ইহুদি জাদুকর ভূ-গর্ভস্থ কুঠরীর নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়ে বলল, আমি আমার অপরাধের কথা সালার আবদুল আযীযের সামনে স্বীকার করব। আমার অনেক কথা আছে, যা আমি শুধু তার সাথেই বলতে চাই।’
***
পরদিন সকালে জাদুকরকে আবদুল আযীযের সামনে উপস্থিত করা হল।
‘আমি একজন ইহুদি।’ জাদুকর বলল। আমি তাই করেছি, যা একজন ইহুদির করা উচিত। এজেলুনার অপরাধ কোন ইহুদি ক্ষমা করতে পারে না। সেই আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের বিদ্রোহকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। ধোঁকা দিয়ে সে আমাদের সকল নেতাকে হত্যা করিয়েছে। এই নারীকে হত্যা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। কিন্তু কেউই তাকে হত্যা করতে প্রস্তুত হচ্ছিল না। তাছাড়া কেউ প্রস্তুত হলেও তাকে হত্যা করা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। আমরা ভাল করেই জানি, এজেন জীবনের ভয়ে কিছু দিনের জন্য বাইরে বের হবে না। তাই তাকে হত্যা করার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমার একমাত্র সম্বল হল, জাদু। এজেলুনাকে হত্যা করার জন্য এমন একজন নারী বা পুরুষের প্রয়োজন ছিল, যে কোন রকম বাধা ছাড়াই এজেলুনা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।’
জাদুকর আবদুল আযীযের নিকট পূর্ণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করল। কীভাবে তারা নাদিয়াকে পেল। নাদিয়ার মনিবের সাথে তাদের সম্পর্ক কি? তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? এবং নাদিয়ার উপর কোন ধরনের জাদু প্রয়োগ করা হচ্ছিল? জাদুকর বলল, নাদিয়ার উপর ‘হেপনাটিজম’ জাতীয় জাদু প্রয়োগ করা হচ্ছিল। তাদের এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত আরও কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির নাম সে উল্লেখ করল।
‘আমার শান্তি কি?’ জাদুকর জানতে চাইল।
‘মৃত্যু।’ আবদুল আযীয বললেন।
‘যদি আমি এমন কিছু তথ্য আপনাকে দেই, যা আপনাকে অনাগত বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে তাহলে কি আপনি আমাকে আমার জীবন ফিরিয়ে দেবেন? জাদুকর এ কথা জিজ্ঞেস করে সামান্য সময়ের জন্য নীরব থেকে আবার বলল, ‘আমি ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারি। আমি মানুষের ভাগ্যলিপি পড়তে পারি।
‘তোমার ভবিষ্যদ্বাণী যদি আমার এবং ইসলামী সালতানাতের কোন উপকারে আসে তাহলেই তোমার বেঁচে থাকা সম্ভব হতে পারে। আবদুল আযীয বললেন।
‘আমি ওয়াদা করছি।’ জাদুকর বলল। যদি আমার জীবন ভিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে আমি এমন কোন কাজ করব না, যা আপনার সালতানাত বা কোন মুসলমানের সামান্য ক্ষতির কারণ হয়।’
‘তাহলে তুমি বলতে পার।’ আবদুল আযীয বললেন।
‘সম্মানিত সালার।’ জাদুকর বলল। প্রথম কথা হল, কোন ইহুদিকে বিশ্বাস করবেন না। কোন মুসলমানের উচিত নয়, কোন ইহুদিকে বিশ্বাস করা। আন্দালুসিয়ার ইহুদিরা মুসলমানদেরকে যে সযোগিতা করেছে, তা তাদের নিজেদের ফায়দার জন্য। নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য করেছে। দ্বিতীয় কথা হল, যে মাটিতে আপনারা আপনাদের রাজত্ব কায়েম করতে এসেছেন, সেই মাটি এক রহস্যময় মাটি। এই মাটির ইতিহাস রক্ত দ্বারা লেখা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও রক্ত দ্বারাই লেখা হবে।’
‘এটা কোন নতুন কথা নয়।’ আবদুল আযীয বললেন। যে দেশে হামলা করা হয় সে দেশের সেনাবাহিনী লড়াই করে, ফলে হানাদার ও রক্ষিবাহিনীর মাঝে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। উভয় পক্ষেই জান-মালের সমূহ ক্ষতি হয়। উভয় বাহিনীর লোকজনই মারা পড়ে।
‘আমি এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কথা বলছি না।’ জাদুকর বলল। কোন দেশ শত্রু বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হলে সে দেশের জনগণ জীবনবাজি রেখে লড়াই করবে–এটাই স্বাভাবিক। হানাদার ও দেশপ্রেমিক–উভয় পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকে। আমি সেই খুন-খারাবির কথা বলছি, যা এই রাজ্যের বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে ঘটিয়ে আসছে।
এই রাজ্যের মাটি খুবই রহস্যময়। মনে হয়, আন্দালুসিয়ার উপর প্রেতাত্মাদের কুদৃষ্টি পড়েছে। নিকট অতীতের ঘটনা। রডারিক গোথ বাদশাহ অর্টিজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাকে হত্যা করে এবং সিংহাসন দখল করে নেয়। রডারিক হিরাক্লিয়াসের দুর্গ খুলেছিল। ধর্মযাজকগণ তাকে সেই দুর্গ খুলতে নিষেধ করেছিল, কিন্তু রডারিক এতটাই আত্মঅহমিকায় ভোগছিল যে, সে নিজেকে মহাপরাক্রমশালী ও অপরাজেয় মনে করত। সে মনে করত, পৃথিবীর সকল রহস্য সে উদঘাটন করতে পারবে। সে কারও কোন কথা না শুনে দুর্গ খুলে ফেলে। ফলে সে এমনভাবে পরাজিত হয় যে, তার বিশাল বড় বাহিনী ছোট্ট একটি বাহিনীর কাছে চরমভাবে ধ্বংস হয়ে যায় এবং সে নিজে এমনভাবে লাপাত্তা হয়ে যায় যে, তার কোন হদিসই পাওয়া যায়নি…।
রডারিকের মৃত্যু আজও এক রহস্য হয়ে আছে। রডারিকের ন্যায় অনেক গুম ও হত্যার ঘটনা এই মাটিতে ঘটেছে, যার রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। এই মাটিতে একের পর এক বাদশাহকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি, নিজের বিবেক-বুদ্ধির উপর কখনও কোন নারীর মতকে প্রাধান্য দেবেন না। আপনি যাকে বিবাহ করেছেন, সে খুবই সুন্দরী। আমি তাকে একবারমাত্র দেখেছি। তার চোখে জাদু আছে। সে যার প্রতি দৃষ্টি দেয়, সেই তার গোলাম হয়ে যায়। কিন্তু নেশা ছড়ানো তার সেই চোখ দুটিতে রক্তের দাগ রয়েছে। সে রডারিকের বিবি হবার পর রডারিক মারা গেছে। বিদ্রোহীদের অনেক বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ নেতাই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল, তারা সকলেই মারা গেছে। এখন সে আপনার…’