————
১. “Nous sommes dans une condition tout-a-faiit nouvelle de la societe…nous tendons a separer toute espece de propriete d’avec toute espece de travail. (Sismondi : “Nouveaux Principes d’Econ. Polit.” t. II, p. 434)
২. শিল্পের অগ্রগতি, যার অনিচ্ছাকৃত উদ্বোধক হল বুর্জোয়া শ্রেণী, তা শ্রমিকদের প্রতিযোগিতাজনিত বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত করল তাদের সন্মিলনজনিত বৈপ্লবিক সহযোগিতা। সুতরাং আধুনিক শিল্পের বিকাশ তার পায়ের তলা থেকে সেই ভিত্তিটিকেই কেটে দিল, যার উপরে দাড়িয়ে বুর্জোয়াশ্রেণী উৎপন্নসম্ভার উৎপাদন ও আত্মীকরণ করে। সুতরাং বুজোয়াশ্রেণী যা উৎপাদন করে, তা হল, সর্বোপরি, তার নিজেরই কবরখননকারী। তার পতন এবং সর্বহারা-শ্রেণীর বিজয় সমান ভাবে অবশ্যম্ভাবী। যে শ্রেণীগুলি আজ বুর্জোয়াশ্রেণীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তাদের মধ্যে একমাত্র সর্বহারা শ্ৰেণীই হল যথার্থ বিপ্লবী শ্রেণী। আধুনিক শিল্পের সম্মুখে বাকি শ্রেণীগুলি ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়ে যায়; সর্বহারা শ্ৰেণীই হল তার বিশেষ এবং আবশ্যিক সৃষ্টি নিম্নতর মধ্য শ্রেণীসমূহ, ক্ষুদ্র শিল্পোৎপাদনকারী, দোকানদার, কারিগর, চাষী—এরা সকলে বুর্জোয়াশ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে অবলুপ্তির গ্রাস থেকে মধ্য-শ্রেণীর ভগ্নাংশ হিসাবে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে। তারা প্রতিক্রিয়াশীল, কেননা তারা ইতিহাসের চাকা পিছন দিকে ঘুরিয়ে দিতে চায়। কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, কমিউনিস্ট পার্টির ইশতাহার। লণ্ডন, ১৮৪৮, পৃঃ ৯, ১১।
৩৩. উপনিবেশ-বিস্তারের নোতুন তত্ত্ব
ত্রয়স্ত্রিংশ অধ্যায়– উপনিবেশ-বিস্তারের নোতুন তত্ত্ব [১]
রাষ্ট্রীয় অর্থতত্ত্ব নীতির দিক থেকে দুটি অত্যন্ত ভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে গুলিয়ে ফেলে, যে-দুটির মধ্যে একটির ভিত্তি হল উৎপাদনকারীদের নিজেদের প্রম, অন্যটির ভিত্তি হল অপরের শ্রমের নিয়োগ। তা ভুলে যায় যে, দ্বিতীয়টি কেবল প্রথমটির প্রত্যক্ষ বিপরীতই নয়, তা একান্ত ভাবে উন্মেষিত হয় প্রথমটির সমাধির উপরে। রাষ্ট্রীয় অর্থতত্ত্বের জন্মভূমি পশ্চিম ইউরোপে আদিম সঞ্চয়নের প্রক্রিয়া মোটা মুটি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এখানে ধনতান্ত্রিক রাজত্ব হয় জাতীয় উৎপাদনের সমগ্র রাজ্যকে জয় করে নিয়েছে, নয়তে, যেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্কসমূহ অপেক্ষাকৃত কম পরিণত, সেখানে তা অন্তত সমাজের সেই স্তরগুলিকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলি যদিও সেকেলে উৎপাদন-পদ্ধতির অন্তর্গত, তা হলেও পাশাপাশি ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় টিকে আছে। প্রস্তুত অবস্থায় উপস্থিত মূলধনের এই জগতের উপরে রাষ্ট্রীয় অর্থতাত্ত্বিক প্রয়োগ করেন প্রাকৃ-ধনতান্ত্রিক জগৎ থেকে উত্তরাধিকার-সূত্রে প্রাপ্ত আইন সম্পর্কিত ও সম্পত্তি-সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণাগুলি; যতই ঘটনাবলী তার ভাবাদর্শের মুখের পরে সোচ্চারে বিরোধিতা করে, ততই তিনি আরো ব্যগ্র আগ্রহে, আরো বাকৃচাতুর্য সহকারে সেই ধ্যান-ধারণাগুলি প্রয়োগ করেন। উপনিবেশগুলিতে পরিস্থিতি অন্য রকম। সেখানে ধনতান্ত্রিক রাজত্ব সর্বত্রই উৎপাদনকারীর সঙ্গে সংঘর্ষে আসে, যে, তার নিজের শ্রমের অবস্থাবলীর মালিক হিসাবে, সেই শ্রম নিয়োগ করে নিজেকে ধনী করবার জন্য, ধনিককে ধনী করবার জন্য নয়। এই দুটি সম্পূর্ণ পরস্পর-বিরুদ্ধে ব্যবস্থার মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এখানে কার্যতঃ আত্মপ্রকাশ করে তাদের দুয়ের মধ্যে এক সংগ্রামে। যেখানে ধনিকের পিছনে থাকে তার স্বদেশের পরাক্রম, সেখানে সে চেষ্টা করে, বলপ্রয়োগের সাহায্যে, উৎপাদনকারীর স্বতন্ত্র শ্রমের উপরে প্রতিষ্ঠিত উৎপাদন ও আত্মীকরণের পদ্ধতিগুলিকে তার পথ থেকে সরিয়ে দিতে। সেই একই স্বার্থ যা মূলধনের তাবেদারকে-রাষ্ট্রীয় অর্থতাত্ত্বিককে স্বদেশে বাধ্য করে ধনতান্ত্রিক উৎপাদন-পদ্ধতিকে তার বিপরীত পদ্ধতির সঙ্গে তগত ভাবে অভিন্ন বলে ঘোষণা করতে, সেই একই স্বার্থ তাকে উপনিবেশগুলিতে বাধ্য করে তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে এবং সরবে ঘোষণ করতে যে, দুটি উৎপাদন-পদ্ধতি পরস্পরের বিরুদ্ধবাদী। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রমাণ করেন কিভাবে শ্রমের সামাজিক উৎপাদন, ক্ষমতা, সহযোগ, শ্রম-বিভাগ, ব্যাপক আয়তনে মেশিনারির ব্যবহার ইত্যাদির বিকাশ শ্রমিকদের সম্পত্তি থেকে উৎপাদন এবং সেই সঙ্গে তাদের উৎপাদন-উপায়সমূহের মূলধনে রূপান্তরণ ব্যতিরেকে অসম্ভব। তথাকথিত জাতীয় সম্পদের স্বার্থে, তিনি জনগণের দারিদ্র্যকে সুনিশ্চিত করার জন্য কৃত্রিম উপায় খুঁজে বেড়ান। এক্ষেত্রে তাঁর আত্মরক্ষামূলক বর্মখানি পচা-গলা কাঠের মত টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ে। ই জি ওয়েকফিডের বিরাট কৃতিত্ব হল উপনিবেশের ব্যাপারে[২] নোতুন কিছু আবিষ্কার করা নয়, কিন্তু মূল-দেশের ধনতান্ত্রিক উৎপাদনের ব্যবস্থার ব্যাপারে উপনিবেশগুলিতে সত্য আবিষ্কার করা। যেহেতু সংরক্ষণ-ব্যবস্থা তার সূচনায়[৩] চেষ্টা করেছিল মূলদেশে কৃত্রিম উপায়ে ধনিক ম্যানুফ্যাকচার’ করতে, সেই হেতু ওয়েকফিডের উপনিবেশবিস্তারের ভক্ত। যা ইংল্যাণ্ড কিছু কালের জন্য পার্লামেন্টের আইনের সাহায্যে চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছিল, সেই তত্ত্বটি চেষ্টা করেছিল উপনিবেশগুলিতে মজুরি-শ্রমিক ‘ম্যানুফ্যাকচার করতে। একে তিনি বলেন, “প্রণালীবদ্ধ উপনিবেশ-বিস্তার।”