.
তারপর আলমিরা আবার বলল,
প্রভু, বিয়ে কী?
এবং তিনি উত্তরে বললেন :
তোমরা একসঙ্গে জন্মেছিলে এবং আবার তোমরা একত্রিত হবে চিরকালের জন্য।
তোমরা একত্রিত হবে যখন মৃত্যুর সাদা পাখা তোমাদের দিনগুলিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেবে, এমনকি তোমরা একত্রিত হবে ঈশ্বরের শব্দহীন স্মৃতির ভেতরে।
কিন্তু তাকে তোমাদের ঐক্যবোধের ভেতরে স্থান দাও এবং স্বর্গের বাতাস তোমাদের মাঝে নৃত্য করুক।
একে অন্যকে ভালোবাসো, কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন তৈরি কোরো না :
তাকে বরং তোমাদের আত্মার তীরভূমির মাঝে গতিশীল সমুদ্র হতে দাও।
একে অন্যের পেয়ালা পূর্ণ করে দাও কিন্তু পান কোরো না এক পেয়ালা থেকে প্রত্যেকেই।
তোমাদের রুটি তোমরা ভাগাভাগি করো একে অন্যের সাথে কিন্তু একই রুটি প্রত্যেকেই খেয়ো না।
একসঙ্গে নাচো, গাও এবং উল্লসিত হও কিন্তু একা হতে দাও তোমাদের প্রত্যেককে।
যেমন বীণার তারগুলি নিঃসঙ্গ হলেও একই সুরের সঙ্গে তারা কেঁপে ওঠে।
তোমরা হৃদয় দাও কিন্তু প্রত্যেকের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নয়, শুধুমাত্র জীবনের হাতই তোমাদের ধারণ করতে পারে,
এবং একত্রে দাঁড়াও যদিও এই একত্রিত হওয়া খুব কাছের নয়; মন্দিরের স্তম্ভের মতো দাঁড়াও আলাদা আলাদাভাবে, কারণ ওক ও সাইপ্রেস গাছ একে অন্যের ছায়ায় কখনও বাড়ে না।
.
এবং বুকের ওপর শিশুকে ধরে রাখা এক নারী বলল,
শিশুদের সম্পর্কে আমাদের বলুন।
এবং তিনি বললেন :
তোমাদের শিশুরা তোমাদের শিশু নয়।
জীবনের জন্য জীবনের প্রবল আকাঙ্ক্ষার পুত্রকন্যা তারা। তোমাদের মাধ্যমে আসে কিন্তু তোমাদের থেকে তারা আসে না, এবং তারা তোমাদের সঙ্গে আছে কিন্তু তারা তোমাদের কেউ নয়।
তোমরা শিশুদের ভালোবাসা দিতে পারো কিন্তু তোমাদের চিন্তাগুলি নয়, কারণ তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাবনা।
তাদের দেহকে তোমরা গৃহবন্ধী করতে পারো কিন্তু আত্মাকে নয়।
কারণ তাদের আত্মা বসবাস করে আগামীকালের গৃহে, সে গৃহ তোমরা পরিদর্শন করতে পারো না, এমনকি স্বপ্নের নয়।
তোমরা তাদের মতো হতে চেষ্টা করতে পারো কিন্তু তাদেরকে তোমাদের মতো করে তুলতে চেষ্টা কোরো না।
কারণ জীবন যেমন পেছনে ধাবিত হয় না তেমনি অতীত কলঙ্ক নিয়েও বসে থাকে না। তোমরা হলে ধনুক, যেখানে থেকে জীবন্ত তীরের মতো তোমাদের সন্তানেরা দূরে চলে যায়।
তীরন্দাজ সীমাহীন পথের ওপর দেখতে পায় লক্ষ্যস্থল এবং সে ক্ষমতা দিয়ে তোমাদেরকে নুইয়ে ফেলে যেন তার তীর দ্রুত দূরে যেতে পারে।
তীরন্দাজের হাতে তোমাদের এই নুয়ে পড়াকে আনন্দিত হতে দাও;
কারণ সে উড়ন্ত তীর ভালোবাসে, সুতরাং যে আরও ভালোবাসে ধনুক, যা কিনা স্থায়ী।
.
তারপর একজন ধনী ব্যক্তি বলল,
আমাদেরকে দানশীলতা সম্পর্কে বলুন।
এবং উত্তরে তিনি বললেন :
তোমরা যখন তোমাদের সহায়-সম্পদ দান করো তখন সামান্যই দান করা হয়।
আর যখন নিজেকে দান করো তখনই প্রকৃতপক্ষে তোমরা দান করে থাকো।
কারণ তোমাদের সহায়-সম্পদ কী? তা কেবলই বস্তু যা তোমরা রক্ষা করো এবং আগামীকাল প্রয়োজন হতে পারে এই ভয়ে পাহারা দাও।
এবং আগামীকাল, আগামীকাল কি বহন করে আনবে অতি সতর্ক কুকুরের কাছে, যে পদচিহ্নহীন বালিতে সমাহিত করছে হাড়গুলি, যেমন সে অনুসরণ করে পবিত্র নগর পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের?
এবং প্রয়োজনের ভয় কি কেবল প্রয়োজনকেই চায়?
তৃষ্ণার কোনো আতঙ্ক নেই যখন তোমার কূপ পরিপূর্ণ
তবে তৃষ্ণা প্রকৃতঅর্থেই নিবারণযোগ্য নয়।
এরা হচ্ছে সেইসব ব্যক্তি যাদের অনেক থাকলেও সামান্যই দান করে এবং তারা দান করে স্বীকৃতির জন্য এবং তাদের গোপন আকাঙ্ক্ষা তাদের দানকে অনুজ্জ্বল করে তোলে।
এবং এরা হচ্ছে সেইসব ব্যক্তি যাদের অল্প আছে এবং পুরোটাই দান করে।
এরা হচ্ছে জীবন ও জীবনের উদারতায় বিশ্বাসী এবং তাদের রত্নভাণ্ডার কখনই শূন্য হয় না।
এরা হচ্ছে সেইসব ব্যক্তি যারা আনন্দের সঙ্গে দান করে
এবং সেই আনন্দ হল তাদের পুরস্কার।
এবং এরা হচ্ছে সেইসব ব্যক্তি যারা দান করে বেদনার সঙ্গে
এবং এই বেদনা হল তাদের ব্যাপ্তিস্ত লাভ।
এরা হচ্ছে সেইসব ব্যক্তি যারা দান করে এবং দানের বেদনা সম্পর্কে জানে না, তারা সন্ধান করে না আনন্দ, এমনকি অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে তারা দানও করে না।
তারা দান করে যেমন ওই উপত্যকায় চিরহরিৎ গুল্মদল মহাশূন্যে প্রশ্বাসের সঙ্গে শুষে নেয় এর সুগন্ধি। হাত বাড়িয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে এরকম সবকিছুই ঈশ্বর বলেন এবং তাদের চোখের পেছন থেকে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে তিনি হাসেন।
চাইলে দান করা ভালো, কিন্তু বোঝাবুঝির মাধ্যমে না-চাইতেই দান করা উত্তম এবং যে মুক্তহস্তে দান করে সে একজনকেই খোঁজে যে দানের চেয়েও অনুভব করবে গ্রহণের বৃহত্তর আনন্দ।
এবং সেখানে যা-কিছু আছে তোমরা কি তা অস্বীকার করবে? কোনো একদিন তোমাদের সবাইকে দান করা হবে,
সুতরাং এখন দান করো, সেই দানের ঋতু তোমাদের হতে পারে তবে তোমাদের উত্তরাধিকারীর নয়।
তোমরা প্রায়ই বলো, ‘আমি দান করব শুধুমাত্র তাকেই যে দানের উপযুক্ত।’
তোমাদের ফলবাগানের গাছেরা অবশ্য তা বলে না, আবার চারণভূমি জুড়ে থাকা পশুর পালও তা বলেনি কোনোদিন।
তারা দান করে যেন তারা বাঁচতে পারে, কারণ নিজেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার অর্থই হল লোপ পাওয়া।
নিশ্চিত সেই ব্যক্তিই তোমাদের সবকিছু এবং নিজের দিনরাত্রিগুলি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যোগ্যতম।
এবং এটা হচ্ছে সে-ই জীবনের সমুদ্র থেকে যার পান করার যোগ্যতা রয়েছে এবং তোমাদের সীমিত স্রোতোধারা থেকে নিজের পেয়ালা পূর্ণ করে নেবার জন্য সে-ই উপযুক্ত।
এবং মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের ভেতরে শুয়ে থাকা সেই মরুভূমির চেয়ে কোন্ মরুভূমি সেখানে বৃহত্তর হবে?
নাকি গ্রহণের বদান্যতা?
এবং তোমরা কারা?
সেই মানুষগুলির উচিত তাদের বক্ষ বিদীর্ণ করে ফেলা এবং অহংকার উন্মোচন যেন তোমরা দেখতে পারো তাদের নির্দিষ্ট মূল্যের পরিমাণ নগ্নতা এবং লজ্জাহীন অহংকার।
প্রথমেই লক্ষ্য করো, তোমরাই দাতা হওয়ার উপযুক্ত এবং প্রত্যেকেই একেকটি দানের যন্ত্র।
কারণ, সত্যের ভেতরে এটা হচ্ছে জীবন যা জীবনকে দান করা হয়- যখন তুমি অর্থাৎ যে নিজেকে দাতা মনে করে সে মূলত দানের সাক্ষী হয়ে থাকে।
এবং তোমরা যারা গ্রহীতা এবং সকল গ্রহীতারা- কৃতজ্ঞতার ভার সম্পর্কে তোমাদের কোনো ধারণা নেই, এজন্য তোমরা একটা জোয়াল চাপিয়ে দাও নিজের ওপরে এবং তার ওপর যে দান করে।
বরং একত্রে জেগে ওঠো দাতার সঙ্গে তার দানের ওপরে, কারণ তোমাদের ঋণ সম্পর্কে অতি মনোযোগী হতে হলে তার উদারতায় অবিশ্বাস করা হয়, যার রয়েছে মায়ের জন্য উন্মুক্ত হৃদয়ের পৃথিবী এবং পিতার জন্য ঈশ্বর।