স্টুয়ার্ট ভেসপারকে একটা চিঠি দিয়ে গেল। সে চিঠিতে ম্যাথুস লিখেছে–তুমি সামনের হলে এস। বন্ডের জন্য খবর আছে। আমার ইভিনিং ড্রেস পরা হয়নি, তাই এখন আসতে পারছি না, বাড়ি যাচ্ছি।
বন্ড সিগারেট ধরিয়ে উঠে দাঁড়াল। মেজাজটা আরও বিগড়ে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে শরীরও ক্লান্ত। শ্যাম্পেনের শেষ চুমুকটা তেতো লাগল। ভাবল-হঠাৎ এমন চিঠি কেন? এটা ম্যাথুসের কাজ বলে তো মনে হচ্ছে না। ইভিনিং-ড্রেসের ব্যাপারটা ছুতো বলে মনে হচ্ছে। সত্যি কি চিঠিটা ম্যাথুসের থেকে এসেছে? ঘর থেকে বেরিয়ে এল বন্ড।
তার আগে সামনের হলেতে গিয়ে দেখেছে–ভেসপার বা ম্যাথুসেব কোনো পাত্তা নেই।
রাস্তায় বেরিয়ে এল বন্ড। সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেল একটা অস্ফুট চিৎকার। গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ। দুসেকেন্ড পবেই ওর সামনে দিয়ে হাই স্পিডে বেরিয়ে গেল একটা সিত্রো। গাড়ির ভেতরটা অন্ধকার। তাই বিশেষ কিছু দেখা না গেলেও বোঝা গেল, ভেতরে একটা লড়াই চলছে। কারণ পিছনের দিকের স্পিংটা ওঠানামা করছে। তীব্রবেগে টপ গিয়ারে গাডিটা রাস্তায় পৌঁছেই উধাও হয়ে গেল।
একটা কালো ব্যাগ কুড়িয়ে পেল বন্ড। এটা যে ভেসপারেব তাতে কোন সন্দেহ নেই। সিঁড়িব আলোর কাছে দৌড়ে এসে ব্যাগটা খুলল বন্ড। এক টুকবো কাগজে লেখা আছে যা ভেসপার লিন্ড বন্ডকে আগেই জানিয়েছিল–সামনের হলে একবার এস। খবর আছে, তোমার সঙ্গীর জন্য। রেনে ম্যাথুস।
১৫. চিঠিটা জাল
বন্ডের কোনো সন্দেহ নেই যে, চিঠিটা জাল।
আর দেরি না করে একলাফে নিজের গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিল বন্ড। গেটের বাইরে এসে বা দিকে যেতেই লাফিয়ে উঠল গাড়ি। হ্যাঁ, আন্দাজেই শত্রুর পিছু নিতে হবে। সি বিচের দিকে রাস্তাটা ধরা যাক। হেডলাইট জ্বেলে যেন এক বিরাট গুহার মধ্যে আধমাইল লম্বা আলো ফেলে গাড়ি ছুটে চলেছে।
বন্ডের ধারণা, সিত্রোটা ওই পথ দিয়েই গেছে। কারণ, ধোঁয়া আর ধুলো উড়ছে। সমুদ্রের কুয়াশার মধ্য থেকেই যেন ফগ হর্নের আওয়াজ আসছে। গাড়ির স্পিড বাড়াতে বাড়াতে বন্ড ভাবছিল, ভেসপার মেয়েটা একেবারে বোকা। পাঠাবার আর লোক পেল না এম! তাছাড়া মেয়ে সহকারী নিয়ে কাজ করতে গেলে এরকম উটকো ঝামেলায় পড়তেই হয়।
শত্রুপক্ষ ভেসপারকে কেন কিডন্যাপ করেছে, সেটাও বোঝা সহজ–চার কোটি টাকার চেকটা দাও, নয়তো মেয়েটার জান যাবে। অবশ্য বন্ড এসব ভাওতায় ভুলছে না। আগে ওদের গাড়িটাকে ধরতেই হবে, গুলির উত্তরে গুলি ছুড়তে হবে। তাতে মেয়েটার ভাগ্যে যা আছে হবে। বন্ডের গাড়ির স্পিড এখন ঘন্টায় একশো দশ-কুড়ির মধ্যে।
ড্যাশ বোর্ডের নীচ থেকে ৪৫ লং ব্যারেল কোল্ট আর্মি স্পেশালটা বের কবল বন্ড। অন্তত একশো গজ দূর থেকে শত্রুপক্ষের গাড়ির টায়ার বা পেট্রোল ট্যাঙ্ক ফুটো করতে পারবে।
এবার সামনে সিত্রো গাড়িটা চোখে পড়ল হেডলাইটের আলোয় গাড়ির ভেতরটা দেখা যাচ্ছে। তিনজন পুরুষ এবং একটি মেয়ে দেখা যাচ্ছে। ল্য শিফ নিজে ড্রাইভ করছে। এইবার সেই ছড়ি হাতে লোকটাকেও দেখা গেল। পিছনের সিটে রিভলবার হাতে একটি রোগা লোক, তার পাশেই ভেসপার। ওর স্কার্টটা ওপরে টেনে দুই উরু বস্তার মতো বেঁধে রাখা হয়েছে। মাথাও কাপড় দিয়ে মোড়া, খালি পা।
সামনে কাঁচা রাস্তা। গাড়ির স্পিড কমাল বন্ড।
সামনের গাড়ির ভিতর সাসপেন্স! ল্য শিফ অর্ডার দিল–জাস্ট নাউ।
তৎক্ষণাৎ ঝনঝন শব্দ! ল্য শিফ বলল–হিট হিম।
গাড়ি থেমে গেল। রিভলবার হাতে তিনজন একটা ঝোপের কাছে এগিয়ে গেল। একজনের হাতে একটা বিশাল কালো গোলা। সেটা ছুটে আসছে।
১৬. বন্ড গাড়ি থামায়নি
বন্ড গাড়ি থামায়নি। হঠাৎ সামনের গাড়িটা কাছে এসে যাওয়ায় সে সজোরে ব্রেক কষল। কোনো লাভ হল না। ধাক্কাটা লাগলই। বন্ড ড্রাইভিং সিট থেকে ছিটকে পড়ে গেল। ওর গাড়ি এখন শূন্যে, হেডলাইট যেন আকাশের দিকে, এইবার আস্তে আস্তে উলটে গেল গাড়িটা।
ঝোপের আড়াল থেকে দুই সঙ্গী সমেত ল্য শিফ বেরিয়ে এল। হুকুম দিল আগেইংরেজটাকে বের করে আন। সাবধান যেন মরে না যায়। লোকটার বেঁচে থাকা আমাদের পক্ষে খুব জরুরি। কুইক, ভোর হয়ে আসছে!
ক্যানভাসের ছাদটা ছুরি দিয়ে কেটে বন্ডের সংজ্ঞাহীন দেহটা বের করল ওরা। বন্ড এখন রাস্তায় শোয়া। রোগা লোকটা ওর বুকে হাত রেখে দেখল, হৃদ্যন্ত্র কতটা সচল। তারপর বন্ডের দুই গালে টেনে চড় লাগাল। বন্ডের গলায় সামান্য আওয়াজ। একটা হাত একটু নড়ল। লোকটা আবার সজোরে চাপড় দিল।
ল্য শিফ বলল–ঠিক আছে ঠিক আছে। বাড়াবাড়ির দরকার নেই। ওর পকেট থেকে রিভলবারটা বের করে আমায় দাও। আর এই তারগুলো দিয়ে ওর হাত ভালো করে বাঁধ, এবার আমার গাড়িতে তোল ওকে।
লোকটা বন্ডের অটোমেটিক রিভলবারটা ল্য শিফকে দিল। এবার টেনে হিচড়ে গাড়িতে ভোলা হল বন্ডের দেহটা।
ইতিমধ্যে কিছুটা জ্ঞান ফিরেছে বন্ডের। পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছে সে। সারা গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। কিন্তু হাড়গোড় ভাঙেনি বলেই মনে হচ্ছে। অপরিসীম ক্লান্তি! তাই আপাতত আত্মসমর্পণ ছাড়া গতি নেই।
গাড়িতে উঠেই প্রথম মনে এল, ভেসপারের কথা। কোথায় সে? তারপরেই চোখে পড়ল মেয়েটার অসহায় দুটি পা। লক্ষ করল, ওর স্কার্ট দিয়েই ওর মাথাটা পুটলির মতো করে বাঁধা হয়েছে। চুপি চুপি ডাকল–ভেসপার।
–শাট আপ! সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রচণ্ড চাপড় বুকের ওপর।