২০ গজ ছিট = ১ কোট অথবা = ২০ কোট অথবা == ‘ও’ সংখ্যক কোট-অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ছিটের মূল্য খুব কমই হোক বা বেশি হোক, এরকম প্ৰত্যেকটি বিবৃতির মধ্যে এই সত্য নিহিত আছে যে ছিট এবং কোট, মূল্যের
পরিমাণ হিসেবে, একই এককের মাধ্যমে প্ৰকাশিত, একই ধরনের জিনিস। ‘ছিট = কোট’ হচ্ছে সেই সমীকরণের ভিত্তি।
কিন্তু এই যে দুটি পণ্যের গুণগত মিল। এইভাবে ধরে নেওয়া হল, তাদের ভূমিকা কিন্তু এক নয়। কেবলমাত্র ছিটের মূল্যই প্ৰকাশ করা হল। এবং কিভাবে? তার সঙ্গে তার মূল্যের সমার্ঘরূপ হিসেবে কোটের উল্লেখ করে, যে জিনিসের সঙ্গে তার বিনিময় হতে পারে, সেই জিনিস হিসেবে। এই সম্বন্ধের মধ্যে কোটের আকৃতি ধরে মূল্য বিরাজ করছে, কোটি হচ্ছে মৃত মূল্য, কারণ শুধু এই হিসেবেই কোট ছিটের সমার্ধ-রূপ। অপরদিকে, ছিটের নিজ মূল্য সামনে এসে হাজির হয়েছে, रफ्रिङ ठूgझgछ স্বতন্তভাবে, কারণ শুধু মূল্য হিসেবেই সমর্থ স্বরূপ কোটের সঙ্গে তার তুলনা হতে পারে, অথবা তার বিনিময় হ’তে পারে কোটের সঙ্গে। রসায়ন বিজ্ঞান থেকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, বিউটরিক এসিড (butyric) হল প্ৰপাইল ফরমেট (Propy formate) থেকে একটি ভিন্ন পদার্থ। যদিও উভয়ই গঠিত হয়েছে একই রাসায়নিক ধাতু থেকে, অঙ্গার (অং), উদজান (উ), এবং অম্লজান এই একই রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা, এবং তাও একই অনুপাতে-যথা, অং৪ উ৮ অ২ (C4 H8 O2)। এখন আমরা যদি বিউটরিক এসিডের সঙ্গে প্ৰপাইল ফরমেটের সমীকরণ করি, তা হলে প্রথমতঃ এই সম্বন্ধের মধ্যে প্ৰপাইল ফরমেট হয়ে দাঁড়ায় কেবলমাত্র অং৪ উ৮ অ২ (C4 H8 O2) এর অস্তিত্বের একটি রূপ; দ্বিতীয়তঃ, আমাদের তরফ থেকে একথাও বলা হয় যে বিউটরিক এসিডও অং৪ উ৮ অ২ (C4 H8 O2) দিয়ে গঠিত। সুতরাং এইভাবেই ঐ দুটি পদার্থের সমীকরণ দ্বারা তাদের রাসয়নিক গড়ন প্রকাশ করা হবে, অথচ তাদের দৈহিক রূপটাকে করা হবে অগ্ৰাহ্য।
আমারা যদি বলি, মূল্য হিসেবে পণ্য হল কেবলমাত্র মানুষের শ্রমের সংহত রূপ, তাহলে সত্য সত্যই আমাদের বিশ্লেষণ দ্বারা আমরা পণ্যকে অমুর্তান্বিত করে মূল্যে পরিণত করি; কিন্তু এই মূল্যের উপর তার দৈহিক রূপ ছাড়া অন্য কোন রূপ আরোপ কৰ্ম্ম না। এক পণ্যের সঙ্গে অন্য পণ্যের মূল্য-সম্বন্ধের বেলায় সে কথা খাটে না। এ ক্ষেত্রে একে অন্যের সঙ্গে তাঁর সম্বন্ধ প্ৰকাশের ভিতর দিয়ে মূল্য বলে পরিচিত হচ্ছে।
কোটকে ছিটের মূল্যের সমার্ঘরূপ হিসেবে দাঁড় করিয়ে, আমরা প্রথমটার ভিতরকার মূর্ত প্রমের সমীকরণ করে থাকি দ্বিতীয়টির ভিতরকার মূর্ত শ্রমের সঙ্গে। এখন, একথা সত্য কোট-উৎপাদনকারী দরজীর কাজ ছিট উৎপাদনকারী তাঁতীর কাজ থেকে ভিন্ন ধরনের বিশেষ শ্ৰম। কিন্তু তাঁতের কাজের সঙ্গে সমীকরণ দ্বারা দরজীর কাজকে এমন একটি বস্তুতে পরিণত করা হয় যা ঐ দুই ধরনের শ্রমের মধ্যে প্রকৃতই সমান, সে বস্তুটি হল মানুষের শ্রম হিসাবে তাদের সাধারণ চরিত্র। হলে, এই ঘোরালো পথে, এই তথ্যটিই প্রকাশিত হচ্ছে যে তাঁতের কাজ যে হিসেবে মূল্য বয়ন করে, সেই হিসেবে তার সন্ত্রে দরজীর কাজের কোনো পার্থক্যই টানা যায় না, ফলে তা হচ্ছে অমূর্তায়িত মনুষ্য-শ্ৰম। শুধুমাত্র ভিন্ন ভিন্ন প্রকার পণ্যের মধ্যে এসে যে অপরের সমার্ঘরূপ হতে পারে তা প্ৰকাশ করেই শ্রমের মূল্যসৃষ্টির বিশেষ চরিত্রটি ফুটে ওঠে এবং তা কাৰ্যতঃ বিভিন্ন প্রকার পণ্যের মধ্যে মূর্ত বিভিন্ন শ্রমকে একটি অমূর্তায়িত সত্তায় পরিণত করে, সে সত্তা হচ্ছে শ্রম নামক তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যটি।(২)
অবশ্য ছিটের মূল্য যে শ্ৰম দিয়ে তৈরী, তার বিশেষ চরিত্র প্রকাশ করা ছাড়াও আরো কিছু আবশ্যক। মানুষের ক্রিয় শ্ৰম-শক্তি, তথা মানুষের শ্রম, মূল্য সৃষ্টি করে, কিন্তু তা নিজেই মূল্য নয়। তা মূল্য হয়ে দাঁড়ায় কেবলমাত্র তার সংহত আকারে, কোনো দ্রব্যরূপে যখন তা মূর্তি লাভ করে, তখন ছিটের মূল্যকে মনুষ্যশ্রমের সংহত রূপে প্ৰকাশ করতে হলে, ঐ মূল্যকে এমন ভাবে প্ৰকাশ করতে হবে যেন তার বাস্তব অস্তিত্ব আছে, যেন তা ঐ ছিট থেকে বস্তুত: পৃথক একটি সত্তা, অথচ যা ছিট এবং অন্যান্য সমস্ত পণ্যের মধ্যে সাধারণভাবে বর্তমান। সমস্যাটির সমাধান তো হয়েই গেল।
মূল্যের সমীকরণে সমার্ঘরূপের অবস্থানে কোট হয়ে দাঁড়ায় ছিটের সঙ্গে গুণগতভাবে সমান, একই ধরনের একটা জিনিসের মতো, কারণ ওটা হচ্ছে মূল্য। এই অবস্থানের ভিতর কোটটা হচ্ছে এমন একটা জিনিস, যার ভিতর মূল্য ছাড়া আর কিছু আমরা দেখি না, তথাপি কোটটা-নিজে কোটরাপ সামগ্ৰীটি, একটি ব্যবহারমূল্য মাত্র। কোট হিসেবে কোটি মূল্য নয়, যেমন আমাদের হাতে আসা ছিটের টুকরোটাও মূল্য নয়। এ থেকে বোঝা যায় যে ছিটের সঙ্গে মূল্য-সম্বন্ধের ভিতরে দাড় করালে, কোটের তাৎপৰ্য, সেই সম্বন্ধের বাইরে তার যা তাৎপৰ্য, তার চেয়ে বেশি, ঠিক যেমন, অনেক লোকের ক্ষেত্রে দেখা যায় সাদা পোশাকে ঘুরে বেড়ানোয় তারা যতটা গণ্যমান্য হয় তার চেয়ে বেশি গণ্যমান্য হয় চটকদার পোশাকে ঘুরে বেড়ানোয়।
কোটের উৎপাদনে, দরজীর কাজব্বাপে মানুষের শ্রমশক্তি অবশ্যই ব্যয়িত হয়েছে। কাজেই এর ভিতর মনুষ্য-শ্রম সঞ্চিত আছে। এই দিক থৈকে কোটটি মূল্যের একটি সঞ্চয়াগার, কিন্তু ওকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করলেও সে এই তথ্যটি ফাস করবে না। এবং মূল্য সম্বন্ধের ভিতর ছিটের সমার্ঘরূপ হিসেবে, কেবলমাত্র এই দিক থেকেই তার অস্তিত্ব আছে, সুতরাং সে গণ্য হয় মৃদু মূল্য হিসেবে, মূল্যের মূর্তি হিসেবে। যেমন ‘ক’ কখনো ‘খ’ এর কাছে ‘ইয়োর ম্যাজেষ্টি হতে পারে না-যদি না ‘খ’ এর চোখে যা ম্যাজেস্ট্রি তা ‘ক’ এর মধ্যে মৃতি লাভ করে; তার চেয়েও বড় কথা, যদি না প্ৰত্যেকটি নোতুন জনক পিতার সঙ্গে সঙ্গে তার গড়ন, চুল ও আরও অনেক কিছু বদলে যায়।