এবং যে আমাদের পায়ের জন্য স্যান্ডেল তৈরি করে তার চেয়ে রঙধনু ছিনিয়ে এনে মানুষের আদলে কাপড়ের ওপর যে শুইয়ে দিতে পারে তার নৈপুণ্য অনেক বেশি।
কিন্তু আমি বলি, ঘুমের ভেতরে নয়, তবে দুপুরের অতিরিক্ত বিনিদ্রতার ভেতরে দৈত্যাকৃতি ওকের সাথেও ততটা মিষ্টি কথা হয় না বাতাসের, যতটা হয় তৃণশাখার সবগুলি ক্ষুদ্রতম অংশের সাথে।
এবং একাকী সে-ই মহৎ যে বাতাসের শব্দকে সংগীতে পরিণত করে এবং তাকে নিজের পছন্দের গানের চেয়েও অধিকতর মধুর করে তোলে।
কাজ হচ্ছে ভালোবাসা যা দৃশ্যমান করে তোলে সবকিছুই।
এবং শুধুমাত্র অপছন্দের কারণে যদি তোমরা ভালোবাসার সঙ্গে কাজ করতে না পারো, তাহলে তোমাদের উচিত কর্ম পরিত্যাগ করা, যা তোমাদের জন্য উত্তম এবং মন্দিরের দরজায় বসে থাকা এবং ভিক্ষা নেওয়া সেইসব মানুষের কাছ থেকে যারা আনন্দের সঙ্গে কাজ করে।
কারণ, তোমরা যদি অযত্নের সঙ্গে রুটি সেঁকে থাকো তাহলে তোমাদের সেঁকে তোলা রুটির স্বাদ তিক্ত, যা খাওয়া যায় কিন্তু তাতে অর্ধেক খিদে মেটে মানুষের।
এবং তোমরা যদি অনিচ্ছাসত্ত্বেও আঙুর চূর্ণবিচূর্ণ করার অনুমতি দাও তাহলে তোমাদের এই অনিচ্ছাকৃত সম্মতি মদে মিশ্রিত বিষকেও ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরিয়ে ফেলে।
এবং তোমরা দেবদূতের মতো গান গাও যদিও তোমরা গান গাইতে ভালোবাসো না এবং ঢেকে ফেল মানুষের কর্ণকুহর দিন ও রাত্রির শব্দাবলি থেকে।
.
তারপর একজন নারী বলল, আমাদেরকে আনন্দ ও বেদনা সম্পর্কে বলুন।
এবং তিনি উত্তরে বললেন :
তোমাদের আনন্দ হচ্ছে তোমাদের বেদনা এবং তা মুখোশহীন।
এবং একই কূপ যা থেকে তোমাদের হাস্যধ্বনি বেরিয়ে আসে,
প্রায় সময়ই তা তোমাদের চোখের জলে পরিপূর্ণ ছিল। “
এবং কীভাবে তা হতে পারে?
গভীরতর বেদনা তোমাদের অস্তিত্বের ভেতরে আকার নিলেও অধিকতর আনন্দ তোমরা ধারণ করতে পারো।
যে পেয়ালা তোমাদের মদ্য ধারণ করে নাই সেই পেয়ালা কি কুমোরের ভাটিখানায় পুড়ে গিয়েছিল?
এবং যে বীণা তোমাদের উচ্ছ্বাসকে শান্ত করতে পারেনি সেই বীণার কাঠ কি ফাঁপা হয়েছিল ছুরির ফলায়?
যখন তোমরা আনন্দিত হও তখন হৃদয়ের গভীরে তাকাও এবং তোমরা কেবল সেটাই খুঁজে পাবে যা তোমাদেরকে দুঃখ দিয়েছে এবং যা এখন তোমাদের আনন্দ দিচ্ছে।
যখন তোমরা বেদনা-ভারাক্রান্ত তখন আবার হৃদয়ের গভীরে তাকাও এবং দেখতে পাবে তোমরা সত্যের ভেতরে কাঁদছ, সে-কারণে ঐ কান্নাই হয়েছে তোমাদের আনন্দ।
তোমাদের কেউ কেউ বলে, ‘আনন্দ বেদনার চেয়ে বড়,’
আবার অন্যেরা বলে, ‘না, বেদনা আনন্দের চেয়ে বড়।’
কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তারা বিভাজনযোগ্য নয়।
তারা একত্রে আসে এবং যখন একজন একাকী এসে তোমাদের সঙ্গে খাবার টেবিলে বসে– মনে রেখে অন্যজন তখন জেগে আছে তোমাদের বিছানায়।
প্রকৃতঅর্থেই তোমাদের আনন্দ ও বেদনার মাঝখানে তোমরা হলে খসে-পড়া আঁশের মতো কর্মচ্যুত।
শুধুমাত্র যখন তোমরা শূন্য অবস্থায় থাকো
তখনই তোমরা নিশ্চল এবং ভারসাম্যপূর্ণ।
যখন ভাণ্ডাররক্ষক তার সোনা ও রুপা ওজন করার জন্য তোমাদেরকে তুলে ধরে তখন তার অবশ্যই প্রয়োজন তোমাদের আনন্দ অথবা বেদনার উত্থান অথবা পতন।
.
তারপর একজন রাজমিস্ত্রি সামনে এগিয়ে এল এবং বলল, আমাদেরকে গৃহ সম্পর্কে বলুন।
এবং তিনি উত্তরে বললেন :
তোমাদের কল্পনা দিয়ে তেপান্তরে একটি কুঞ্জবন তৈরির আগে নগরপ্রাচীরের ভেতরে একটি গৃহ নির্মাণ করো।
কারণ তোমরা ঘরে ফিরেছ তোমাদের গোধূলিবেলায়,
সুতরাং তোমাদের ভেতরে যারা পথ হারিয়েছে তারাই চির দূরবর্তী এবং একাকী।
তোমাদের গৃহ হল তোমাদের বিশাল শরীর।
এই গৃহ বেড়ে ওঠে সূর্যালোকে এবং রাত্রির নীরবতার ভেতরে
ঘুমিয়ে পড়ে এবং এই গৃহ স্বপ্নহীন নয়।
তোমাদের গৃহ কি স্বপ্ন দেখে না? এবং নগর পরিত্যাগ করে কুঞ্জবন অথবা পাহাড়চূড়ায় যাবার স্বপ্ন এখনও দেখছে না?
আমি কি তোমাদের গৃহগুলি আমার হাতের মুঠোয় জড়ো করতে পারব এবং একজন বীজবপনকারীর মতো তাদেরকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেব বনভূমি ও পশুদের চারণভূমিতে।
উপত্যকাগুলি কি তোমাদের পথে পরিণত হয়েছিল এবং সবুজ পথগুলি তোমাদের উপত্যকায়, তাহলে আঙুরক্ষেতের মাধ্যমে তোমরা একে অন্যের সন্ধান করতে পারো এবং ফিরে আসতে পারো তোমাদের পোশাকে মাটির সুগন্ধ নিয়ে।
কিন্তু এসব এখনও পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।
তোমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের আতঙ্কের ভেতরে তোমাদেরকে জড়ো করে খুব কাছাকাছি এবং সেই আতঙ্ক খুব অল্পসময় স্থায়ী হবে। আর এই স্বল্পকালীন স্থায়িত্বের কারণেই নগরপ্রাচীর পৃথক করবে তোমাদের ভিটেমাটি শস্যক্ষেত থেকে।
এবং হে অর্ফালিজবাসী আমাকে বলল, কী আছে তোমাদের এসব গৃহে? এবং দরজাবন্ধ গৃহে কি তোমরা পাহারা দাও?
তোমরা কোন্ শান্তিতে আছ যার পরিপূর্ণ বাসনা তোমাদের ক্ষমতাকে প্রকাশ করে দেয়?
তোমাদের কি স্মৃতিচিহ্ন আছে যার বাঁকা চাহনির নিবু নিবু আলো মনের শিখর ছুঁয়ে প্রসারিত হয়?
সৌন্দর্য কি আছে তোমাদের যা হৃদয়েকে নেতৃত্ব দেয় কাঠ ও পাথরে অলংকৃত বস্তু থেকে পবিত্র পাহাড়ের দিকে যেতে? আমাকে বলল, তোমাদের গৃহে কি এসব আছে?
অথবা তোমরা কি কেবলই স্বস্তিতে আছ এবং স্বস্তির জন্য লালসা হল একটি গোপনীয় জিনিস যা অতিথি হয়ে গৃহে প্রবেশ করে, তারপর সে হয়ে ওঠে গৃহকর্তা এবং তারপর সে হয় প্রভু।