৩. যখনি আইন-সভা মনিব এবং মজুরের মধ্যে পার্থক্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তখন সব সময়েই মনিবেরা থাকে তার সদস্য,’ বলেন অ্যাডাম স্মিথ। ‘Lesprit des lois, cest la propriete,’ বলেন লিঙ্গুয়েত।
৪. সফিজিন্স অব ফ্রী ট্রেড, লেখক জনৈক ব্যারিস্টার, লণ্ডন, ১৮, পৃঃ ২০৬। তিনি রুষ্ট ভাবে বলেন, “নিয়োগকর্তার পক্ষে হস্তক্ষেপ করতে আমরা তো যথেষ্ট তৎপর ছিলাম, এখন কি নিযুক্তদের পক্ষে কিছুই করা যায় না?
৫. প্রথম জেম্স-এর ২নং বিধির একটি ধারা থেকে আমরা দেখতে পাই যে কিছু কাপড়-প্রস্তুকারক ‘শান্তিরক্ষী বিচারক হিসাবে নিজেরাই তাদের নিজেদের দোকানগুলিতে মজুরির সরকারি হার নির্ধারণের দায়িত্ব গ্রহণ করল। জার্মানিতে, বিশেষ করে, ত্রিশ বছরের যুদ্ধের পরে, মজুরি দাবিয়ে রাখার বিধি-বিধান সর্বত্র চালু ছিল। যেসব অঞ্চলকে জনশূন্য করা হয়েছে, সেখানে চাকর ও মজুরের অভাব বড় ঝামেলার ব্যাপার। সমস্ত গ্রামবাসীকে নিষেধ করে দেওয়া হয় একক পুরুষ বা একক নারীকে ঘর ভাড়া দিতে; এদের সকলের সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হবে, এবং যদি এরা চাকর হতে অস্বীকার করে তবে কারাগারে নিক্ষেপ করতে হবে এমনকি এরা যদি দৈনিক মজুরিতে চাষীর জন্য বীজ বোনা বা শস্য বেচা-কেনার মত অন্য কাজে নিযুক্তও থাকে, তবু। (ইম্পিরিয়াল প্রিভিলেজেস অ্যাণ্ড স্যংশনস ফর সাইলেসিয়া।) পুরো এক শতাব্দী ধরে ক্ষুদে জার্মান শাসকদের বিধিগুলির মধ্যে ধ্বনিত হত দুর্জন ও দুর্বিনীত ইতর জনতার বিরুদ্ধে হুংকার, যারা তাদের দুর্ভাগ্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করত, আইন-নির্দিষ্ট মজুরিতে অতৃপ্ত থাকত। রাষ্ট্র যে মজুরি তালিকা স্থির করে দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি মজুরি দিতে ব্যক্তিগত ভূস্বামীদের নিষেধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তবু ১০০ বছর পরবর্তী কালের তুলনায় কাজের অবস্থা যুদ্ধের পরে মাঝে মাঝে উন্নততর ছিল। ১৯৬২ সাইলেসিয়ার খেতি-চাকরেরা সপ্তাহে দুদিন মাংস খেত, যেখানে আমাদের এই শতকে এমন সব অঞ্চলও আছে, সেখানে বছরে তিন বার মাত্র মাংস দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। তা ছাড়া, পরবর্তী শতাব্দীর তুলনায় যুদ্ধের পরে মজুরি উচ্চতর ছিল। (জি ট্যোগ)
৬. এই আইনের প্রথম ধারাটিতে বলা হয়েছে, ‘L,anean-tissement de toute espece de corporations du meme etat et profession etant l’une des bases fondamentales de la constitution francaise, il est defendu de les retablir de fait sous quelque pretexte et sous quelque forme que ce soit.’ Article IV. declares, that if “des citoyens attaches aux memes professions, arts et metiers prenaient des deliberations, faisaient entre enx des conventions tendantes a refuser de coucer ou .a n’accorder qu’a un prix determine le secours de leur industrie ou de leurs travaux, les dites deliberations et conventions…seront declarees inconstitutionnelles, attentatoires a la liberte et a la declaration des droits de l’homme, andı’; felony, thereforr, as in the old labour-statutes. (“Revolutions de Paris, Paris,’ 1791, to III p. 523)
৭. Buchez et Roux: Historie Parlementaire, t. x p. 195.
২৯. ধনতান্ত্রিক কৃষি মালিকের উৎপত্তি
উনত্রিংশ অধ্যায়–ধনতান্ত্রিক কৃষি মালিকের উৎপত্তি
আইনের আশ্রয়-চ্যুত একটি সর্বহারা শ্রেণীর বলপূর্বক উৎপত্তি-সাধন, রক্তাক্ত শৃংখলার শাসনে তাদের মজুরি-শ্রমিকে রূপান্তর-সাধন, শ্রমের শোষণ-মাত্রা বৃদ্ধি করে মূলধন-সঞ্চয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক পুলিশ প্রয়োগের মত কলংকজনক ব্যবস্থা অবলম্বনের বিষয় আমরা আলোচনা করেছি। এখন প্রশ্ন থেকে যায় : ধনিকেরা প্রথমে কোথা থেকে এল? কেননা কৃষি-জনসংখ্যার উচ্ছেদ-সাধনের ফলে বিরাট বিরাট ভূম্যধিকারী ছাড়া আর কারো তত উদ্ভব ঘটেনা। অবশ্য, প্রশ্নটা যত দূর পর্যন্ত কৃষি-মালিকের (ফার্মার’-এর) উদ্ভবের সঙ্গে জড়িত, ততটা পর্যন্ত আমরা, বলতে গেলে, সে ব্যাপারে হাত দিতে পারি, কারণ সেটা ছিল এমন একটা মন্থর প্রক্রিয়া, শত শত বছর ধরে ঘটেছিল যার বিকাশ। যেমন ভূমিদাসেরা, তেমন স্বাধীন ছোট মালিকেরাও জমির অধিকার ভোগ করত ভিন্ন ভিন্ন শর্তে এবং, সেই কারণেই, মুক্ত হয়েছেন অত্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন অর্থ নৈতিক অবস্থায়। ইংল্যাণ্ডে কৃষি-মালিকের আদি রূপ হল ‘বেইলিফ’, যে নিজেই ছিল একজন ভূমিদাস। তার অবস্থান ছিল রোমের পুরনো ‘ভিল্লিকাস’-এর মত, তবে তুলনামূলক ভাবে সীমাবদ্ধ কর্মপরিধিতে। চতুর্দশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে তার স্থান গ্রহণ করে এমন একজন কৃষিমালিক, জমিদার যাকে সরবরাহ করে বীজ, পশু ও উপকরণাদি। চাষীর (পেজান্ট’-এর) অবস্থা থেকে তার অবস্থা খুব আলাদা ছিল না। কেবল সে আরো বেশ মজুরি-শ্রম শোষণ করত। অচিরেই সে হয়ে ওঠে একজন মেটায়ের, আধা-কৃষিমালিক। সে আগাম দিত। প্রয়োজনীয় কৃষি-উপকরণাদির একটা অংশ, জমিদার আগাম দিত বাকিটা। তার। পরে চুক্তি অনুযায়ী তারা দুজনে ফসল ভাগাভাগি করে নিত। ইংল্যাণ্ডে এই রূপটি দ্রুত অন্তর্হিত হয়ে যায় এবং তার স্থান গ্রহণ করে নিয়মিত কৃষি-মালিক, সে মজুরি শ্রমিক নিযুক্ত করে নিজেই তার মূলধনকে দিয়ে প্রজনন করায়, এবং উত্ত-উৎপাদনের একটা অংশ জমিদারকে দেয় খাজনা হিসাবে—টাকা বা জিনিসের অঙ্কে। যত দিন পর্যন্ত, পঞ্চদশ শতাব্দীতে, স্বাধীন চাষী এবং খামার-মজুর নিজের জন্য এবং মজুরির জন্য কাজ করে, তাদের নিজস্ব শ্রমের সাহায্যে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করত, ততদিন পর্যন্ত কৃষি-মালিক এবং তার উৎপাদনের ক্ষেত্র দুইই ছিল মোটামুটি অবস্থায়।. পঞ্চাশ শতাব্দীর শেষ তৃতীয়াংশে যার শুরু হল এবং চলল প্রায় গোটা ষোড়শ শতাৰী ধরে ( অবশ্য, তার শেষ দশকটি বাদে ), সেই কৃষি-বিপ্লব এক দিকে যেমন দ্রুতবেগে তাকে ধনী করল, তেমন দ্রুত সাধারণ কৃষি-জনসংখ্যাকে করল দরিদ্র।[১]