.
তারপর পান্থশালার এক বৃদ্ধ প্রহরী বলল, আমাদেরকে পানাহার সম্পর্কে বলুন।
এবং তিনি বললেন :
তোমরা পারবে পৃথিবীর সুগন্ধের ওপর নির্ভর করে বাঁচতে এবং আলোর সাহায্যে স্থায়ী হতে বাতাসের একটি চারাগাছের মতো।
কিন্তু তোমরা অবশ্যই খাবারের জন্য হত্যা করো এবং তোমাদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মায়ের বুক থেকে অপহরণ করো দুধ-পানরত নবজাত শিশুকে, তারপর তাকে হতে দাও ধমানুষ্ঠানের কর্ম।
এবং তোমাদের ভোজসভার টেবিলকে পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়াতে দাও যার ওপরে সমতল এবং বনভূমির শুদ্ধতা ও নিরীহতা উৎসর্গীত হয়, যা মানুষের ভেতরে অধিক শুদ্ধতর এবং এখনও পর্যন্ত অধিক নিরীহ।
যখন তোমরা একটা পশুকে হত্যা করো তখন তাকে হৃদয় থেকে বলো :
‘একই শক্তি তোমাকে হত্যা করে, আমিও খুন হই এবং আমাকেও খেয়ে ফেলা হবে।’
‘তাই সেই আইন যা তোমাকে আমার হাতে অর্পণ করেছে, আবার আমাকে অর্পণ করবে প্রবল শক্তিমানের হাতে।’
‘তোমার এবং আমার রক্ত মূল্যহীন কিন্তু এর প্রাণরস স্বর্গের বৃক্ষকে আহার জোগায়।’
যখন তোমরা দাঁতে চূর্ণবিচূর্ণ করো একটি আপেলকে তখন তাকে হৃদয় থেকে বলো :
‘তোমার বীজগুলি আমার দেহের ভেতরে বেঁচে থাকবে,
তোমার আগামীকালের মুকুলগুলি ফুটে উঠবে আমার হৃদয়ে,
তোমার সুগন্ধ হবে আমার নিশ্বাস-প্রশ্বাস
এবং আমরা একত্রে সব ঋতুতেই আনন্দোৎসব করব।’
এবং তোমরা শরতে যখন তোমাদের আঙুরক্ষেত থেকে আঙুর জড়ো করো আঙুর পেষণকারী যন্ত্রের জন্য তখন মনে মনে ব’ল : ‘আমিও একটি আঙুরক্ষেত, আমার ফলও জড়ো হবে আঙুর-পেষণকারী যন্ত্রের জন্য এবং নতুন মদের মতো আমি রক্ষিত হব চিরস্থায়ী পাত্রে।’
এবং শীতে যখন তোমরা মদ উত্তোলন করো, তখন তোমাদের হৃদয়ে হতে দাও একটিই গান প্রতিটি পেয়ালার জন্য।
এবং সেই গান হোক স্মরণসংগীত শরতের দিনগুলির জন্য, আঙুরক্ষেতের জন্য এবং আঙুর-পেষণকারী যন্ত্রের জন্য।
.
তারপর একজন কৃষক বলল, আমাদেরকে কাজ সম্পর্কে বলুন।
এবং তিনি উত্তরে বললেন :
তোমরা কাজের মাধ্যমে পৃথিবী ও পৃথিবীর আত্মার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারো।
আর কর্মে নিষ্ক্রিয় হতে হলে ঋতুগুলির কাছে আগন্তুকে পরিণত হও এবং জীবনের শোভাযাত্রায় দ্রুতবেগে হাঁটো, রাজকীয় ক্ষমতা ও গর্বিত আনুগত্যের ভেতরে যে কুচকাওয়াজ চলেছে অনন্তের দিকে।
যখন তোমরা কাজ করো তখন তোমরা একটি বাঁশিতে পরিণত হও, যার হৃদয়ের ভেতর দিয়ে সময়ের ফিসফিসানি সংগীত হয়ে ওঠে।
যখন প্রত্যেকেই ঐক্যের ভেতরে একত্রে গান গায় তখন তোমাদের কোনো গান হবে একটি নলখাগড়া, বধির এবং নীরব।
সবসময়ই তোমাদেরকে বলা হয়েছিল, কাজ হচ্ছে একটি অভিশাপ এবং শ্রম হচ্ছে দুর্ভাগ্য।
কিন্তু আমি তোমাদের বলি, যখন তোমরা কাজ করো তখন পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী স্বপ্নের একটি অংশকে তোমরা পরিপূর্ণ করে তোলে এবং এই দায়িত্ব তোমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে যখন এই স্বপ্নের জন্ম হয়েছিল।
কাজের ভেতর তোমাদের ডুবে থাকার অর্থ হল তোমরা সেই জীবনের ভেতরে আছ যে জীবন সত্য ভালোবাসে।
এবং কাজের মাধ্যমে জীবনকে ভালোবাসলে তা হবে জীবনের অন্তরাত্মার গোপনীয়তার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা।
কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের বেদনার ভেতরে জন্মের যন্ত্রণাকে আহ্বান জানাও এবং মাংসের সহায়তায় একটি অভিশাপ লেখা হয় তোমাদের ললাটের ওপর, তাহলে আমি বলছি এ সবই মূল্যহীন কিন্তু সেখানে যা লেখা হয়েছে তোমাদের ললাটের ঘাম তার সবই মুছে ফেলে দেবে।
তোমাদেরকে আরও বলা হয়েছিল যে, জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং তোমাদের ক্লান্তির ভেতরে তোমরা সেই প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করো যা ক্লান্তি উচ্চারণ করেছিল।
এবং আমি বলি জীবন সত্যিই অন্ধকারাচ্ছন্ন তবু তাকে রক্ষা করো যখন সেখানে তীব্র আকাক্ষা রয়েছে।
এবং সমস্ত তীব্র আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে অন্ধ,
তবু তাকে রক্ষা করো যখন জ্ঞান সেখানে রয়েছে।
এবং সমস্ত জ্ঞানই ব্যর্থ, তবু তাকে রক্ষা
করো যখন সেখানে রয়েছে কাজ।
এবং সমস্ত কাজই শূন্যতায় পরিণত হয়
তবু তাকে রক্ষা করো যখন সেখানে ভালোবাসা রয়েছে।
এবং যখন তোমরা ভালোবাসার সঙ্গে কাজ করো।
তখন তোমরা বন্ধন তৈরি করে নিজেদের সঙ্গে,
একে অন্যের সঙ্গে এবং প্রত্যেকে ঈশ্বরের সঙ্গে।
এবং কী সেই কাজ যা ভালোবাসার সঙ্গে করা যায়?
তোমাদের হৃদয় থেকে তুলে নেওয়া
সুতো দিয়ে পোশাক বোনাই হল সেই কাজ,
যেন সেই পোশাকটা তোমাদের অত্যন্ত
প্রিয় মানুষ পরেছিল।
অনুরাগ দিয়ে একটি গৃহ নির্মাণ করাই হল সেই কাজ
যেখানে বসবাস করেছিল তোমাদের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ।
স্নেহপরায়ণতার সঙ্গে বীজ বপন করা এবং
আনন্দের সঙ্গে ফসল পাকানো হল সেই কাজ, যেন তোমাদের অতিশয় প্রিয় মানুষ ফলটি খেয়েছিল।
তোমাদের নিজস্ব উদ্যমের শ্বাস-প্রশ্বাসের ভঙ্গিতে সবকিছুর মূল্য দেওয়া হল সেই কাজ এবং যেসব আশীর্বাদপ্রাপ্ত মৃতরা তোমাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং তোমাদের লক্ষ্য করছে তাদের সম্পর্কে জানা।
প্রায়ই আমি শুনেছি তোমরা বলো, যেন ঘুমের মধ্যে বলছ, ‘যে ভূমি চাষ করে তার চেয়ে অধিক মহৎ যে মর্মরপাথরের ওপর কাজ করে এবং পাথরে আপন আত্মার আকার খুঁজে পায়।’