- বইয়ের নামঃ আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে
- লেখকের নামঃ এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
- প্রকাশনাঃ ফুলদানী প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে
১. ৯৭ হিজরী মোতাবেক
আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে / মূল: এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ / অনুবাদ: মুহাম্মদ শফিউল আলম
অর্পণ:
প্রিয়তমা স্ত্রীকে,
আমার মতো অভাজন যাকে কিছুই দিতে পারেনি। তার এক পাশে আবদুল্লাহ মারযুক সাদী আর অন্য পাশে আবদুল্লাহ মাসরুর মাহদী। যাদেরকে নিয়ে আমার দিনের সাধনা, আর রাতের আরাধনা। যাদের সুখের জন্য আমি বিনিদ্র রজনী যাপন করি, যাদের কল্যাণের জন্য আমি নিরলস দিবস অতিবাহিত করি।
—অনুবাদক
.
প্রথম সংস্করণের প্রসঙ্গ–কথা
৭১১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুলাই কয়েক হাজার অকুতোভয় মর্দে মুজাহিদ আন্দালুসিয়ার (স্পেন) সমুদ্রসৈকতে অবতরণ করার পর নিজেদের রণতরী জ্বালিয়ে দেন, যেন ফিরে যাওয়ার কোন উপায় না থাকে। রণতরী জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁরা বীরত্ব ও সাহসিকতার এমন এক কীর্তিগাথা রচনা করেন, যা ইসলামী ইতিহাসে অত্যন্ত বিস্ময়কর ও ঈমান-জাগানিয়া ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত। এই অমর বীরত্বগাথা নিয়ে রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে।
এমনিতেই আমাদের সমাজে ইতিহাস অধ্যয়নের আগ্রহ খুবই কম, তার উপর ইসলামী ইতিহাস অধ্যয়নের আগ্রহ নেই বললেই চলে। এ কারণেই বোধ হয়, বাংলা ভাষায় ইসলামী ইতিহাস নিয়ে মৌলিক কোন রচনা তেমন একটা দেখা যায় না। বাংলা ভাষায় যেসব ইসলামী ইতিহাস আমরা দেখতে পাই, তার বেশির ভাগই বিদেশী ভাষার অনুবাদ।
ইসলামী ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে উর্দু সাহিত্যকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ বলেই মনে হয়। তাই আমরা দেখতে পাই, উর্দু ভাষায় মৌলিক ইসলামী সাহিত্যের পাশাপাশি ইসলামী ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসের বিশাল সংগ্রহ গড়ে উঠেছে এবং সেসব ঐতিহাসিক উপন্যাস বাংলা ভাষায় অনুদিত হয়ে বাংলা ভাষার ভাণ্ডারকে সুসমৃদ্ধ করছে।
উর্দু ভাষায় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করে যে সকল উপন্যাসিক আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদ্ভূত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ অন্যতম। তিনি তাঁর অনবদ্য রচনাশৈলী ও শিকড়সন্ধানী লেখনীর মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যে বিশেষ অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তাঁর লেখালেখির বিষয়-বস্তু ইতিহাসের মতো একটি রস-কষহীন বিষয় হলেও তিনি তাঁর নান্দনিক উপস্থাপনা ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার মাধ্যমে এমন একটি সাবলিল আবহ সৃষ্টি করেন যে, পাঠকগোষ্ঠী মোহমুগ্ধ হয়ে পড়েন।
এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস রচনা করলেও ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠতা কোথাও লজ্জিত হতে দেন না। এখানেই অন্যান্য উপন্যাসিকের সঙ্গে তাঁর স্বাতন্ত্র সুনির্দিষ্ট। তাঁর যুগে এবং পরবর্তী সময়ে অনেকেই ইসলামী ইতিহাসকে আশ্রয় করে উপন্যাস রচনা করেছেন; কিন্তু নির্মম সত্য হলো, তাদের অনেকেই ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠতা লঙ্ঘন করেছেন। তারা কাল্পনিক পাত্র-পাত্রির মাধ্যমে প্রেম-প্রীতির আষাঢ়ে গল্প ফেঁদেছেন এবং খালেদ বিন ওয়ালিদ, মুহাম্মদ বিন কাসেম ও তারিক বিন যিয়াদের মতো ইতিহাসখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্বদেরকে সিনেমার নায়ক-নায়িকার সমপর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। পক্ষান্তরে এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরেছেন। পাঠক তাঁর লেখায় তথ্যসূত্রসহ পরিপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাস দেখতে পাবেন। সেই সঙ্গে উপন্যাসের যাবতীয় উপকরণ, রোমাঞ্চ ও এ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করবেন।
অনুবাদটি সুখপাঠ্য করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোন ত্রুটি করা হয়নি, তারপরও ভুল-ক্রটি থেকে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই স্বহৃদয় পাঠকের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
—মুহাম্মদ শফিউল আলম
মোবাইল : ০১৯১ ৬০০৯১৫৯
.
অখণ্ড সংস্করণের প্রসঙ্গ–কথা
‘আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে’ বিশাল কলেবরে লেখা ঐতিহাসিক এক উপন্যাস। পাঠকের সুবিধার কথা চিন্তা করে তিন খণ্ডে উপন্যাসটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী নাদিয়াতুল কুরআন প্রকাশনী থেকে ‘আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। প্রথম খণ্ড প্রকাশের পর পাঠকদের প্রচণ্ড চাহিদা এবং দ্বিতীয় খণ্ডের জন্য বারবার তাগাদার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় খণ্ডের কাজ সমাপ্ত করে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে উক্ত প্রকাশনীর পক্ষ থেকে অবশিষ্ট খণ্ডগুলো প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করা হয়। ফলে তৃতীয় খণ্ডের কাজ একেবারে থমকে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ না হওয়ার বেদনায় আর অন্য কাজের ব্যস্ততায় ‘আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে’র তৃতীয় খণ্ড সমাপ্ত করা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। কালেভদ্রে তৃতীয় খণ্ড নিয়ে বসলেও কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। যদিও অধিকাংশ কাজ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছিল। এভাবে দিন-সপ্তাহ-মাস-বছর গড়িয়ে যেতে থাকে।
অবশেষে ২০১৫ সালে ডিসেম্বর মাসে প্রকাশনা জগতে ‘পয়গাম প্রকাশন’ আত্মপ্রকাশ করলে কিছু গ্রন্থ প্রস্তুত করার দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত হয়। এই সুযোগে ‘আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতের তৃতীয় খণ্ডের কাজ সমাপ্ত করার তাগাদা অনুভব করি এবং যথা সময়ে তৃতীয় খণ্ডের কাজ সমাপ্ত হয়। কিন্তু পয়গাম প্রকাশন’ খণ্ড খণ্ড রূপে উপন্যাসটি প্রকাশ করতে চায় না, বরং সম্পূর্ণ উপন্যাসটি এক সঙ্গে এক মলাটের ভিতরে প্রকাশ করতে চায়। এতে করে প্রকাশকের যেমন ব্যয়-সংকোচন হবে, তেমনি পাঠককেও অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হবে না। তার উপর এক সঙ্গে সম্পূর্ণ উপন্যাস পড়ার আনন্দ পাঠকের জন্য ‘উপরি পাওনা’ থাকবে।