মালিক আস্-সালেহ সালাহ উদ্দীন আইয়ূবীকে সন্ধি প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
সন্ধি প্রস্তাব! গর্জে উঠল সাইফুদ্দীন।
জ্বী হ্যাঁ! সন্ধি প্রস্তাব। বলল কমান্ডার। কিন্তু আমি জানতে পেরেছি তিনি সন্ধি প্রস্তাবের নামে সালাহ উদ্দীন আইয়ূবীকে ধোকা দেয়ার জন্যই সন্ধিপ্রস্তাব পাঠিয়েছেন। খ্রিস্টান মিত্ররা তার সৈন্যদের রসদ সামগ্রীর ঘাটতি পূরণ করে দিচ্ছে এবং তাকে উস্কানি দিচ্ছে মৌসুল ও হিরনের সৈন্যদেরকে একত্রিত করে সকল সৈন্যের কমান্ড নিজের হাতে নিয়ে পুনরায় আইয়ূবীর উপর ঝটিকা আক্রমণ করতে। তারা আরো বলছে, সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী যদি বিশ্রাম নিতে পারে আর বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন সৈন্য ভর্তি করে তার লোকবলের ঘাটতি পূরণ করে নিতে পারে তবে তাকে পরাজিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। গোয়েন্দারা খবর দিয়েছে, সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী তুর্কমানের উর্বর এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী তাঁবু ফেলেছে এবং খুব দ্রুত আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মালিকের সেনাপতিও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন আইয়ূবীর উপর শীঘ্রই আক্রমণ করা উচিত।
আমি আলেপ্পো বাহিনীর এক খ্রিস্টান উপদেষ্টার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি পরিচয় আড়াল করে বললাম, আমরা এখনই হামলা করার উপযুক্ত নই। তখন সে বলল, এটা হবে তোমাদের বড় ভুল। সালাহ উদ্দীন আইয়ূবীর উপর আক্রমণের অর্থ এই নয় যে, তাকে পরাজিত করতে হবে বরং দ্রুত আক্রমণের লক্ষ্য হলো সে যেন প্রস্তুতির অবকাশ না পায়। তাকে তুকমান অঞ্চলে যুদ্ধে ব্যস্ত রাখতে হবে এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে হবে। তাকে তার। কৌশলেই মোকাবেলা করতে হবে। মুখোমুখি সংঘর্ষে না গিয়ে গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে। গুপ্ত হামলা করতে হবে এবং সরে আসতে হবে। মোটকথা, তুর্কমানের সবুজ শ্যামল উর্বর অঞ্চল থেকে তাকে সরিয়ে দিতে হবে যাতে তার বাহিনী পানি ও ঘাস সমৃদ্ধ অঞ্চল ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং তার বাহিনী ও জীবজন্তুগুলো পানাহারের সঙ্কটে নিপতিত হয়।
খুবই সুন্দর পরিকল্পনা। বলল সাইফুদ্দীন। এ ধরনের যুদ্ধ আমার সিংহ সেনাপতি মুজাফফরই করতে পারে। সে বহুদিন সালাহ উদ্দীন আইয়ূবীর বাহিনীতে ছিল। আমি চেষ্টা করব তিন বাহিনীর কমান্ড আমার হাতে নিয়ে নিতে। আমি মরু শিয়ালের মতো ধোঁকা দিয়ে দিয়ে আইয়ূবীকে মরুভূমিতে শুকিয়ে মারব।
ফৌজী সাইফুদ্দীনের তরবারী কোষমুক্ত করে সেটিতে হাত বুলিয়ে দেখছিল। সে তন্ময় হয়ে দেখছিল তরবারীটি উল্টে পাল্টে।
মালিকের সাথে সাক্ষাৎ করতে আমি বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেনা কর্মকর্তা ও অফিসারগণ তাকে এভাবে ঘিরে রেখেছে যে, তার সাথে মোলাকাতের সুযোগ আর হলো না। এসব বিষয় আমি তার কমান্ডার ও সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জেনেছি।
তোমাকে আবার আলেপ্পো যেতে হবে। বলল সাইফুদ্দীন।
মালিক আস্-সালেহকে এ পয়গাম দিতে হবে যে, তুমি আইয়ূবীর কাছে সন্ধি প্রস্তাব পাঠিয়ে আমাদের ধোঁকা দিয়েছ এবং তার সাহস বাড়িয়ে দিয়েছ। সে আমাদের কাউকেই ক্ষমা করবে না। তুমি এখনও অনেক ছোট্ট। তুমি হয়তো হতাশ হয়ে গেছো, অথবা যুদ্ধ বিমুখ তোমার সেনা কর্মকর্তারা তোমাকে যুদ্ধে নিরুৎসাহিত করছে।
সাইফুদ্দীন পয়গাম সম্পর্কে দীর্ঘ দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলল, ভোরের অন্ধকারেই তোমাকে চলে যেতে হবে। সকালে যাতে তোমাকে এ গ্রামের কেউ দেখতে না পায়।
কমান্ডার রাতের কিছু অংশ বিশ্রাম করে রাতের অন্ধকার থাকতেই গ্রাম ছেড়ে আলেপ্পোর উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেল।
ফৌজী যা কিছু শুনল সবই এসে হারেস ও দাউদকে জানাল। ফৌজীর এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হারেস ও তার পিতা শুয়ে পড়লে দাউদ কি জন্য যেন বাইরে বের হল। পা টিপে টিপে দাউদের অনুসরণ করল ফৌজী। দাউদ সোজা আস্তাবলে তার ঘোড়ার কাছে গিয়ে থামল। ফৌজীও নীরবে অতি সন্তর্পণে দাউদের কাছে চলে এল।
এর চেয়েও আমাকে আরো বড় কোন কাজ দাও দাউদ ভাই! বলল ফৌজী। আমি তোমার জন্য জীবন দিয়ে দেব।
আমার জন্যে নয়, জাতির জন্যে এবং ইসলামের জন্যে জীবন দাও। যে কাজ তুমি করছ সেটি অনেক বড় কাজ ফৌজী! আমি যে কাজ করছি সেটি জীবন দেয়া নেয়ার কাজ। আর সেটিই করছ তোমরা। আমি তোমাদেরকে বিপদে ফেলে দিয়েছি ফৌজী! বলল দাউদ।
বিপদের আবার কি?
তুমি এতোটা বুঝবে না। সাইফুদ্দীন বাদশা। ঝুপড়িতে থাকলেও সে বাদশাই বটে। তুমি তার চালাকি বুঝবে না ফৌজী!
হু। বাদশা কি আমাকে গিলে ফেলবে ভাবছো! আমি চালাক না হতে পারি, তোমরা যতোটা বোকা মনে কর অতটা বোকা আমি নই। আচ্ছা তোমার বাড়ি কোথায়?
আমার কোন ঠিকানা নেই। আমি গোয়েন্দা, গুপ্ত সেনা। যেখানেই দুশমনদের হাতে মারা যাবো সেটিই হবে আমার ঠিকানা, সেটিই হবে আমার বাসস্থান। শহীদানের রক্ত যে যমীনের উপর পড়ে সেটি কোন না কোন একদিন ইসলামী সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত হবেই হবে। এ যমীনকে কুফরী আগ্রাসন থেকে মুক্ত করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। আমাদের মা-বোনেরা আমাদের লালন-পালন করে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করেছে। তারা বুকে পাথর বেঁধে সেই আশা ছেড়েই আমাদের বিদায় করেছে যে, আমরা পুনর্বার তাদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাবো।
নিজের বাড়ি ফেরার, নিজের মা-বোনকে দেখার আগ্রহতো তোমার মধ্যে অবশ্যই আছে। আবেগমাখা কণ্ঠে বলল ফৌজী।