বুঝতে পারছি না, এ বিদ্যায় আমি সফল হতে পারছি না কেন? বলল ছোট তরুণী। আমি চেষ্টা করি সবকিছু আত্মস্থ করতে, কিন্তু মন সায় দেয় না। মনে হয় এসব ধোকা-প্রতারণা। বিবেক এসবের প্রতি আমার মনে ঘৃণার উদ্রেক করে।
হু, বুঝেছি। পেশায় উন্নতি করতে ব্যর্থ হলে তোমাকে এসব পুরুষের হাতে খেলনা হয়েই থাকতে হবে। বলল বড় তরুণী। এবারই প্রথম তোমাকে বাইরে পাঠানো হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি, তুমি চালে ব্যর্থ হচ্ছে। তোমার দ্বারা ক্রুশের কোন কাজ হবে না। শরীরকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে অল্পতেই বুড়িয়ে যাবে তুমি। শরীরের আকর্ষণ শেষ হয়ে গেলে এসব পুরুষ তোমাকে পুরনো কাপড়ের মতো ছুঁড়ে ফেলে দিবে। মুসলমান কাপুরুষগুলোর মনোরঞ্জনের উপাদান হওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়, আমাদের লক্ষ্য হলো ওদের চিন্তা ও দেমাগের নিয়ন্ত্রণ লাভ করা। এ চার যোদ্ধাকে তুমি দেখেছো, কিভাবে কথার মায়াজালে ওদের দুর্বলতার ফাঁক দিয়ে আমি কাবু করে ফেলেছি। এসব কৌশল আমাকে ইহুদী ও খৃস্টান প্রশিক্ষকরা শিখিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই আবেগপ্রবণ। আবেগের কাছে প্রত্যেক মানুষই আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়; যদি না আবেগকে সে কঠিন সাধনার দ্বারা বাগে আনতে পারো। আমরা মুসলমানদের মধ্যে মানবিক আবেগ ও কাম-রিপুকে উস্কে দিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে ফেলি। কাম-রিপু মানুষকে ধ্বংসের অতলে নিক্ষেপ করে। তোমার কি সেই রাতের কথা মনে নেই? সাইফুদ্দীন এক জেনারেলের সাথে বলছিল, আমাকে আইয়ূবীর সাথে সন্ধিচুক্তির ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে দাও। আমি কিভাবে তাকে সন্ধিচুক্তি থেকে বিরত রেখেছি।
ঈসিয়াত দুর্গে পৌঁছে এই কৌশলগুলো আমাকে শিখিয়ে দিও। বলল ছোট তরুণী। আমার মনের মধ্যে এসব কাজের প্রতি বিতৃষ্ণা বাড়ছেই বাড়ছে। আমি ওইসব মুসলমান উমারাদের খেলনার পুতুলে পরিণত হয়েছি অথচ তুমি নিজেকে ওদের আগ্রাসী ক্ষুধা থেকে মুক্ত রাখতে পারছো। মাঝে মধ্যে আমার ইচ্ছে হয় কোথাও পালিয়ে যাই, কিন্তু পালানোর কোন জায়গাই দেখি না।
সবকিছুই শিখতে পারবে। ধীরে ধীরে সবই রপ্ত হয়ে যাবে। চিন্তা করো না। আমার সাথে তোমাকে পাঠানো হয়েছে প্রশিক্ষণের জন্যই। কর্মক্ষেত্রে কতোটা তুমি পারদর্শিতা অর্জন করেছে তা দেখার জন্যে। এই মিশনে তোমার দুর্বলতাগুলো আমি দেখেছি, এসব দূর হয়ে যাবে।
নাসের ও সাথীরা গুনগুনিয়ে একটি কোরাস গেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। বালু, পাথুরে যমীন, শুষ্ক মরু সবই তাদের কাছে মনে হচ্ছিল সবুজ ঘাসের গালিচা। তরুণী দুজন তাদের ঘোড়া এদের সামনে নিয়ে এলো যাতে এরা পথ ছেড়ে অন্যদিকে চলে না যায়।
এদেরকে তো ভিন্ন পথে রওয়ানা করিয়ে দেয়া দরকার ছিল। ঈসিয়াত দুর্গে নিয়ে গিয়ে এদের কি করবে, জিজ্ঞেস করল ছোট তরুণী।
আমার উস্তাদ শেখ সিনাদের জন্যে এদের চেয়ে উৎকৃষ্ট উপঢৌকন আর হতে পারে না। বলল বড় তরুণী।
এরা আইয়ূবীর ঝটিকা বাহিনীর সদস্য; সেই সাথে পরীক্ষিত দক্ষ গোয়েন্দা। আমাকে বিশেষভাবে বলা হয়েছিল আইয়ূবীর কোন একজন গোয়েন্দাকে যদি বাগে আনতে পার তাহলে বুঝবো; তুমি অন্তত এক হাজার সৈনিককে বেকার করে দিয়েছে। আইয়ূবী তার গোয়েন্দা ও ঝটিকা বাহিনীকে এমন উঁচু মানের ট্রেনিং দিয়ে রেখেছে যে, প্রত্যেক গোয়েন্দা সদস্য একজন সাধারণ সৈনিকের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। শারিরীকভাবে প্রত্যেক গোয়েন্দা সাধারণ সৈনিকের চেয়েও অনেক বেশী কষ্ট সহিষ্ণু, শারিরীক শক্তির অধিকারী এবং স্বীয় কর্তব্য পালন ও লক্ষ্য অর্জনে মরিয়া হয়ে থাকে। এরা রাতের আঁধারে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে, মরুভূমিতে পথ হারিয়ে, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, ক্লান্তি অবসাদের যে দুর্ভোগ সহ্য করেছে, আমাদের সৈন্যদের মধ্যে এ সহিষ্ণুতা নেই। এদেরকে আমি শেখ সিনানের হাতে সোপর্দ করে দেবো। এদের যোগ্যতা, দক্ষতা ও সাহস যদি আমাদের যোদ্ধারাও আত্মস্থ করতে পারে তবে খুবই উপকার হবে। তোমার মনে হয় জানা নেই, আইয়ূবীকে হত্যা করার জন্যে এ পর্যন্ত কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিন্তু প্রত্যেকটি ব্যর্থ হয়েছে। এরা আইয়ূবীর বিশ্বস্ত কর্মী। এদের পক্ষে এনে আইয়ূবী পর্যন্ত পৌঁছা সহজ হবে।
সাইফুদ্দীন গোমশতগীন ও অন্যান্যদের হাত করতে যে কৌশল নেয়া হয়েছে, তা কি সালাউদ্দীন আইয়ূবীর বেলায় প্রয়োগ করা যায় না? বলল ছোট তরুণী।
না। ওদের বেলায় যে কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে তা দিয়ে আইয়ূবীকে ঘায়েল করা সম্ভব নয়। বলল বড় তরুণী। যে ব্যক্তি কোন পবিত্র আদর্শের প্রতি নিজের মন-মস্তিষ্ক, দেহ-আত্মা সম্পূর্ণ নিবেদন করে, যার মধ্যে জাগতিক ও দৈহিক ভোগ-লিপ্সার চর্চা নেই, তাকে আমাদের মতো সুন্দরী আর দিনারের পাহাড় দিয়ে আদর্শচ্যুত করা যায় না। আইয়ূবী এক পত্নীতে বিশ্বাসী। নূর উদ্দীন জঙ্গীর মধ্যেও এই প্রবণতা ছিল। লোকটি এতো বিশাল ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পরও মৃত্যু পর্যন্ত এক পত্নীতে জীবন কাটিয়েছে। বহু চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন সুন্দরী তরুণীই আইয়ূবীকে বাগে আনতে পারেনি। ফিলিস্তিনে খৃস্টান নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার এখন একমাত্র পন্থাই হচ্ছে আইয়ূবীকে হত্যা করা।