি খেয়ে ঘুরে গিয়ে একটা চেয়ারের হাতলের ওপর পড়ল ল্য শিফ।
ল্য শিফের দেহটার ওপর একটা পা রেখে, মাথায় টুপি, মুখে মুখোশ পরা সেই লোকটা এবার বন্ডের থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বলে–তোমার কপাল ভালো মিস্টার। বেঁচে গেলে। এই নিয়ে দুবার। প্রথমবার বরাতজোরে, দ্বিতীয়বার আমরাই ভুল করেছি। অবশ্য যদি তোমার প্রাণ নেওয়ার হুকুম থাকত। শোন হে, তোমার দলকে বোল যে, এইসব গদ্দার ললাকেদের সাথে যদি তোমার মতো বিদেশি গুপ্তচরগুলোকে মারা যেত। হ্যাঁ, আর একটা কথা–স্মার্শ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না, খাতির করতে জানে না।
লোকটা বলে চলে–তোমার মতো জুয়াড়ির সাথে আবার দেখা হবে কোথাও। কিন্তু তোমাকে এমনি ছেড়ে দেব না। গুপ্তচর বলে তোমার শরীরে বেশ ভালোরকম চিহ্ন বসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।
বলে বুটের চেন খুলে একটা ছুরি বার করে অতি দ্রুত এবং যন্ত্রণাদায়কভাবে সে বন্ডের ডান হাতে খুব দ্রুত এম কথাটা লিখে দিল। বন্ডের সারা দেহ যন্ত্রণায় কেঁপে উঠল। চোখ বুজে যন্ত্রণা সহ্য করতে লাগল বণ্ড।
লোকটার বুটের আওয়াজ মিলিয়ে গেল। বন্ডের হাত দিয়ে রক্ত ঝরে পড়ছে।
বন্ড জ্ঞান হারাল।
বেলা বাড়ছে। বন্ডের হাত থেকে পড়া রক্ত এখন জমাট বেঁধেছে, তার ওপর রৌদ্রের আলো এসে পড়েছে।