এটা খুবই বৈশিষ্ট্যসূচক যে, খোলাখুলি ভাবেই উপনিবেশগুলির ব্যবহারের জন্য ওয়েকফিল্ড কর্তৃক নির্দেশিত “আদিম সঞ্চয়নের” পদ্ধতিটি ইংরেজ সরকার বছরের পর বছর অনুসরণ করে এসেছে। অবশ্য তামাসাটা স্যার রবার্ট পীল-এর ব্যাংক আইনের মতই সার্থক হয়েছিল। প্ৰবাসনের স্রোত কেবল ইংরেজ উপনিবেশগুলি থেকে সরে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধাবিত হয়েছিল। ইতিমধ্যে ইউরোপে ধনতান্ত্রিক উৎপাদনের অগ্রগতি এবং তৎসংশ্লিষ্ট ক্রমবর্ধমান সরকারি অপ্রয়োজনীয় বাহুল্যে পরিণত করেছে। এক দিকে প্রবাসনের পশ্চিম-মুখী ঢেউ যত দ্রুত বেগে তা ধুয়ে নিতে পাৰে, তার চেয়ে দ্রুত বেগে অভিবাসনের ঢেউ শ্রমের বাজারে লোক ছুড়ে দেবার দরুন বছরের পর বছর আমেরিকার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষের বিপুল ও বিরামহীন প্রবাহ পেছনে রেখে গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব দিকে একটি নিশ্চল তলানি।
অন্য দিকে, মার্কিন গৃহযুদ্ধ তার পিছনে পিছনে নিয়ে এল এক বিশাল জাতীয় ঋণ এবং তার সঙ্গে করের চাপ, জঘন্যতম আর্থিক অভিজাততন্ত্রের প্রাদুর্ভাব, রেলপথ, খনি ইত্যাদি চালু করার জন্য কোম্পানিগুলির উপরে সাধারণ জমির একটি বিরাট অংশের অপচয়, এক কথায়, মূলধনের সবচেয়ে দ্রুতগতি কেন্দ্রীভবন। সুতরাং, মহান প্রজাতন্ত্র আর প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে স্বপ্নরাজ্য বইল না। এমনকি, যদিও মজুরির স্বল্পতা এবং মজুরি-শ্রমিকের নির্ভরতা ইউরোপের স্বাভাবিক মাত্রায় নামিয়ে আনা থেকে তখনন অনেক দূরে, তবু ধনতান্ত্রিক উৎপাদন এগিয়ে যায় দানবীয় পদক্ষেপে। সরকার কর্তৃক দাজ হাতে নিলজ্জ ভাবে অভিজাত ও ধনিকদের মধ্যে, অকর্ষিত জমি-বিলির অমিত ব্যয়ী দাক্ষিণ্য, যাকে এমনকি ওয়েকফিল্ড-ও এত সরবে নিন্দা করেছিলেন, তা সোনার খনি-খণনের কাজ যাদের টেনে আনে, সেই জন-প্রবাহের সহযোগিতায় এবং ইংরেজ পণ্যসামগ্রীর আমদানি, যা এমনকি ক্ষুদ্রতম কুটির শিল্পের সঙ্গে পাল্লা দেয়, তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায়-উৎপাদন করে প্রচুর আপেক্ষিক ‘উদ্বৃত্ত শ্রমজীবী জনসংখ্যা”, যার ফলে প্রত্যেকটি ডাক মেইল’) বয়ে নিয়ে আসে “অস্ট্রেলিয়ার শ্রমের বাজারে অত্যধিক শ্রম-সরবরাহের” আপাত-সুখকর সংবাদ; এবং কোন কোন জায়গায় বারবণিতা-বৃত্তি জাঁকিয়ে ওঠে লণ্ডন ‘হে মার্কেট’-এর মত বেপরোয়া ভাবে। [২৩]
যাই হোক, এখানে আমরা উপনিবেশগুলির অবস্থা নিয়ে ব্যস্ত নই। একমাত্র যে-জিনিসটির প্রতি আমাদের আগ্রহ, তা হল, পুরনো জগতের রাষ্ট্রীয় অর্থতত্ব কর্তৃক আবিষ্কৃত এবং গৃহশীর্ষ থেকে বিঘোষিত নোতুন জগতের গোপন রহস্য; যে-রহস্যটি হল এই যে, ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ও সঞ্চয়ন পদ্ধতির, এবং, স্বভাবতই, ধনতান্ত্রিক ব্যক্তিগত সম্পত্তির মৌল শর্ত হল স্বোপার্জিত ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধ্বংসসাধন। ভাষান্তরে শ্রমিকের উৎসাদন।
————
১. (শিরোনাম ) আমরা এখানে আলোচনা করছি প্রকৃত ‘উপনিবেশ ( কলোনি) নিয়ে—সেইসব কুমারী ভূমি নিয়ে, অভিবাসনকারীরা যেখানে উপনিবেশ স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, অর্থ নৈতিক ভাবে এখনো ইউরোপের একটি উপনিবেশ মাত্র। তা ছাড়া, এই পংক্তির মধ্যে সেই ধরনের পুরনো অভিবসতিগুলিও পড়ে, যেগুলিতে ক্রীতদাসকের অবলুপ্তি আগেকার অবস্থাবলীর আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে।
২. আধুনিক উপনিবেশ স্থাপনের বিষয়ে ওয়েকফিডের যে-সামান্য কিছু আলোচনা রয়েছে, ‘ফিজিওক্র্যাট মিরাবব পেয়ার আগেই তার পুরোপুরি আভাস দিয়েছিলেন এবং তারও অনেক আগে দিয়েছিলেন ইংরেজ অর্থনীতিবিদেরা।
৩. পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক সংগ্রামে এটা পরিণত হল একটি সাময়িক আবশ্যকতায়। কিন্তু উদ্দেশ্য যাই হোক, ফলাফল একই থাকে।
৪. একজন নিগ্রো নিগ্রোই’। বিশেষ বিশেষ অবস্থায় সে হয় গোলাম। একটা ‘মিউল’ হল সুতো কাটার জন্য একটা মেশিন। কেবল বিশেষ বিশেষ অবস্থাইে তা হয় মূলধন। এই অবস্থাবলীর বাইরে সোনা যেমন স্বতঃই টাকা কিংবা চিনি, যেমন চিনির দাম, তার চেয়ে বেশি ভাবে তা কোনমতেই মূলধন নয়। মূলধন হল উৎপাদনের একটি সামাজিক সম্পর্ক। এ হল উৎপাদনের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক। ( pro syf, ‘Lohnarbeit und Kapital. N. Rh. Zeitung, No. 266, April 1, 1849 )।
৫. ই. জি ওয়েকফিঙ : ইংল্যান্ড অ্যাণ্ড আমেরিকা” দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ ৩৩।
৬. ঐ, পৃঃ ১৭।
৭. ঐ, পৃ: ১৮।
৮. ঐ, পৃঃ ৪২, ৪৩, ৪৪।
৯. ঐ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৫।
১০. ঐ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১২৫। উপনিবেশে রূপান্তরণের অন্যতম উপাদান হতে হলে, জমি কেবল ‘পতিত থাকলেই হবে না, তা হতে হবে সাধারণ সম্পত্তি, যাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিবর্তিত করা যায়। ঐ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১২৫।
১১. ঐ, প্রথম খণ্ড, পৃ ২৪৭।
১২. ঐ, পৃঃ ২১, ২২।
১৩. ঐ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১১৬।
১৪. ঐ, প্রথম খণ্ড, পৃ ১৩১।
১৫. ঐ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ।
১৬. মেরিভেল, লেকচার্স অন কলোনাইজেশন অ্যাণ্ড কলোনি, বিতীয় খণ্ড পৃ ২৫৩, ২৫৪। এমনকি শান্ত, অবাধ বাণিজ্যবাদী, হাতুড়ে অর্থতাত্ত্বিক মলিনারি 978607a”Dans les colonies ou l’esclavage a ete aboli sans que le travail force se trouvait remplace par uue quantite equivalente de travail libre, on a vu s’operer la contre-partie du fait qui se realise tous les jours sous nos yeux. On a vu les simples travailleurs exploiter a leur tour les entrepreneurs d’industrie, exiger d’eux des salaires hors de toute proportion avec la part legitime qui leur revenait dans le produit. Les planteurs, ne pouvant obtenir de leurs sucres un prix suffisant pour couvrir la bausse de salaire, ont ete obliges de fournir l’excedant, d’abord sur leurs profits, ensuite sur leurs capitaux memes. Une foule de planteurs ont ete ruines de la sorte, d’autres ont ferme leurs ateliers pour echapper a une ruine imminente… Sans doute, il vaut mieux voir perir des accumulations capitaux que des generations d’hommes [ how generous of Mr. Molinari ! ]: mais ne vaudrait-il pas mieux que ni les autres perissent?(Molinari,’ ‘Etudes Economibues’, pp. 51, 52 ). Fall মলিনারি ! মিঃ মলিনারি ! তা হলে, মোজেস এবং তার পয়গম্বরদের দশটি অনুজ্ঞার মোগান ও চাহিদার নিয়মের কি হবে, যদি ইউরোপে আঁত্রেপ্রেন্যার’ শ্রমিকের ন্যায্য অংশ কাটতে পারে, এবং ওয়েস্ট-ইণ্ডিজ শ্রমিক পারে ‘আঁত্রেপ্রেন্যার শ্রমিকের ন্যায্য অংশ কাটতে? এবং যদি দয়া করে বলেন, কি এই ন্যায্য অংশ, যা আপনার নিজেরই স্বীকৃতি অনুসারে ইউরোপে ধনিক নিত্য দিতে ভুল করে? ওখানে ঐ উপনিবেশ গুলিতে, যেখানে শ্রমিকেরা এত সরল যে তারা ধনিককে শোষণ করে। যোগান ও চাহিদার নিয়মটি, যা অন্যত্র কাজ করে আপনা-আপনি, সেটিকে পুলিশের সহায়তায়, সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য মিঃ মলিনারি একটু কমন বোধ করেন।