হ্যাঁ, তোমরা হলে সমুদ্রের মতো এবং সমুদ্রের তলস্পর্শী বিশাল জাহাজ তোমাদের তীরে জোয়ারের প্রতীক্ষায় আছে, যদিও তোমরা সমুদ্রের মতো তোমাদের জোয়ারকে ত্বরান্বিত করতে পারো না।
এবং ঋতুগুলির মতো তোমরাও এক-একটি ঋতু।
যদিও তোমাদের শীতকালে তোমরা বসন্তকে নিজের বলে স্বীকার করো না।
যদিও বসন্ত আবার তোমাদের ভেতরে এসে বসে, হাসে তার তন্দ্রাচ্ছন্নতার ভেতরে এবং সে ব্যথিত হয় না।
ভেবো না আমি এইসব বলেছি এজন্য যে তোমরা একে অন্যকে বলতে পারো, ‘তিনি আমাদের প্রশংসা করলেন এবং আমাদের ভেতরে শুধু ভালোটাই দেখতে পেলেন।’
আমি আমার ভাষায় তোমাদেরকে শুধুই সেইসব বলেছি যা তোমরা জেনেছ চিন্তার ভেতরে।
এবং কথার জ্ঞান কি কেবলি কথাহীন জ্ঞানের ছায়া?
তোমাদের চিন্তা এবং আমার কথারা হল সিলমোহরকৃত স্মৃতি থেকে আসা ঢেউ যা নথিভুক্ত করে আমাদের গতকালকে এবং আমাদের পুরোনো দিনগুলিকে, যখন পৃথিবী জানত না আমাদেরকে, জানত না নিজেকে এবং রাত্রিগুলিকে-দ্বিধায় বিভ্রান্ত ছিল পৃথিবী যখন।
জ্ঞানী ব্যক্তিরা এসেছেন তাদের বিচক্ষণতা তোমাদেরকে দান করতে, আর আমি এসেছি তোমাদের বিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে :
এবং লক্ষ্য করো, আমি তা খুঁজে পেয়েছি যা বিচক্ষণতার চেয়ে অধিকতর মহৎ।
তোমাদের ভেতরে এটা হচ্ছে আত্মার একটি শিখা যা নিজের চেয়েও অধিক পরিমাণে জড়ো হয় চিরকালের জন্য।
যখন তোমরা এই শিখার বিস্তার সম্পর্কে অসতর্ক হও তখনই তোমাদের বিমর্ষ দিনগুলি উচ্চৈস্বরে বিলাপ করতে থাকে।
এটা হচ্ছে দেহের ভেতরে জীবনের জীবন খুঁজে ফেরা যা কবরের ভয়ে ভীত।
এখানে কোনো কবর নেই।
এই পাহাড়গুচ্ছ এবং সমতলভূমিগুলি হচ্ছে দোলনা এবং পাথরফলক-যার ওপর পা রেখে অগভীর স্রোতস্বিনী পার হওয়া যায়।
যখন তোমরা সেই মাঠ অতিক্রম করো যেখানে তোমাদের পূর্বপুরুষকে তোমরা শুইয়ে রেখেছ, এখন ভালো করে তাকাও এবং দেখতে পাবে তোমরা ও তোমাদের শিশুরা সেখানে হাত ধরাধরি করে নেচেই চলেছ।
বস্তুতপক্ষে প্রায় সময়ই তোমরা কোনোকিছু না-জেনেই উস্ফুল্ল হও।
অন্যেরা তোমাদের কাছে এসেছে সোনালি শপথের জন্য যা তৈরি করেছে তোমাদের আস্থা এবং তোমরা দান করেছ সম্পদ, ক্ষমতা এবং গৌরব।
একটি প্রতিজ্ঞার চেয়েও কমকিছু আমি দিয়েছি তোমাদের, যদিও আমার কাছে তোমরা অধিকতর উদার।
তোমরা আমাকে দিয়েছ আমার জীবন-পরবর্তী গভীরতর তৃষ্ণা।
প্রকৃতঅর্থেই এটা নয় বড় উপহার একজন মানুষের কাছে যে তার লক্ষ্যগুলিকে রোদে পুড়ে যাওয়া ওষ্ঠে পরিণত করে এবং সমস্ত জীবন পরিণত করে ঝর্ণায়।
এবং এর ভেতরেই শুয়ে থাকে আমার সম্মান এবং আমার পুরস্কার–
যখনই আমি তৃষ্ণা মেটাতে আসি সেই ঝর্নায় দেখি জীবন্ত জল নিজেই তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। এবং আমি যখন তাকে পান করি তখন সে আমাকেই পান করে।
তোমাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করেছে আমি দাম্ভিক এবং পুরস্কার গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লাজুক।
যদিও মজুরি নেবার বেলায় আমি খুবই গর্বিত কিন্তু উপহার নেবার সময় নয়।
যদিও আমি জাম খেয়েছি পাহাড়ের ভেতরে যখন তোমরা আমাকে তোমাদের ভোজসভায় বসিয়েছিলে এবং ঘুমিয়েছিলাম মন্দিরের চাতালে যখন তোমরা আনন্দের সঙ্গে আমাকে আশ্রয় দিয়েছ।
যদিও এটা ছিল তোমাদের ভালোবাসাপূর্ণ মনোযোগ আমার দিন ও রাত্রিগুলির ওপর, যা আমার মুখে খাবারকে কি মধুর করেনি, বেষ্টন করেনি আমার ঘুমকে দূরদৃষ্টি দিয়ে?
এজন্যই তো তোমাদেরকে সবচেয়ে বেশি আশীর্বাদ করি :
তোমরা এতটা দাও এবং তোমরা যে আদৌ দিতে পারো তা তোমরা জানো না।
প্রকৃতঅর্থে যে দয়া স্থিরদৃষ্টিতে নিজেকেই দেখতে থাকে আয়নার ভেতরে সে পাথরে পরিণত হয়।
এবং একটি ভালো কাজ নিজেকেই ডাকে তার স্পর্শকাতর নামগুলি ধরে যে হয়ে ওঠে একটি অভিশাপের পূর্বপুরুষ।
এবং তোমাদের কেউ কেউ আমাকে উদাসীন বলে ডেকেছ এবং পান করেছ আমার একাকিত্বের সঙ্গে এবং তোমরা বলেছ, ‘তিনি সভা করেন বনভূমির বৃক্ষদের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে নয়।
তিনি একাকী বসে থাকেন পাহাড়চূড়ায় এবং নিচে তাকিয়ে থাকেন আমাদের শহরের ওপরে।‘’
এটা সত্যি যে আমি পাহাড়ে উঠেছি এবং হেঁটেছি দুর্গম এলাকাগুলিতে।
উঁচু না হলে আমি কীভাবে দেখতে পেতাম বিশাল উচ্চতা অথবা কীভাবে পারতাম বিশাল দূরত্ব থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করতে?
কীভাবে একজন কাছের হবে প্রকৃতপক্ষে যদি সে দূরের না হয়?
এবং তোমাদের কেউ কেউ কথা বলে ডাকেনি আমাকে তবে তারা এরকম বলেছে :
‘আগন্তুক, হে আগন্তুক, যেখানে পৌঁছানো যাবে না এরকম উচ্চতার প্রেমিক, কেন তুমি পাহাড়শৃঙ্গের ভেতরে বসবাস করো যেখানে ঈগলেরা তাদের বাসা তৈরি করে?’
‘কেন অন্বেষণ করো তাকে, যাকে অর্জন করা সম্ভব নয়?’
‘কোন বায়বীয় পাখিকে তুমি আকাশে শিকার করতে চাও?’
‘এসো এবং হও আমাদের একজন।‘’
‘নেমে এসো এবং তোমার ক্ষুধা নিবৃত্ত করো আমাদের রুটি দিয়ে এবং তোমার তৃষ্ণা মেটাও আমাদের মদ পান করে।‘’
তাদের আত্মার নিঃসঙ্গতার ভেতরে তারা এইসব বলেছিল, তাদের এই নির্জনতা ছিল গভীরতর এবং তারা জানত যে আমি তাদের আনন্দ ও বেদনার গোপনীয়তাকেই অন্বেষণ করেছি।
এবং আমি শিকার করেছি তোমাদের বৃহত্তর আত্মা যা আকাশে হেঁটে বেড়ায়।
কিন্তু শিকারিও শিকারে পরিণত হয়েছে।
কারণ আমার ধনুক থেকে অসংখ্য তীর বেরিয়ে গেছে আমারই বক্ষস্থলে ঢুকে পড়ার জন্য।
এবং যে উডুক্কু সে-ই আবার পাখাহীন পতঙ্গবিশেষ, কারণ যখন আমার পাখাগুলি সূর্যালোকে বিস্তৃত হয়েছিল তখন তার ছায়া পড়েছিল পৃথিবীর ওপর- যা ছিল একটা কচ্ছপের মতো।
এবং আমি ছিলাম একই সঙ্গে বিশ্বাসী ও সন্দেহকারী,
কারণ প্রায়ই আমি আমার ক্ষতের ভেতরে আঙুল ঢুকিয়েছি যেন তোমাদেরকে আরও বেশি বিশ্বাস করতে পারি, জানতে পারি তোমাদের মহত্তর জ্ঞান সম্পর্কে।