এ কৌশলে কোনই কাজ হবে না। বলল অগাস্টার। কারণ আইয়ূবী কখনও অপ্রস্তুত নির্বিকার হয়ে বসে থাকে না। তার গোয়েন্দারা সব সময়ই জাগ্রত, তৎপর। প্রতিপক্ষের যে কোন আক্রমণের সংবাদ দুদিন আগেই তার কাছে পৌঁছে যায়। আমাদের যে সব উপদেষ্টা মুসলমানদের মধ্যে কাজ করছে, তাদের নির্দেশ দিয়ে দিন, তারা যেন গোয়েন্দা তৎপরতা আরো জোরদার করে। গোয়েন্দা কাজে আরো লোকবল বাড়াতে বলুন। তাদেরকে বলে দিন, তাদের গোটা এলাকায় গোয়েন্দা ছড়িয়ে দিতে। সন্দেহজনক কোন লোককে পেলেই পাকড়াও করতে। যখন তারা যুদ্ধের জন্য বের হয় তখন বহু দূর পর্যন্ত যাতে গোয়েন্দারা সক্রিয় থাকে, যে কোন লোককে ঘোরাফেরা করতে দেখতে পেলেই যেন আটক করে। ভ্রমণকারী, তীর্থযাত্রী, বণিক পথে যাদেরই পাবে সবাইকে তল্লাশী করবে। যাতে তিনবাহিনীর সৈন্যরা আইয়ূবীর শিবিরে আক্রমণের আগে তার কাছে কোন সংবাদ পৌঁছাতে না পারে।
আমরা আরো সংবাদ পেয়েছি, সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী অধিকৃত অঞ্চল থেকে তার বাহিনীতে সৈন্য ভর্তি করছে। বলল আরেক অফিসার।
অন্য এক অফিসার বলল, আইয়ূবীর এসব কার্যক্রম রুখা দরকার।
সেনা ভর্তি রোধ করতে হলে আমাদের পরিকল্পনা মতো দ্রুত আক্রমণ করা দরকার। এ ছাড়া ভিন্ন একটা কৌশলও হতে পারে। মিশরে আমরা সেটি প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছিলাম। যেসব এলাকায় আইয়ূবী সেনা ভর্তি করছে, ওসব অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে নৈতিক ও চারিত্রিক দুষ্কর্ম ছড়িয়ে দিতে হবে আইয়ূবীর সেনাবাহিনীর বেশ ধরে। তাতে আইয়ূবীর বাহিনীর প্রতি মানুষ ক্ষেপে উঠবে।
অবশ্য মিশরে আমাদের কার্যক্রম পুরোপুরি সফল হয়নি, আইয়ূবী সেখানে তার অবস্থান সংহত করেছে, আর আমরা বহু অভিজ্ঞ গোয়েন্দাকর্মী ও প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা মেয়েকে হারিয়েছি। বেশ কিছু সংখ্যক মেয়ে আইয়ূবীর গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে এবং নিহত হয়েছে। তদুপরি আমাদের একথা স্মরণ রাখতে হবে যে; আজ হোক, কাল হোক আমাদের প্রত্যেকের একদিন না একদিন মরতে হবে। তাই সেই মৃত্যু যীশু খ্রিস্টের জন্যে হোক সেটাই আমাদের জন্যে উত্তম। খ্রিস্টের মান রক্ষা ও ধর্মের খাতিরে নিজেদের জীবন যেমন কুরবানী করতে হবে অনুরূপ প্রয়োজনে আমাদের সন্তানদেরও উৎসর্গ করতে হবে।
সালাহ উদ্দীন আইয়ূবীর বড় শক্তি সাধারণ নেতা। সে তার বাহিনী ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় ভাবধারা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। মুসলিম জাতীয়তা ও ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তার সৈন্যরা জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে। তাই তার সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে জীবন বাজী রেখে আমাদের সৈন্যদের উপর গেরিলা হামলা করে, তাদের এই ধর্মীয় চেতনা ও জাতীয়তাবোধে চির ধরাতে হবে।
সব সময়ই আমরা বিদ্রোহ ও নারী লিপ্সার টোপ ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি। বলল অগাস্টাস। মুসলমানদের মধ্যে যারা বিত্তশালী তারা সব সময়ই ক্ষমতা লিলু, এ সুযোগ আমরা সব সময়ই ব্যবহার করেছি। তেমন নতুন কিছু পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই আমাদের। তবে একটা ব্যাপার আমাদের বুঝতে হবে যে, আইয়ূবীর বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে ধিক্কার ও ঘৃণা জন্মাতে পারলে আমাদের তৎপরতা বেশী কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কাজটা হলো, আইয়ূবীর নামে জঘন্য অপবাদ রটাতে হবে। কাজটা আমাদের করলে হবে না, করাতে হবে মুসলমানদের দ্বারা। প্রতিপক্ষও শত্রুদের বিরুদ্ধে অপবাদ প্রচারে নিজেদের মর্যাদা আত্মসম্মান নিয়ে ভাবলে হবে না, নিয়ম হলো, তোমার শত্রু তোমার তুলনায় যে মানের উঁচু ও শক্তিশালী তার বিরুদ্ধে তত শক্তিশালী ও জোড়ালো অপবাদ প্রচার করতে হবে। যাতে তোমাদের সৃষ্ট অভিযোগ মুখে মুখে আলোচিত হতে থাকে। বিশ্বাসযোগ্য ভাষায়, অত্যন্ত ঘৃণ্য বিষয় মানুষের কাছে প্রকাশ করতে হবে। মনে রাখবে, যখন একটা বিষয় হাজারো মুখে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও কানাঘুষা হবে তখন শয়ের মধ্যে পাঁচজন হলেও বিশ্বাস করতে শুরু করবে।
এ মুহূর্তে সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা খুব জরুরী। বলল এক কর্মকর্তা। আমরা ধারণার চেয়ে অনেক বেশী অবকাশ পেয়েছি। অগাস্টাসের ভূমিকা খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, মুসলমান নেতৃবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সংঘাত মহামান্য অগাস্টাসের কৌশলের ফল। এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে এতদিনে আইয়ূবী ফিলিস্তিন দখল করে নিতো। অথচ এখন ওর মুসলমান ভাইয়েরাই ওর যাত্রা পথে প্রবল বাধা সৃষ্টি করছে।
একটা ব্যাপার আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলছে, বললো রিমান্ড। এসব মুসলিম যোদ্ধা আইয়ূবীর বাহিনীতে মোকাবেলা করতে সাহস পায়। আর আইয়ূবীর বাহিনীর সেই সৈনিকেরাই যখন তার প্রতিপক্ষে যুদ্ধে নেমেছে, তখন এদের বীরত্ব গেল কোথায়? এতো বিপুল সংখ্যক সৈন্য রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে এলো!
এটাতো বিশ্বাস ও আকীদার ব্যাপার। মুসলমানরা যাকে বলে ঈমান। বলল রেনাল্ট। যে সেনাপতি বা সৈনিক ঈমান খুইয়ে বসে সে আর যুদ্ধ করার সাহস পায় না। তখন তার কাছে জীবন আর সম্পদই হয়ে উঠে মুখ্য। এজন্যই তো আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রমের মধ্যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছি। যে কোনভাবে মুসলিম সৈনিক ও কর্মকর্তাদেরকে মদ-নারী, ভোগ-বিলাসিতায় আসক্ত করে ফেলো, তাহলে দেখবে অযথা তোমাদের ঘোড়া আর জীবনহানি ঘটবে না, বিনা যুদ্ধে বিজয় তোমাদের পা চুমু দেবে।