৫. বুর্জোয়া সমাজে এই অর্থনৈতিক অতিকথাটি প্রচলিত আছে যে, ক্রেতা হিসেবে প্রত্যেকেই পণ্য সম্বন্ধে বিশ্বকোষের মত ওয়াকিবহাল।
৬. “La valeur consiste dans le rapport d’echange qui se trouve entre telle chose et telle autre, entre telle mesure d’une production et telle mesure d’une autre.” (Le Trosne : ‘De l’Interet Social,’ Physiocrates, Ed. Daire. Paris, 1846, P. 889.)
৭. ‘কোন কিছুরই অন্তর্নিহিত মূল্য থাকতে পারে না’, (এন, বারবো, l.c. পৃঃ ৬), অথবা বাটলার বলেন—
‘একটা দ্রব্যের মূল্য,
তার বদলে যা পাই,
তারই সমতুল্য।’
৮. এন. বারবো, l.c. পৃঃ ৫৩ এবং ৭।
৯. ‘জীবনধারণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী যখন পরস্পরের সঙ্গে বিনিমিত হয়, তখন তাদের মূল্য নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের উৎপাদনে যতটা শেওম ও সময় লাগে তার দ্বারা।’ ‘সাধারণভাবে অর্থের সুদ সম্বন্ধে এবং বিশেষভাবে সরকারী তহবিল সম্বন্ধে’, (“Some Thoughts on the Interest of Money in General, and Particularly in the Publick Funds, &c.”) লণ্ডন, পৃঃ ৩৬। লেখক-পরিচিতি-বিহীণ এই চমৎকার গ্রন্থখানি লেখা হয়েছিল বিগত শতাব্দীতে কিন্তু এতে কোন নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া নেই। অবশ্য অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য থেকে এটা পরিষ্কার যে দ্বিতীয় জর্জের সময়ে, ১৭৩৯/৪০ সালে, বইখানি প্রকাশিত হয়েছিল।
১০. Le Trosne, l.c. পৃঃ ৮৯৩।
১১. মার্কস, l.c. পৃঃ ৬।
১২. চতুর্থ জার্মান সংস্করের টিকা : এই বক্তব্যটিতে আমি বন্ধনী প্রয়োগ করেছি কারণ এটা না করলে অনেক সময় এই ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, যে-কোন দ্রব্যই উৎপাদনকারী নিজে পরিভোগ না করে অন্যে পরিভোগ করলে মার্কস তাকে পণ্য বলে অভিহিত করেছেন।–এঙ্গেলস।
.
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। পণ্যের মধ্যে মূর্ত শ্রমের দ্বৈত চরিত্র
প্ৰথম দৃষ্টিতে পণ্য আমাদের কাছে হাজির করেছিল দুটি জিনিসের এক সংমিশ্ৰণ-ব্যবহার মূল্যের এবং বিনিময়মূল্যের। পরে আমরা এও দেখেছি যে শ্রমেরও আছে দ্বৈত চরিত্র, মূল্যের ভিতর তার যে প্ৰকাশ ঘটে সেদিক থেকে তার চরিত্র আর ব্যবহার মূল্যের স্রষ্টা হিসেবে তার যে চরিত্র এই দুই চরিত্র এক নয়। পণ্যের ভিতরে যে শ্ৰম থাকে, তার দ্বৈত চরিত্র আমিই প্ৰথম দেখিয়েছি এবং আমিই প্রথম তার পুংখানুপুংখ বিচার করেছি। যেহেতু যে-মূল বিষয়টির উপর অর্থনীতি সম্বন্ধে পরিষ্কার একটি ধারণা নির্ভর করছে, তা হচ্ছে এইটি, সেহেতু এই বিষয়টির মধ্যে আমরা আর একটু বিশদভাবে প্ৰবেশ করব।
ধরা যাক, একটি কোট আর ১০ গজ ছিট এই দুটি পণ্য, আর ধরা যাক যে প্রথমটির মূল্য দ্বিতীয়টির দ্বিগুণ, সুতরাং, যদি ১০ গজ ছিট্=ব, হয় তা হলে কোটটি=২ব।
কোটটি হচ্ছে একটি ব্যবহার মূল্য যা দ্বারা একটি বিশেষ অভাবের পূরণ হয়; এটি একটি বিশেষ ধরনের উৎপাদনশীল কাজের ফল, যার প্রকৃতি নির্ভর করে তার উদ্দেশ্য, কর্মপদ্ধতি, উপায়, বিষয় এবং ফলশ্রুতির উপর।
এইভাবে যে শ্রমের উপযোগিতা উৎপন্ন দ্রব্যের ব্যবহারগত মূল্য দ্বারা প্রকাশিত হয় অথবা যে শ্রম উৎপন্ন দ্রব্যটিকে ব্যবহার মূল্যে রূপায়িত করবার মাধ্যমে আত্মপ্ৰকাশ করে আমরা তাকে বলি ব্যবহার্য বা উপযোগী শ্রম। এই উপলক্ষে আমরা কেবল তার ব্যবহার্যতার দিকটাই বিচার করি।
যেমন কোট এবং ছিট্ হচ্ছে গুণগত ভাবে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার মূল্য, তেমনি তাদের উৎপাদনকারী সেলাইয়ের কাজ এবং বোনার কাজ এই দুই প্রকার শ্রমও গুণগত ভাবে বিভিন্ন। যদি এই দুটি জিনিস গুণগতভাবে পৃথক না হত, তাহলে তাদের পরস্পরের মধ্যে পণ্যের সম্বন্ধ দেখা দিত না। কোটের সঙ্গে কোটের বিনিময় হয় না, কোন ব্যবহার মূল্যের সঙ্গে অবিকল সেইরকম ব্যবহার মূল্যের বিনিময় চলে না।
ব্যবহার মূল্য যত প্রকারের আছে তার সব কটিরই অনুরূপ তত প্রকারের ব্যবহার্য শ্ৰম আছে : সামাজিক শ্রমবিভাগের ক্ষেত্রে সেগুলি যে যে জাতি গোষ্টী এবং প্রকারের অন্তৰ্গত তদনুযায়ী তাদের শ্রেণীবিভাগও আছে। এই শ্রমবিভাগ পণ্য উৎপাদনের একটি অনিবাৰ্য শর্ত, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে বিপরীত ভাবে, পণ্য উৎপাদনও শ্রম বিভাগের একটি অনিবাৰ্য শর্ত। আদিম ভারতীয় সমাজের ভিতর পণ্য উৎপাদন ব্যতীতই শ্রমবিভাগ ছিল। অথবা, বাড়ির হাতের একটি উদাহরণ ধরলে, প্ৰত্যেক কারখানায় একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে শ্রমের বিভাগ থাকে, কিন্তু কর্মে নিযুক্ত লোকের নিজ নিজ উৎপন্ন দ্রব্য পরস্পরের মধ্যে বিনিময় ক’রে সে শ্রমবিভাগ সৃষ্টি করে নি। কেবলমাত্র সেই সমস্ত দ্রব্যই পারস্পত্ত্বিক সম্পর্কে পণ্য হতে পারে যেগুলি ভিন্ন ভিন্ন প্রকার শ্রমের ফলে উৎপন্ন, এবং প্রত্যেক প্রকার শ্রম স্বতন্ত্রভাবে এবং ভিন্ন ভিন্ন লোকের ব্যক্তিগত প্ৰয়াসে সম্পন্ন।
এবার গোড়ার কথায় ফিরে আসা যাক : প্ৰত্যেকটি পণ্যের ব্যবহারমূল্যের ভিতরে বিধৃত রয়েছে ব্যবহার্য শ্ৰম, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট প্রকারের এবং একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যয়িত উৎপাদনশীল শ্রম। ব্যবহার মূল্যগুলির পরস্পরের মধ্যে পণ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, যদি না তাদের মধ্যে বিধৃত ব্যবহার্য শ্ৰম প্রত্যেকটির ভিতরই গুণগতভাবে পৃথক হয়। যে সমাজের উৎপন্ন দ্রব্যের সম্ভার সাধারণভাবে পণ্যের আকার গ্রহণ করে সেই সমাজে অর্থাৎ পণ্যোৎপাদনকারীদের সমাজে ব্যক্তিগত উৎপাদনকারীদের দ্বারা নিজ নিজ হেফাজতে আলাদা আলাদা ভাবে সম্পাদিত শ্রম পরিণত হয় একটি জটিল ব্যবস্থা-বিন্যাসে, সামাজিক শ্রম-বিভাগে।