এবং এইসব বিশ্বাস ও এইসব জ্ঞান নিয়ে আমি বলি : তোমাদের শরীরের ভেতরে তোমরা সংযুক্ত নও, আবদ্ধ নও গৃহের ভেতরে অথবা শস্যক্ষেতে।
যে কারণে তোমরা বসবাস করো পাহাড়ের ওপরে এবং ঘুরে বেড়াও বাতাসের সঙ্গে।
এটা নয় এমন কোনোকিছু যা সূর্যালোকে হামাগুড়ি দিয়ে চলে উষ্ণতার জন্য অথবা নিরাপত্তার প্রয়োজনে অন্ধকারে গর্ত খনন করে, কিন্তু স্বাধীন কোনোকিছু হল একটি আত্মা যা পৃথিবীকে ঢেকে ফেলে এবং ইথারের ভেতরে চলাচল করে।
এসব কথারা যদি অস্পষ্ট হয় তবে তাদের স্পষ্ট করতে চেষ্টা কোরো না।
সবকিছুরই শুরুটা হচ্ছে অস্পষ্ট এবং ঝাপসা কিন্তু এটাই তাদের শেষ নয়।
এবং আমি আনন্দিত যে তোমরা আমাকে শুরু হিসেবে স্মরণ করেছ।
জীবন এবং সমস্ত জীবন্তেরা কুয়াশার গর্ভে রয়েছে, স্বচ্ছতার ভেতরে তারা নেই।
এবং কে না জানে স্বচ্ছতা মানেই হচ্ছে কুয়াশার ক্ষয়ে যাওয়া।
আমার কথা মনে করতে গিয়ে তোমরা এসব স্মরণ করছে:
যা-কিছু তোমাদের ভেতরে সবচেয়ে দুর্বল ও বিভ্রান্ত মনে হয় তা-ই হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে সঠিক নির্ণয়।
এটা কি তোমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নয় যা নির্মাণ ও মজবুত করেছে তোমাদের হাড়ের কাঠামোকে?
এবং এটা নয় একটি স্বপ্ন যা তোমাদের কেউই স্মরণ করতে পারে না স্বপ্ন দেখার সময়, যে স্বপ্ন নির্মাণ করে তোমাদের নগর এবং সেই নগরের ভেতরে সেখানে যা-কিছু আছে তার সবকিছু করে অলংকৃত।
তোমরা যদি সেই শ্বাসপ্রশ্বাসের জোয়ার-ভাটা দেখতে পেতে তাহলে আর কোনো কিছুই। দেখতে না এবং যদি তোমরা স্বপ্নের ফিসফিসানি শুনতে পেতে তাহলে কোনো শব্দই তোমরা শুনতে না আর।
কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না, শুনতেও পাও না এবং এটাই ভালো।
যে অবগুণ্ঠন তোমাদের চোখে মেঘ নামিয়েছে সে অবশ্যই উত্তোলিত হবে সেই হাতে, যে হাত বয়ন করে এই ছদ্মবেশ।
এবং যে মাটি পরিপূর্ণ করে তোমাদের কান, সেই মাটিকেই বিদ্ধ করবে সেই আঙুলগুলো যে আঙুল মাটিকে দলিত-মথিত করেছে।
তোমরা তখনই দেখবে এবং শুনবে।
যদিও তোমরা অনুশোচনা করবে না নিজেকে অন্ধ ভেবে, বধির ভেবেও কখনও করবে না আক্ষেপ।
কারণ সেইদিন তোমরা জানবে সবকিছুর ভেতরের গোপন উদ্দেশ্য এবং তোমরা। অন্ধকারকে আশীর্বাদ করবে যেমন আলোকে করে থাক।
এসব বলার পর কাউকে খুঁজলেন তিনি এবং দেখলেন তার জাহাজের চালক হালের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং স্থিরদৃষ্টিতে দেখছে তার তুলে দেওয়া পালগুলি যা এখন কেবলি দূরত্ব।
এবং তিনি বললেন :
ধৈর্যশীল, অত্যন্ত ধৈর্যশীল আমার জাহাজের চালক, বইছে বাতাস, পালগুলি অস্থির হয়ে উঠেছে এবং রাডারও প্রার্থনা করছে দিকনির্দেশ, যদিও আমার চালক অপেক্ষা করছে কখন আমার ওপর নীরবতা নামবে এবং আমার এইসব নাবিকেরা, যারা বৃহত্তর সমুদ্রের গান শুনেছে তারা আমার কথাও শুনেছে ধৈর্যের সঙ্গে।
এখন তারা আর অপেক্ষা করবে না, আমিও প্রস্তুত।
নদী এসে সমুদ্রে পৌঁছেছে এবং আরও একবার বৃহত্তর মাতা তার সন্তানকে বুকে তুলে নিলেন।
বিদায় হে অর্ফালিজবাসী।
এই দিন শেষ হয়েছে।
রুদ্ধ হয়ে আসছে এই দিন আমাদের ওপর যেমন শাপলাফুল বন্ধ হয়ে যায় তার নিজস্ব আগামীকালের ওপর।
এখানে আমাদেরকে যা দেওয়া হয়েছে তা আমরা রক্ষা করব,
এবং যদি তা যথেষ্ট না হয় তাহলে আমরা আবার একত্রে আসবই এবং দাতার দিকে একত্রে বাড়িয়ে দেব হাত।
ভুলে যেও না আমি তোমাদের কাছে ফিরে আসব।
একটু অপেক্ষার পর আমার আকুল আকাক্ষা অন্য শরীরের জন্য জড়ো করবে ধূলো এবং ফেনা।
একটু অপেক্ষার পর বাতাসের ওপর মুহূর্তের জন্য বিশ্রাম নেব এবং আমাকে ধারণ করবে অন্য এক নারী।
বিদায় তোমাদেরকে এবং আমার যৌবনকে যা আমি তোমাদের সঙ্গে কাটিয়েছি।
এটা ছিল গতকাল যেখানে স্বপ্নের ভেতরে আমাদের দেখা হয়েছিল।
তোমরা আমার একাকীত্বের ভেতরে গান গেয়েছ এবং আমি তোমাদের আকুল আকাঙ্ক্ষা দিয়ে সৌধ নির্মাণ করেছি আকাশে।
কিন্তু এখন আমাদের ঘুম পালিয়েছে, আমাদের স্বপ্ন দেখাও শেষ এবং এই সময় মোটেও কোনো ভোরবেলা নয়।
আমাদের মাথার ওপরে এখন মধ্যদুপুর, আমাদের অর্ধ-জাগরণ পরিণত হয়েছে পরিপূর্ণ দিনে এবং আমাদেরকে অবশ্যই বিচ্ছিন্ন হতে হবে।
স্মৃতির গোধূলিবেলায় যদি আরও একবার আমাদের দেখা হয় তাহলে আমরা আবার কথা বলব পরস্পর এবং তোমরা আমাকে শোনাবে একটি গভীরতর গান।
এবং অন্য স্বপ্নের ভেতরে যদি আমরা পরস্পরের হাত ধরি তাহলে আমরা অন্য এক সৌধ নির্মাণ করব আকাশে।
এইসব বলে তিনি নাবিকদের ইঙ্গিত করলেন এবং তারা সরাসরি এদিয়ে এসে নোঙর তুলল, খুলে দিল দড়িদড়া এবং জাহাজ এগিয়ে চলল পুবদিকে।
এবং জনতার ভেতর থেকে একটি কান্না ভেসে এল যেন তা একটি মাত্র হৃদয়ের কান্না এবং সন্ধ্যার অন্ধকারে তা বেড়ে উঠল এবং ভেরির মতো সমুদ্রের ওপর দিয়ে ধাবিত হল।
শুধুমাত্রা আলমিতরা ছিল নীরব এবং স্থিরদৃষ্টিতে সে তাকিয়ে ছিল ধাবমান জাহাজের দিকে ধোঁয়াশায় তা অদৃশ্য না-হওয়া পর্যন্ত।
এবং জনতা চলে গেলে শুধুমাত্র আলমিতরা দাঁড়িয়ে থাকল সমুদ্রপ্রাচীরের ওপর এবং মনে মনে স্মরণ করতে থাকল তার সেই কথা :
একটু অপেক্ষার পর বাতাসের ওপর মূহূর্তের জন্য বিশ্রাম নেব এবং আমাকে ধারণ করবে অন্য এক নারী।